আল মাহমুদ
ছোঁয়া
কোথায় যেন যাওয়ার কথা যাইনি আমি আর
আলো ছিল পথের উপর, এখন অন্ধকার।
পথ গিয়েছে রথের মেলায় আমার উপায় কি?
পথের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছি ওগো রাজার ঝি।
গুল্ম গন্ধি তোমার শাড়ি বনবিটপির ঘ্রাণ
আকুল করে ব্যাকুল করে লুটালো সম্মান
গান বেঁধেছি এক তারাতে প্রাণের পাখি গায়
ওলো সোনার ডানার পালক আমার বুকে আয়।
লাগছে ছোঁয়া শীতলতার গীতলতার রেশ
যেন তোমার ভাঙা খোপার হাওয়ায় কাঁপা কেশ
কোথাও তবে পৌঁছতে হবে কোথায় তোমার ঘর
শঙ্খ নদীর বাঁক ঘুরেছি সামনে বিরাট চর।
না না এতো চর নয়গো তোমার নরম বুক
নরম বুকে মুখ ঘষছে আমার পরম সুখ।
আকিব শিকদার
এই বেদনায় আজ
ভরা শ্রাবণে শ্রাবণী নেইÑ এই বেদনায় আজ
হৃদ-আকাশে জমেছে মেঘ ধূসর গড়গড়
বুকের ভেতর পদ্মানদীর ভাঙন ভাঙন স্বর
মন ধরে না সাঙ্গ করতে হাতের কোনো কাজ।
ঝির-ঝির-ঝির এই শ্রাবণে নেই রে কাছে তুই।
কামিনী ডালে ফুটেছে ফুল, কেয়ার গুল্মে কেয়া
হাসনাহেনার সবুজ ঝোপে নিকষ কালো ছায়া।
তুই কাছে নেই, বারেবারে তোর স্মৃতিটাই ছুঁই।
লুড্ডু খেলার ছোট্টবেলা রাখলি কি তুই মনে?
শ্রাবণ মাসের প্রভাতবেলায় বকুলতলার কথা
ফুল কুড়ানো, ঝগড়া তুমুল হতো যে কতো সেথা
আজ যে চোখে সেসব ছবি ভাসছে ক্ষণে ক্ষণে।
শ্রাবণ মাসে তুই কাছে নেইÑ এই বেদনায় আজ
অশ্রæ ঝরে চোখের কোণে অশান্ত বাধাহীন
দীর্ঘশ্বাসে থেকে থেকে বাতাস কাঁপানো বীণ
মন ধরে না সাঙ্গ করতে হাতের কোনো কাজ।
উৎপল কুমার বসু
৪৮
বৃষ্টি নামল আর আমিও এক আশ্চর্য সত্যকে আবিষ্কার করলুমÑ
দেখলুম, এই লাইনটানা পাতার উপর বড় ফোঁটায় জ্বল ঝরছে,
গত মাসের মুদীর হিসেবের সঙ্গে আমার ছোট ছেলের ক্লাস-পরীক্ষার নম্বর
বেমালম মিশে গেল, পাটনা যাতায়াতের ট্রেনভাড়ার অঙ্ক কালো
সুতোর রেখায় ভেসে চলেছে, গৌতমের টেলিফোন নম্বর আর কি কেউ
পড়তে পারবে, ও টি এখন এক নীল পুষ্করিণী, আমার অবচেতন
মন যা যা চেয়েছিল তার প্রতিটি রহস্য দেখছি এই গ্রীষ্মশেষের
বৃষ্টি কোনও এক কৌশলে জেনে ফেলেছে। সে এর চেয়ে বেশি কিছু
জানে কিনা ভাবতেও ভয় হয়।
জাহাঙ্গীর ফিরোজ
অধরার ছোঁয়া
এক ঝলকের আগুন তুমি
এক ঝলকের রূপ
একটু খানি ছোঁয়া দিয়ে
আবার তুমি চুপ।
এক ঝলকের আগুন তুমি
এক ঝলকের হেম
বুকের মাঝে জাগিয়ে তোলো
অনন্ত এম প্রেম।
এক ঝলকের বাতাস তুমি
এক ঝলকের ছোঁয়া
মনের মনে বইছে এখন
অচেনা এক হাওয়া।
এক ঝলকের ব্যাকুল চাওয়া
এক ঝলকের নুর
বুকের মাঝে বাজল বাঁশি
অচেনা তার সুর।
এক পলকের আলো তুমি
এক নিমিষের তরে
তোমার খোঁয়ায় বাজল বাঁশি
মাটির ভাঙাঘরে।
এক পলকের আলো তুমি
চোখ ধাঁধানো রূপ
তোমার ছোঁয়ার মুগ্ধ বিবশ
আমি যে নিশ্চুপ।
কামরুল আলম কিরণ
ভালোবাসার জন্য
কাঁদছি আমি এখনও সেই ভালোবাসার জন্য,
পাচ্ছি না সেই সোনার হরিণ পেলে হতাম ধন্য
ঢুরে শাড়ি পায়ে নূপুর অপেক্ষা যে সকাল দুপুর
জানি না কার জন্যে, ভাবনা গুলো আমায় ঘিরে
ক্ষণিক ভেবে আসছি ফিরে আবার সেই বণ্যে
সেই মেঠো পথ বকুল তলা নিরব চোখে কথা বলা
কোথায় সেসব গল্প? আসবে কি কেউ নানান ছুতোয়?
নামটা লিখে রঙীন সুতোয় আঁকবে কি রূপকল্প?
মিজানুর রহমান তোতা
মনের পর্দায় বন্দী সবকিছু
সুখের চেয়ে সত্য বড় জানতাম
জানতাম না সত্যকে ঢেকে দিতে
মিথ্যার বেসাতি চলে সমানতালে
আমি সাহস নিয়ে সামনে যেতে চাই
কেউ সঙ্গী হলে দুহাত বাড়িয়ে দেব
মিথ্যাকে মুছে সত্য একদিন
সময় ডিঙ্গিয়ে বিস্ময়কর মনে হবে
আসলেই সুখের সন্ধানে দৌড়ঝাপ
নিস্ফল তাই বলে দুঃখের নাচনে
ব্যাথা পাবার কিছু নেই এটিই সত্য
সুখ সত্য শুধু মনের কাছে বন্দী।
দেলোয়ার হোসাইন
প্রবেশ নিষেধ
বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন সাজানো ঘরের পাহারায়
থাকি। জানি- সে ঘর আমার নয়। তবু আশায় থাকি কেউ একজন
সিটকিনিটা খুলে দিবে। আমি একবার তোমাদের ঘরের রঙিন কার্পেটে
আমার উৎকন্ঠাটুকু ছড়িয়ে দিয়ে ঝাড়বাতির ওম নিতে চাই। দৈনন্দিন
অন্ধকার গুলো ছড়িয়ে দিতে চাই রাজকীয় প্রাসাদের রঙ ছড়ানো দেয়ালে।
টেবিলে সাজিয়ে রাখা মুখরোচক খাবারে আমার জিবে জল আসুক আর না
আসুক বেলকনি জুড়ে ফুল আর এ্যাকুরিয়ামের মাছ গুলোর অবাধ আসা-
যাওয়া দেখে আমি একবার মুগ্ধ হতে চাই...
অথচ অপারগতার আকুতি নিয়ে ‘প্রবেশ নিষেধ’ লেখাটা দেখে প্রতিদিনই
স্বর্ণ কমল
তোমার প্রতি
ঢাকার আকাশে মেঘ করেছে এখনি বৃষ্টি নামবে
তুমি তৈরী হয়ে নাও বৃষ্টিতে ভিজবার
বুক পকেটে একটা চিঠি গোজো
আমার লেখা, হতে পারে কবিতাও
চোখের চশমাটা খুলে রাখো ঘাসে
প্যান্টের কোমরে কোন বেল্ট থাকবেনা,
ইনছাড়া শাটের বুকের কাছের বোতাম গুলো
খুলে দিয়ে শুয়ে পড়ো আকাশের কাছে বুুক পেতে
বৃষ্টি তোমাকে ধুয়ে দিক স্মৃতির কয়লা অঙ্গারের স্তুপাগুন
নিভিয়ে দিক হিমাদ্রতায়।
তোমার বিদগ্ধ প্রেমের ঘাতক মায়াবীনি
শুকনো পাতার মত ভেসে যাক জল¯্রােতে
দূরে, বহু দুরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন