গত বৃহস্পতিবার স্পেনের বার্সেলোনা শহরের ব্যস্ততম ও জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা লাস রাম্বলাসে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। এক চালক লোকজনের ভিড়ের উপর ভ্যানগাড়ি উঠিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১৩ জন নিহত হয়। ভিড়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়ে হামলাকারি পায়ে হেঁটে চলে যায়। পুলিশ এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা ও বড় সংঘর্ষ হিসেবে উল্লেখ করেছে। পুলিশ দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে। আইএস এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। আইএস-এর ওয়েব সাইট আমাক থেকে দাবী করা হয়েছে, জিহাদী সৈনিকরা এ হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। ২০১৫ সালে প্যারিসে নাইট ক্লাবে হামলা ও নিস শহরে গাড়ি চালিয়ে এবং গত ডিসেম্বরে বার্লিনে ক্রিস্টমাস মার্কেটে একই কায়দায় হামলা করে ১২ জনকে চাপা দিয়ে হত্যার পর স্পেনে এ ঘটনা ঘটল। প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে আইএস তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা আমরা জানাই।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমা দেশগুলো হামলা এবং মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নির্মম আচরণ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে। তারা সন্ত্রাস নির্মূলের নামে নারী-শিশুসহ নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং উদ্বাস্তুতে পরিণত করছে। এক সময়ের শান্তির দেশ সিরিয়া এখন ধ্বংসস্তুপ। অসংখ্য সিরিয় নাগরিক নিহত এবং লাখ লাখ ঘর ছাড়া হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাগর পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অগনিত মানুষের সলিল সমাধি পর্যন্ত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধ চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো তথাকথিত যে শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশন চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে শান্তির পরিবর্তে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। অভিযোগ রয়েছে, আইএস নামক যে সংগঠনটি গঠিত হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রেরই সৃষ্টি। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি খেলাফত সৃষ্টির নামে গঠিত এ সংগঠনের বিরুদ্ধেই যুক্তরাষ্ট্র এখন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের নির্মূলের নামে একের পর এক হামলা চালিয়ে ইরাক, সিরিয়াসহ অন্যান্য দেশের হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা এবং ভূমিহীন করার সুপরিকল্পিত অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আইএস নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্রের এ চানক্য নীতি অনেকটা ‘সাপ হয়ে দংশন করা ওঝা হয়ে ঝাড়া’র মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, সে যে ফ্র্যাংকেনস্টাইনের দানব সৃষ্টি করেছে, তাই আজ তার এবং মিত্র রাষ্ট্রগুলোর মাথাব্যাথ্যার কারণ হয়ে উঠেছে। আইএস-এর থাবা এখন বিশ্বের প্রায় সবর্ত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। যার করুণ ও নির্মম শিকার হচ্ছে, সাধারণ মানুষ। প্যারিস, বার্লিন এবং সর্বশেষ স্পেনের নিরীহ মানুষ এ নির্মমতার শিকার হলো। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো নিজ স্বার্থে এর আগে আল কায়দা সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ আছে। আল কায়দার নামে বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে এবং তা দমনের নামে আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের জন্য যে আল কায়দাকে দায়ী করা হয়, তা যুক্তরাষ্ট্র নিজে করেছে বলে এখন অনেক তথ্য-প্রমাণ মিলছে।
যে নামেই হোক ইসলামের নামে যা করা হচ্ছে, তা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা অনুমোদন করে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, যে একজন মানুষ হত্যা করল, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করল। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, সন্ত্রাসীরা কোরআনের এই বাণী আমলে নিচ্ছে না। তারা পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর অপকর্মের জবাব দিতে গিয়ে উল্টো নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। ইসলামের নামে এটা কোনো জবাব হতে পারে না। এতে ইসলামের বদনাম ছাড়া কিছু হচ্ছে না। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর হাতে ইসলামের আরও বদনাম করার সুযোগ করে দিচ্ছে। ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখতে তাদের অপপ্রচার ও অপকর্মকে সমর্থন যোগাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে যেমন বিরূপ ও বিদ্বেষপূর্ণ ধারণা জন্মাচ্ছে, তেমনি হেট ক্রাইম ও দমন-পীড়ন বৃদ্ধি করছে। সন্ত্রাসীদের অপকর্ম ইসলামের কোনো উপকার করছে না। বরং ইসলামের ইমেজ বৃদ্ধির যে প্রচেষ্টা চলছে, তা ব্যাহত করছে। যারা নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে, তারা মানুষের শত্রæ, মানবতার শত্রæ। তারা এই হত্যাকাÐের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিশ্বের যেখানেই সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাÐ ঘটছে, এর পরপরই বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা হামলা, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমতাবস্থায়, বিশ্বের সকল মুসলমানকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। বিশ্ববাসীরও এটা মনে রাখতে হবে, এই সন্ত্রাসীরা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে না। কাজেই তাদের অপরাধের দায় মুসলমানদের ওপর চাপানো সুবিবেচনার পরিচায়ক হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন