শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঝিনাইদহের ডাকঘরগুলোর বেহালদশা সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি সেবাদান প্রতিষ্ঠান

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে

‘চিঠি দিও প্রতিদিন। চিঠি দিও চিঠিগুলো অনেক বড় হবে, পড়তে পড়তে সকাল দুপুর আর রাত্রি চলে যাবে’ চিঠি নিয়ে একদা এমন কত আবেগমথিত গান বাজতো বেতার-টিভিতে। এরও আগে যখন ডাকেরই প্রচলন হয়নি, তখন পোষা পায়রার পায়ে বেঁধে প্রিয়জনের কাছে বার্তা পাঠাতো মানুষ। এরপর এলো ডাকযুগ। প্রিয়জনের চিঠি পাবার আশায় ডাকপিওনের পথ চেয়ে থাকার দিন হলো শুরু। সে যুগ আর নেই। হালফিল জমানায় সব যোগাযোগই হয় এক নিমেষে। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ই-মেইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইমো, ভাইবারসহ কত প্রযুক্তির সুবিধা আজ সবার জন্য অবারিত। এখানটায় শহরের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই গ্রাম। গ্রামের মানুষের কাছেও এখন এসব সুবিধা পৌঁছে গেছে। যখন ইচ্ছে প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগের সুযোগটা তারাও নিচ্ছে। বার্তা আদান-প্রদানে চিঠির বদলে সবার ভরসা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি। এখন শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অজপাড়াগাঁয় পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও ই-মেইল সেবা। তাই ডাকঘরের মাধ্যমে মান্ধাতা যুগের চিঠি, টেলিগ্রাম সেবার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। সেই দৃষ্টিকো ণ থেকে ঝিনাইদহে ডাক বিভাগে বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ ডাকঘর দিনের পর দিন বন্ধ থাকছে। অধিকাংশ ডাকঘরে নেই কোনো নেই ডাকবাক্স। দু-একটি থাকলেও তার মধ্যে চিঠির পরিবর্তে থাকছে বিড়ি, সিগারেটসহ ময়লা- আবর্জনা। জেলা এবং উপজেলা ডাকঘর ব্যতীত সবক’টিতেই এই নাজুক অবস্থা। এক সময় ডাকঘরগুলো সবসময় মুখরিত থাকতো রানার কিংবা ডাক পিয়নের পদচারনায়। মানুষ ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কারণ কখন যেন আসবে কাক্সিক্ষত চিঠি। কিন্তু ডাক বিভাগের সেই ঐতিহ্য এখন ফিকে হতে বসেছে। জেলায় মোট ডাকঘর রয়েছে ১০৩টি। এর মধ্যে জেলার প্রধান ও উপজেলা ডাকঘরসহ ৮টি সরকারি এবং বাকি ৯৫টি অবিভাগীয়। অধিকাংশ ডাকঘরের পাকা বিল্ডিং, সোলার প্যানেল স্থাপন ও আসবাবপত্র নতুন করে তৈরি করা হলেও এসব ডাকঘরের দাপ্তরিক কোনো কাজকর্ম নেই বললেই চলে। ডাকঘরগুলো দিনের পর দিন থাকে বন্ধ, সেখানে নেই কোনো ডাকবাক্স। দু-একটি থাকলেও তাতে চিঠির পরিবর্তে স্থান পাচ্ছে বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেট, ময়লা-আবর্জনা ও বাজে কাগজপত্র। তালাবিহীন এসব ডাকবাক্স এখন ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ডাকঘরে একজন ডাক বিলিকারী ও একজন পোস্ট মাস্টার রয়েছে। তবে ডাকঘরগুলোতে রানার বা ডাক বিলিকারীর কোনো খোঁজই মেলেনা মাসে অন্তরে। অন্যদিকে সপ্তাহান্তরেও দেখা মেলেনা পোস্ট মাস্টারের। এরূপ করুণ অবস্থার কারণে ডাক বিভাগের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছেন মানুষ। এ অবস্থায় ডাক বিভাগের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে আধুনিকিকরণের দাবি জানানো হয়েছে। তবে জেলা ও উপজেলা ডাকঘরগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এখানে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। জেলার প্রধান ডাকঘর থেকে গড়ে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ চিঠি এবং অনলাইনের মাধ্যমে টাকা-পয়সা আদান-প্রদান হয়। দুধসর ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার কানাই লাল দত্ত জানান, আমাদের কোনো বেতন নেই, শুধু সম্মানী ভাতা দেয় ১২শ’ টাকা। যাতে করে আমাদের সংসার চলে না, ফলে বাধ্য হয়ে অন্য কাজ করতে হয়। তবে জেলার প্রধান ডাকঘরের পোস্টমাস্টার মুন্সি আসাদ-উজ-জামান জানান, ডাক বিভাগের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এগুলো তদারক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, উপজেলা ডাকঘরগুলো বেশ ভালো চলছে। কাজের পরিধিও বেড়েছে। এদিকে একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল এই যুগে অনেক কিছুরই আধুনিকিকায়ন করা হলেও ডাক বিভাগের খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। সরকারি ডাক বিভাগের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা কুরিয়ার সার্ভিস নামে যে চিঠিপত্র ও টাকা-পয়সা আদান-প্রদানের মাধ্যম চালু করেছে তা ব্যাপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। এসব কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অতি তাড়াতাড়ি ও সঠিক সময়ে সেবা পাওয়ায় মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছে। সরকারি ডাকবিভাগ পুরনো ধ্যান-ধারণা বাদ দিয়ে, আধুনিকীকায়নের মাধ্যমে মানুষের কাছে আবারো জনপ্রিয় করার সুযোগ থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন