ঈদুল আযহা সমাগত। আর ক’দিন পরেই নাড়ির টানে গ্রামের পথে ছুটবে মানুষ। সারাদেশের মহাসড়কের বেহাল দশা। বন্যার কারনে অনেক স্থানেই তলিয়ে গেছে সড়ক-মহাসড়ক। ট্রেনের অবস্থাও ভাল না। ৪০ ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার বিকাল থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ট্রেন যোগাযোগ পুন:স্থাপিত হয়েছে। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রামের রেললাইন পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক আগেই। বিকল্প হিসাবে অনেকেই তাই নৌপথে বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবছেন। বর্ষায় দেশের নদনদীগুলো এখন পানিতে ভরপুর। নৌকা, ট্রলার বা স্পীডবোর্ডে তাই কাঙ্খিত স্থানে যাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন লঞ্চ ও ট্রলার ব্যবসায়ীরা।
সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসাবেই দেশের সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরা ও ভাঙাচোরা। ঈদের আগে এসব সড়ক মেরামতের কথা থাকলেও প্রতিবারের মতো এবারও তা সঠিকভাবে হচ্ছে না। এমতবস্থায় সড়কপথে ভ্রমণ মানেই সীমাহীন ভোগান্তি। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য মহাসড়ক এখন চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই সড়কপথে রওনা করার সাহসই করতে পারছেন না। বিকল্প হিসাবে রেলপথ থাকলেও রেলের অবস্থাও নাজুক। ৪০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল বিকাল থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রেল যোগাযোগ শুরু হয়েছে। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়কপথের বেহাল অবস্থার কারণে এবার ট্রেনের দিকে মানুষ বেশি ঝুঁকেছে। কয়েক গুণ বেশি চাহিদার কারণে ট্রেনের টিকিট হয়ে গেছে সোনার হরিণ। আগের দিন বিকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট মিলছে না। বিকল্প হিসাবে তাই অনেকেই ভাবছেন নৌপথের কথা। সদরঘাট লঞ্চ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা কবির হোসেন জানান, সদরঘাট থেকে লঞ্চযোগে শুধুমাত্র দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়া যায় এমন ধারণা আছে অনেকেরই। কিন্তু যারা বোঝেন তারা এখান থেকে অনায়াসে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, এমনকি চট্টগ্রামও যেতে পারেন। এছাড়া সদরঘাট থেকে শরিয়তপুর পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল করে। বর্ষায় শরিয়তপুর থেকে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুরসহ আশপাশের জেলায় ট্রলার চলাচল করে। সদরঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জেরও লঞ্চ আছে। কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম শাহীন বলেন, সদরঘাট থেকে অনেকেই মুন্সীগঞ্জে লঞ্চে যায়। মানিকগঞ্জের আরিচা ফেরীঘাটের এক লঞ্চ ব্যবসায়ী জানান, পাটুরিয়া থেকে ফেরী ও লঞ্চযোগে মানুষ রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে বাসযোগে ফরিদপুর, যশোর, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলায় যাওয়া যায়। এর বাইরে আরিচা ঘাট থেকে ছোট-বড় লঞ্চ যায় পাবনার কাজীরহাট পর্যন্ত। এবার এই রুটে অনেক বেশি যাত্রী হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ, নাটোর এমনকি রাজশাহীর যাত্রীরাও আরিচা হয়ে নদীপথে যেতে পারবেন। তিনি জানান, এই নদীপথেই দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে অধিকাংশ কোরবানির পশু আসে। ওই ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে ওই অঞ্চলের যাত্রীরা আসন্ন ঈদে নদীপথেই বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
অন্যদিকে, গাজীপুরের কালিগঞ্জ থেকে নদীপথে নরসিংদী, আশুগঞ্জ, ব্রা²ণবাড়ীয়া ও ভৈরবে যাওয়া যায়। জানা গেছে, গাজীপুরের কালিগঞ্জ ঘাট থেকে বড় বড় ট্রলার ছাড়ে। সেগুলোতে অনেক যাত্রী হয়। বর্ষায় আরও নতুন নতুন ট্রলার যুক্ত হয়েছে জানিয়ে কালিগঞ্জের বাসিন্দা লিটন রোজারিও বলেন, কেউ ইচ্ছা করলে এখান থেকে কিশোরগঞ্জ এমনকি নেত্রকোণা পর্যন্ত যেতে পারবে। আবার নেত্রকোণা গেলে সেখান থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়া একেবারে সহজ।
অপরদিকে, ঢাকার কাছেই নারায়ণগঞ্জ থেকে নদীপথে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়া যায়। রুপগঞ্জ থানার তারাবো ঘাট থেকে ট্রলারযোগে গাজীপুরের কালিগঞ্জ যাওয়া যায়। সেখান থেকে সিলেট পর্যন্ত যাওয়ার পথ আছে জানিয়ে রুপগঞ্জের ব্যবসায়ী বাদল বলেন, ঈদে যানজট ও ভোগান্তি এড়াতে অনেকেই ট্রলার ভাড়া করে নদীপথে যায়। এবারও অনেক বেশি মানুষ নদীপথে তারাবো থেকে চাঁদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালীর দিকেও যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন