মিয়ানমারে পরিকল্পিত জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে সৃষ্ট সংকট ও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর অবস্থান নয়া দিল্লীর নীতিনির্ধারকদের সমস্যায় ফেলেছে। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু’জনের সাথেই নয়া দ্ল্লিীর সুসম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দু’ নেত্রী পরস্পর বিরোধী অবস্থান নয়া দিল্লীর সাউথ বøকের জন্য এক চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা না সু চি কার পাশে থাকবে তা নিয়ে উভয় সংটে পড়েছে ভারত।
ঢাকা রোহিঙ্গা সমস্যার ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি বিষয়টি সে জোরালো ভাবে নেইপিদোর কাছে উত্থাপন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আগমন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। অন্যথায় তারা বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। সে সাথে বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উপর নজরদারির জন্য আকাশ সীমা লংঘনের জন্যও মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করেছে। অবশ্য মিয়ানমার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উত্থাপন করে তখন মিয়ানমারকে আরো ক্রোধের সম্মুখীন হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বাংলাদেশের উদ্যোগ তাদেরকে আরো বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
বিষয়টি ভারতের জন্য অধিকতর চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি মিয়ানমার সফরকালে রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে সমর্থন জানান। তিনি দাবি করেন রোহিঙ্গারা ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রবেশ রোধ করতে বিভিন্ন রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে এবং যারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে তাদের পুশব্যাক করতে বলেছে। সংঘ পরিবারও রোহিঙ্গাদের আগমন রোধে দেয়াল নির্মাণের জন্য মোদি সরকারে উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
এ অবস্থান ঢাকার সাথে নয়া দিল্লীর অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছে এবং তার পরিণতিতে ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা চ্যালেঞ্জ বিসয়ে ভারতকে জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ ব্যাপারে ভারত বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ^স্ত করেছেন।
তবে আশ^াস যাই হোক, নয়া দিল্লী পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থাকা দু’টি দেশের পাশেই থাকতে পারে না। এ ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান নেয়ার অর্থ ভারতকে হয় সু কি নয় শেখ হাসিনাকে দূরে ঠেলে দিতে হবে। আর তা করা হলে চীন সে সুযোগে সে দেশে তার অবস্থান জোরদার করতে পারে যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হবে। নীতিগত দিক দিয়ে মোদি সরকার এখন পড়েছে উভয় সংকটে। ভারত কিভাবে মধ্যপন্থা খুঁজে বের করে তা এখন দেখার বিষয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন