শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

হাফ সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এবং সাকিব

প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : ৯ বছর ১ মাস ২৪ দিন আগে যে ভেন্যুতে টুয়েন্টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়েছে বাংলাদেশ দলের অভিষেক, কাকতালীয় হলেও সত্য, সেই শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামেই আজ সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ! মাশরাফি, সাকিব ছিলেন সেই অভিষেক টি-২০তে, আছেন তারা ৫০তম টি-২০ ম্যাচেও। বাংলাদেশের মতো খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে জিম্বাবুয়ের। অভিষেক টি-২০ ম্যাচের সেই প্রতিপক্ষই বাংলাদেশের টি-২০’র হাফ সেঞ্চুরি ম্যাচে প্রতিপক্ষ। আছেন ৯ বছর ৫৪ দিন আগে টি-২০’র অভিষেক ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলে থাকা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, এলটন চিগুম্বুরা, চামু চিবাবা এবং শন উইলিয়ামস। টি-২০’র অভিষেক ম্যাচে বাংলাদেশ দলের কোচ ডেভ হোয়াটমোর বাংলাদেশের হাফ সেঞ্চুরির ম্যাচে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের কোচ!
টুয়েন্টি-২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৩ দিন পর হয়েছে অভিষেক ভারতের। অথচ, সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ম্যাচের সংখ্যায় বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত (৫৭ ম্যাচ)। টি-২০তে বাংলাদেশের মাত্র ৩ মাস আগে অভিষেক হওয়া পাকিস্তান এখন সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে, অপেক্ষা তাদের মাত্র ৩ ম্যাচ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অভিষেকের আগে মাত্র ৩ ম্যাচ খেলা অস্ট্রেলিয়ার টি-২০তে ম্যাচ সংখ্যা ইতোমধ্যে ৭৮, বাংলাদেশের অভিষেকের আগে ২ ম্যাচ খেলা নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ সংখ্যা সেখানে ৮৭, দ.আফ্রিকার ৮২,ইংল্যান্ডের ৭৯, বাংলাদেশের পাঁচ মাস ১৩ দিন আগে টি-২০তে অভিষেক হওয়া শ্রীলংকার ম্যাচ সংখ্যা সেখানে ৭৩। অন্যদের তুলনায় তুলনামুলক কম টি-২০ ম্যাচ খেলার কথাই বলছে এই পরিসংখ্যান।
টি-২০তে হাজারী ক্লাবে এ পর্যন্ত থাকা ২১ ব্যাটসম্যানের মধ্যে নেই বাংলাদেশের কেউ। অথচ, সেখানে জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা পর্যন্ত হাজার রানের ক্লাবে পেয়েছেন সদস্যপদ। টি-২০তে এখন পর্যন্ত ইনিংসে তিন অংকের নাগাল পায়নি বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান। টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে ৪১ টি ২শ’ স্কোরের ইনিংসের একটিতেও নাম লেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে ৪৯ ম্যাচে ১৫টি জয়ের বিপরীতে ৩৩টিতে হার, একাধিক ম্যাচের সিরিজে একটি মাত্র সিরিজ জয়ও এই ভার্সনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের দূর্বলতাকেও করেছে প্রকাশ। তারপরও বাংলাদেশের টি-২০’র হাফ সেঞ্চুরি ম্যাচে একটি মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়ে সাকিব। বাংলাদেশের টি-২০ অভিষেক ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করা বাঁ হতি অল রাউন্ডার বাংলাদেশের হাফ সেঞ্চুরির দিনে একটি উইকেট পেলেই দেশের প্রথম বোলার হিসেবে সংক্ষিপ্ত ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পূর্ণ করবেন প্রথম হাফ সেঞ্চুরি! শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে গত বুধবার আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৪শ’ উইকেটে বিরল ডাবলে (৪শ’ উইকেট এবং ৮ হাজার রান) ভারত লিজেন্ডারি অল রাউন্ডার কপিল দেব, দ.আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস, পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদি, শ্রীলংকা সনাৎ জয়াসুরিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডের অলরাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নসের পাশে নাম লেখানো এই বাঁ হাতি স্পিনার আজ ১ উইকেট পেলেই টি-২০তে উইকেট শিকারের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করবেন। তা সম্ভব হলে টি-২০তে উইকেট শিকারে দ্রæততম হাফ সেঞ্চুরিয়ানদের মধ্যে শ্রীলংকার অজন্থা মেন্ডিজ (২৬ ম্যাচ), দ.আফ্রিকার ডেল স্টেইন (৩৫ ম্যাচ), পাকিস্তানের ওমর গুল (৩৬ ম্যাচ), সাইদ আজমল (৩৭ ম্যাচ), ইংল্যান্ডের গ্রায়েম সোয়ান (৩৯ ম্যাচ) এর পর রেকর্ডসে ঢুকে যাবেন সাকিব।
বাংলাদেশের সাকিব, আর রেকর্ড যেভাবে একটার সঙ্গে অন্যটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে, তাতে বাংলাদেশের হাফ সেঞ্চুরির ম্যাচে সাকিবের রেকর্ডের দিকেও যে থাকতে হচ্ছে তাকিয়ে।
মাইলস্টোনের ম্যাচটি জিতলে ৯ বছর ১ মাস ২৪ দিন পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ইতিহাসও যে রচনা করতে পারবে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টানা ২টি সিরিজে সমতার পর ট্রফিতেই যে চোখ এখন বাংলাদেশ দলের। সিরিজকে ৩-১ করতে পারলে সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে ৫ম সিরিজ জয়ের উৎসব ও যে করতে পারবে বাংলাদেশ।
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বড় ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষার মূল্য দিয়েও তাই জয় দিয়ে মাইলস্টোন ম্যাচ উদযাপন করতে চান টীম ম্যানেজার খালেদ মেহমুদ সুজনÑ‘আমরা হারতে পারি, আবার জিততেও পারি। তবে আমরা মাঠে সব সময় জয়ের জন্যেই খেলি। তাই এক হারে দলের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে, এরকম কোনো কিছু হয়ে যায়নি। গত বুধবার আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারিনি। জিম্বাবুয়ে আমাদের থেকে বেটার ক্রিকেট খেলেছে। তারপরও দলের ওপর আমাদের বিশ্বাস আছে, কালকের (শুক্রবার) ম্যাচে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’
কোচ হাতুরুসিংহের মতো দলে পরীক্ষা-নীরিক্ষার পক্ষে সুজনওÑ ‘বাংলাদেশ দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে সেকেন্ড স্ট্রেন্থ বোলারদের তৈরি করতে হবে। একটা না একটা সময়ে তাদের অভিষেক হতই। সর্বশেষ বিশ্বকাপের মাঝপথে আল-আমিনের পরিবর্তে শফিউল গিয়েছিল এবং বিজয়ের পরিবর্তে ইমরুল দলে যোগ দিয়েছিল। তারা কিন্তু ওই সময় পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। এমনকি সেভাবে অনুশীলন ও করেনি তারা। তাই আমরা চাচ্ছি অন্ততঃ ১৯-২০ জনের একটা পুল তৈরি করতে।’
সামনে অপেক্ষা করছে বড় দু’টি আসর এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ। তার জন্য ব্যাক আপ ক্রিকেটারদের তৈরি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন টীম ম্যানেজারÑ ‘টি-২০ বিশ্বকাপে ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচ ও এশিয়া কাপে পাঁচটি ম্যাচ খেলতে হবে। টি-২০ বিশ্বকাপে মূল পর্বের আগেও কিন্তু তিনটি প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে হবে। কোনো না কোনো কারণে কেউ যদি ইনজুরিতে পড়ে তাহলে তার পরিবর্তে কাউকে তো প্রস্তুত করতে হবে। তাছাড়া যারা আছেন, তারা সবাই কিন্তু জাতীয় দলে খেলার মত যোগ্য ক্রিকেটার।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন