সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

চামড়া বাজারে মন্দাভাব

খুদে ব্যবসায়ীদের পুঁজি সঙ্কট কাটেনি, ভারী হচ্ছে লোকসানের পাল্লা

মিজানুর রহমান তোতা: | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঈদের দিন ও পরেরদিন কষ্ট করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা আড়তে তুলতেই মাথায় হাত উঠছে। চামড়ার দাম একেবারেই কম। লাভ তো দুরের কথা লোকসানের পাল্লা ভারি। তাছাড়া চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবন বস্তাপ্রতি বেড়ে গেছে সাড়ে ৪শ’ টাকা। ৮শ’ টাকার প্রতিবস্তা লবন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২শ’ ৫০টাকা। ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত মাঠ থেকে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে ট্যানারী মালিকদের কাছে ধর্ণা দিয়ে অবশেষে পাওনার যৎসামান্য টাকা হাতে পেয়ে ফিরে আসেন ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। ধারদেনা করে চামড়া সংগ্রহ করে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এবার লাভের মুখ চোখে দেখতে পারছেন না। বাজারের মন্দাভাব কাটার কোন লক্ষণ নেই। কোথাও কোথাও ধস নেমেছে। এই চিত্র দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশের মাঠপর্যায়ের চামড়া বাজারের। বাজারে ধস ঠেকানোর কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারতে চামড়া পাচারের আশঙ্কা প্রবল। যদিও বিজিবি ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে চামড়া পাচার হবে না। এদিকে, আজ (মঙ্গলবার) দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার হাট রাজারহাটে বেচাকেনার উপর নির্ভর করছে এবারের কোরবানির চামড়া বাজারের লাভক্ষতির হিসাব। তবে গত দু‘দিন মোকাম ও আড়তে যা বেচাকেনা হয়েছে তাতে ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত উঠেছে। শুধু ক্ষুদে ব্যবসায়ী নয়, কোরবানির চামড়ায় সারা বছরের খরচের একটা বড় অংশ ওঠে মাদ্রাসা ও এতিমখানার। চামড়া বাজারে ধস নামায় বিরাট ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে তারাও।
যশোরের রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন মুকুল গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এবার চামড়া বাজারে চরম মন্দাভাব। লবনযুক্ত গরুর চামড়া প্রতিবর্গফুট দর নির্ধারণ আছে ৪০/৪৫টাকা ও ছাগল ১৫/২০টাকা। বিক্রি হয়েছে এর চেয়েও কম। ফলে ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের পরিশ্রমের দাম উঠছে না। লাভ তো হচ্ছেই না। লোকসানের পাল্লা হচ্ছে ভারি। তিনি জানালেন, ট্যানারী মালিকরা আমাদের সম্পুর্ণ বকেয়া পাওনা পরিশোধ করেননি। অনেক দেনদরবারের পর সামান্য টাকা হাতে দিয়ে বলা হয়েছে চেষ্টা চলছে দেখা যাক। সারাদেশ থেকে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় ট্যানারী মালিকদের কাছে ধর্ণা দিয়ে সামান্য টাকা নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শুধুমাত্র যশোরের ব্যবসায়ীদের ট্যানারী মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা পাওনা ছিল। টাকা পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ পারসেন্ট। এই অবস্থা গোটা দেশের মাঠপর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের। একই অবস্থা ব্যাংক ঋণের।
ট্যানারী মালিকদের বক্তব্য, সাভারের হেমায়েতপুরে মোট ১শ’ ৫২টির ট্যানারীর মধ্যে ৬৭টি চালু হয়েছে। বাকিগুলো এখনো জায়গার লিজ ডিডের কাগজপত্র বুঝে না পাওয়ায় কাজকর্ম শুরু করতে পারেনি। পায়নি ব্যাংক ঋণ। যার জন্য বকেয়া পরিশোধ করা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনায় নানামুখী সমস্যা হচ্ছে। কাটছে না অস্থিরতা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, বড় বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারী মালিকদের দৌড়ঝাপ নেই চামড়ার মোকামগুলোতে। চামড়া সংরক্ষণের মূল উপকরণের দাম বেড়ে গেছে প্রায় দিগুণ। নানা কারণে এবারও সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে ভারতে চামড়া পাচার হতে পারে এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেননি ক্ষুদে চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, আমরা কিনতে না পারলে তো চোরাচালানীরা সুযোগ নেবে। তবে প্রশাসন, বিজিবি ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেছেন, চামড়া পাচারের কোন আশঙ্কা নেই। সীমান্তে কঠোর নজরদারি রয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চামড়ার বড় হাট রাজারহাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, সময় থাকতে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না চামড়া বাজারের অস্থিরতা কাটাতে। সরকারীভাবে লবনের দাম কমানো, ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থাসহ যেসব সঙ্কট ও সমস্যা ছিল তা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সমাধান করা হয়নি। তাদের বক্তব্য ব্যাংক ঋণের সুবিধা পান ট্যানারী মালিকরা। মাঠপর্যায়ের বেশীরভাগ ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এর থেকে বঞ্চিত হন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, বাংলাদেশের গরু ও ছাগলের চামড়া খুবই উন্নতমানের। বিশেষ করে বাছাই করা গরু ও ছাগল কোরবানী দেওয়ায় ওই চামড়া খুবই ভালো। বরাবরই চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প পণ্যের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। কোরবানীর পশুর চামড়া থেকেই মুলত দেশের মোট চামড়ার চাহিদা পুরণ হয়ে থাকে। সমস্যার সমাধান না করায় ক্রমাগতভাবে পিছিয়ে পড়ছে সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পটি। সচেতন, পর্যবেক্ষক মহল ও চামড়া শিল্পের সাথে জড়িতরা শিল্পটির দৈন্যদশা কাটাতে সরকারকে জোরদার ভুমিকা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন