শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধুঁকছে ৯৮৮৬ ডাকঘর

প্রতি বছর লোকসান ২০০ কোটি টাকা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

‘চিঠি দিও প্রতিদিন, চিঠি দিও।’- এখন আর কেউ চিঠি লিখতে বলে না। লম্বা লাঠির মাথায় হারিকেন আর ঘণ্টা বেঁধে সুকান্তের রানারও আর ছুটে চলে না। এখন ডিজিটাল যুগ। দীর্ঘ সময় ধরে চিঠি লেখার সময় আর মানুষের হাতে নেই। এখন ঝটপট ই- মেইল অথবা এসএমএসের মাধ্যমে যে কোনো বার্তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে প্রাপকের কাছে পৌঁছানো যায়। মানুষের হাতের মুঠোয় এখন প্রযুক্তিগত অনেক সুবিধা। সেই প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ডাক বিভাগ। অথচ এক সময় ডাক বিভাগই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। তখন চিঠি থেকে শুরু করে পণ্য পার্সেল, টাকা পরিবহনে একমাত্র ভরসাই ছিল ডাক বিভাগ। যুগের সাথে তাল মেলাতে না পেরে সেবা দৈন্যতায় ধুকছে দেশের ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘর। গত দেড় দশকে ডাক বিভাগে চিঠি বিলির সংখ্যা কমেছে ২০ কোটি। প্রতি বছরে গড়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। এর মধ্যে গত ৭ বছরে লোকসান হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি।
জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে মোট ৯৮৮৬ টি ডাকঘর বা পোস্ট অফিস রয়েছে। এরমধ্যে জিপিও ৪টি, এ- গ্রেড প্রধান ডাকঘর ২৩টি, বি- গ্রেড প্রধান ডাকঘর ৪৫টি, উপজেলা পোস্ট অফিস (ইউপিও) ৩৯৯টি, সাব পোস্ট অফিস (এসও) ৯৪৫টি, অবিভাগীয় সাব-পোস্ট অফিস (ইডিবিও) ৩২২টি, বিভাগীয় শাখা পোস্ট অফিস (বিও) ১০টি, অবিভাগীয় শাখা পোস্ট অফিস (ইডিবিও) ৮১৩৮টি। এর মধ্যে বেশিরভাগ ডাকঘরের অবস্থাই খারাপ। বহু পুরাতন ভবনের অনেকগুলো একেবারে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোনটার ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়ে। কোনটার দরজা জানালা ভাঙ্গা। জনবল না থাকায় কোনটার কাজকর্মই ঠিকমতো চলে না। ডাক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর জুন মাস পর্যন্ত ২৫৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৪৮৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর আগের বছর লোকসান হয়েছে ২২৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একইভাবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে লোকসান ১৭৭ কোটি ১৩ লাখ, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২০০ কোটি ৬৯ লাখ ও ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
ডাক বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০০০ সালে ২৪ কোটি ৪ লাখ ২৭ হাজার চিঠি বিলি করে ডাক বিভাগ। এখন তা নেমে এসেছে ৫ কোটির নিচে। বর্তমানে সারা দেশে ডাকঘরে কর্মরত ৩৯ হাজার ৯০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্দিন চলছে। এর মধ্য অন্তঃত ২৪ হাজার ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারী ডাকপিয়ন। যাদের অবস্থা বড় করুণ। আলাপকালে ঢাকায় কর্মরত একজন প্রবীণ ডাকপিয়ন জানান, সরকারি দপ্তরের কিছু রেজিস্ট্রি চিঠি ছাড়া সাধারণ কোনো চিঠি এখন আর আসে না। আমরা সেই সব চিঠিই বিলি করি। আগে রাজধানীসহ সারাদেশেই লাল রঙের ডাকবাক্স চোখে পড়তো। এখন তেমন একটা পড়ে না। পড়লেও দেখা যায় অযতœ অবহেলায় বৃষ্টিতে ভিজে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ব্যস্ত রাস্তার মোড়ে স্থাপিত ডাকবাক্সগুলোর বেশিরভাগই বাতিল করা হয়েছে। এতে করে কেউ চিঠি লিখতে চাইলেও কোথায় পোস্ট করবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব পড়তে হয়।
ডাক অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ চিঠি কমে গেলেও ডাক বিভাগে রেজিস্ট্রি চিঠি, পার্সেল ও দাফতরিক চিঠির পরিমান বাড়ছে। ডাক বিভাগ চিঠি সরবরাহের জন্য ১১৮টি গাড়ি সংযুক্ত করেছে। গ্রামীণ পর্যায়ে নতুন করে ডাকঘর নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। দুর্দিনেও ডাক বিভাগে জনবল সংকট রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ডাক বিভাগকে মাথা তুলে দাঁড়াতে প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দিতে পোস্ট অফিস ব্যাংকিংয়ের ব্যাপক বিস্তারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং খাতের বাইরে যে জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সেবা দেয়া হবে। এখনও পোস্ট অফিসগুলোতে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে, টাকা উত্তোলন ও জমা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সেবাকে আরও গতিশীল করা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পোস্ট অফিস ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে। চীনে যেমন পোস্টাল সার্ভিস আধুনিকায়ণ করা হয়েছে, বাংলাদেশেও করা হবে। উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপারমাত্র। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আবার ঘুরে দাঁড়াবে ডাক বিভাগ। ###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন