বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাহিত্য

জালাল উদ্দীন রূমী [রহ.] : সংক্ষিপ্ত জীবনকথা

মসনবীর গল্প

রূহুল আমীন খান | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা রূমী কুরআন হাদীসে বর্ণিত অনেক কাহিনী, অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সার তাঁর কাব্যে তুলে ধরেছেন। তেমনি অনেক প্রচলিত অপ্রচলিত গল্পও বলেছেন তাঁর দর্শনকে সহজবোধ্য করার জন্য। গল্প তাঁর মূল লক্ষ্য নয়, উপলক্ষ মাত্র। তাই তাঁর গল্প বলার ধারা এক টানা নয়। একটি গল্পের অবতারণা করে ২/৪ লাইন লিখে তিনি চলে গেছেন অন্য প্রসঙ্গে। চলে গেছেন দার্শনিক তত্ত¡ বিশ্লেষণে, আধ্যাত্মিকতার সু²াতি বিষয়ের বর্ণনায়, উপদেশ ও নসীহতের বয়ানে। আবার গল্পে ফিরে এসে চলে গেছেন প্রসঙ্গ থেকে প্রসঙ্গন্তরে, এভাবেই সাজিয়েছেন তিনি তাঁর কাব্য কুসুম-কানন। আংশিক পাঠকদের পক্ষে অনেক সময় পূর্ণ গল্পটি খুঁজে পাওয়াটাই দুস্কর হয়ে পড়ে। তাই আমরা যথা স্থানে সংক্ষিপ্তাকারে গল্পটি তুলে ধরেছি কেবল মাত্র খেই ধরিয়ে ধরিয়ে দেয়ার লক্ষে।

শোনো গো বাঁশরীর কথা, শোনো শোনো কণ্ঠে তার
কাতর অভিযোগ ও নালিশ বিছেদ বিধুর যন্ত্রণার।

বাঁশ বাগানের ঝাড় থেকে ওই যখন কেটে আনলে হায়
কাঁদছি আমি তখন থেকে, কাঁদছে সবাই মোর ব্যথায়।

বিছেদ ব্যথায় চাইগো এ্যামন দীর্ন ও বিদীর্ণ মন
যে মন পারে বুঝতে আমার বিছেদ ব্যথা এই দহন।

নিক্ষেপিত উৎস থেকে যে জন কেবল সেই বোঝে
তীব্র জ্বালা কী বিরহের, মিলন কেবল সেই খোঁজে।

বিলাপ আমি করছি গিয়ে সব সমাবেশ সব সভায়
মিশছি সুখী দুঃখীর সাথে নিয়ে আমার যন্ত্রণায়।

আপন আপন অনুমানে সবাই হলো সঙ্গী মোর
দেখল খুঁজে রহস্য কী গুপ্ত আছে মোর ভেতর।

রহস্য মোর বিলাপ থেকে ভিন্ কিছু নয়, নয়কো দূর
তবে সকল চোখ ও কানের দেখা শোনার নেই সে নূর।

আত্মা-দেহ বিযুক্ত নয়, একই সাথে অবস্থান
দেহটাকে দেখে সবাই আত্মা নহে দৃশ্যমান।

বংশীধ্বনি অগ্নিশিখা বাতাস নয় সে, বাতাস নয়
নেই সে আগুন যার ভেতরে ধ্বংস হয়, সে ধ্বংস হয়।

বংশীসুরে সঙ্গোপনে লুপ্তআছে প্রেম-আগুন
সুরার মাঝেও লুপ্তআছে গুপ্তআছে সেই তো গুণ।

বন্ধু হারা বিপন্ন যে সঙ্গী-সাথী বংশী তার
এর তাল ও লয় ছিঁড়লো আমার বসন ভ‚ষণ মর্যাদার।

বাঁশীর মতো বিষ-বিনাসী বিষ দেখেছে কেউ কি আর
কে-পেয়েছে দেখা এ্যামন প্রণয়-পাগল প্রাণ-সখার?

রক্তঝরা কঠিন পথের কথাই বাঁশী যায় বলে
প্রেম-কাহিনী মজনুরি সে বেড়ায় গেয়ে সুর-ছলে।

বেহুশ ছাড়া তত্ত¡জ্ঞানী নয় কেহ আর এই হুশের
কর্ণ ছাড়া কথামালার ক্রেতা কেহই নেই মুখের।


ফুরিয়ে গেল দিনগুলো মোর প্রেম-বিরহ-যন্ত্রণায়
এখন আমার এই জীবনের প্রতিটি ক্ষণ বিষাদময়।

ভয় কিছু নেই, যাক ফুরিয়ে দিনগুলো মোর নেইকো দুঃখ
সঙ্গে থেকো তুমিই সদা, সেইতো আমর পরম সুখ।

মৎস্য ছাড়া প্রাণীনিচয় পানি পানেই তৃপ্তমন
মাছ খুশী নয় শুধু পানেই, পানিই হলো তার জীবন।
রূহের রুযি প্রেমই কেবল, নেই এ প্রেম হৃদয় যার
রূহ যে তার উপবাসী, জীবনটাই ব্যর্থতার।

তত্ত¡জ্ঞানীর হালত১ বুঝা অপক্কদের নয়কো কাম
সংক্ষেপে তাই বলাই ভাল ‘বিদায় বন্ধুÑ আস্সালাম।

বন্দী রবে আর কতকাল সোনা-রূপার শৃঙ্খলে
হওগো এবার মুক্ত স্বাধীন সকল বাঁধন পায় দলে।

ঢালো যদি কলসিটাতে এনে পুরো সাগরটাই
দিন পরিমাণ জল নিবে সে, এর বেশি তার সাধ্য নাই।

আখির কলস পূর্ণ লোভির হয়না ঢালো যতোই জল
এক ফোটাতেই তুষ্ট হয়ে ঝিনুক ফলায় মুক্তো ফল।

প্রেমের নেশায় মত্তজনের মানের বসন দীর্ণ হয়
ঊর্ধ্বে উঠে লোভ-লালসার হয়গো জীবন পুন্যময়।

প্রেম হে আমার! ধন্য তুমি, ধন্য মগন লভে প্রেমের!
ধন্য ধন্য তুমিই ভিষক আদি-ব্যাধি সব রোগের।

তুমিই খ্যাতি-অহমিকার ওষুধ, তোমার অসীম গুণ
তুমি আমার মহান ভিষকÑ জালিয়ানুস, আফলাতুন১।

প্রেমের জোরে মাটির দেহ পাড়ি দিল দূর নীলায়
অচলগিরি সচল হলো, নাচল প্রেমের মত্ততায়।

প্রেমিক ওহে! প্রেম-পরশে জীবন পেল কোহেত‚র
মাস্ত গিরি, বেহুশ মূসা, পরশে অই দীপ্ত নূর।

সুরকারের অধর সাথে মিললে অধর এই আমার
বংশী সম উজাড় করে দিতাম সকল কথার ভার।

ছিন্ন হয়ে পড়লে কেহ সমাজ হতে নিজ ভাষার
বাক হারা হয়, হাজার কথা গুমড়ে মরে বক্ষে তার।

কুসুম যখন যায় ঝরে হায় খাখা করে গুলিস্তান
লীলায়িত হয় না তখন বুলবুলিদের কণ্ঠে গান।

প্রেমিক-আশিক পর্দা কেবল, সবই মাশুক সর্বঠাঁই
মুর্দা আশিক, যিন্দা মাশুক, নাই, মাশুকের মৃত্যু নাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন