বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ইডেনে রোমাঞ্চিত বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৩ এএম, ১৬ মার্চ, ২০১৬

শামীম চৌধুরী, কোলকাতা (ভারত) থেকে : আকাশপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্বের চেয়ে একটু বেশি ঢাকা-কোলকাতার দূরত্ব। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ, একই ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে ক্রিকেটে মিত্রতার সুযোগ পাচ্ছে কোথায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল? সেই ১৯৯০-এর ৩১ ডিসেম্বরের পর ২৫ বছর ১০৬ দিন পেরিয়ে ইডেন গার্ডেনসে খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। বাড়ির অনেক কাছাকাছি ভেন্যুটি বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট-খ্যাত মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের প্রায় তিনগুণ, এতদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের কাছে তা রূপকথার মতো শোনালেও আজ এই ভেন্যুতেই বেজে উঠবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। ইডেনে আজ এই মহেন্দ্রক্ষণটির সাক্ষী হচ্ছেন ২৫ হাজার দর্শক- তেমনটাই জানিয়েছেন সিএবি’র বিশ্বস্ত সূত্র।
২০১৪ সালে ইডেন গার্ডেনসের দেড়’শ তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সৌরভ গাঙ্গুলির আমন্ত্রণ রক্ষা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আমন্ত্রনমূলক টুর্নামেন্টে দল পাঠিয়েছে বিসিবি একাদশ। কিন্তু ইডেনের দেড়শ’তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সিবিএ আয়োজিত টূর্নামেন্টের ম্যাচগুলোর একটিও হয়নি ভারতের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে! কোলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে ম্যাচগুলো খেলেছে নাসির, মুমিনুলরা। তা নিয়ে কম আক্ষেপ করেনি বিসিবি একাদশ। বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসের সমর্থক হয়েও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে টেস্ট খেলতে ইডেনে আতিথ্য দিতে অপেক্ষা করতে হবে আরো ৫ মাস। আপাতত প্রতিশ্রæতি পর্যায়েই আছে তা। তবে তার আগেই ক্রিকেটের নন্দনকাননে বাংলাদেশ দলকে দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব।
টি-২০ বিশ্বকাপে ধর্মশালার পরীক্ষায় পাস করে গ্রæপ রাউন্ডের বাধা পেরিয়ে ইডেন গার্ডেনসে পড়েছে পা, সে লক্ষ্যটা ইতোমধ্যে পূরণ করেছে মাশরাফিরা। প্রথম পর্বে ফেভারিটদের মতো খেলে সুপার টেন নিশ্চিত করে এখন ট্রফির লড়াইয়ে বাংলাদেশ দলের শুরুটা হচ্ছে ইডেন গার্ডেনস থেকেই, পাকিস্তনের বিপক্ষে অবতীর্ণ হবে মাশরাফিরা ক্রিকেটের নন্দনকানন খ্যাত ইডেন গার্ডেনসে !
বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার জন্য যে লোকটির অবদান অনস্বীকার্য, সেই জগমোহন ডালমিয়া যখন সিবিএ’র সেক্রেটারী, তখন থেকে সিবিএ-বিসিবি’র বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, ১৯৮৪ সাল থেকে এখনো ওই চুক্তিতে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের কিশোররা করছে সফর বিনিময়। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল মাত্র ৮টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে ভারতে, সেখানে ইডেন গার্ডেনে খেলার সুযোগ পেয়েছে মাত্র ১টি ম্যাচ। ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে শ্রীলংকার বিপক্ষে এশিয়া কাপের সেই ম্যাচটির স্মৃতিই ভেসে উঠেছে আতাহার আলী, আকরাম খান, নাসির আহমেদ নাসুর চোখের সামনে। ইডেনে প্রথম এবং একমাত্র ম্যাচে বাংলাদেশ দল শ্রীলংকার কাছে ৭১ রানে হেরেও পেয়েছে বাহাবা। সেই ম্যাচে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার আতাহার আলীর ৯৫ বলে ৭৮ রানের ইনিংসে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম। একই ভাষাভাষী সমর্থকদের সামনে ২৫ বছর ১০৬ দিন পর আনতর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল, তা নস্টালজিয়ায় ফিরিয়ে নিয়েছে ইডেনে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ এখন টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের এই ভেন্যু থেকে ওই ভেন্যুতে ঘুরছেন, কিন্তু দেশের হয়ে প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচের সেই স্মৃতিটা এখনো তাকে দেয় নাড়াÑ ‘ক্রিকেটার হিসেবে সবার স্বপ্ন থাকে লর্ডস, মেলবোর্ন এবং ইডেন গার্ডেনসে খেলার। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ আমি এবং তা ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে। এখনো আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই স্মৃতি। বিশাল স্টেডিয়ামে প্রচুর দর্শক, বাংলাদেশ দলকে সবার সমর্থন, হেরেও পেয়েছি সবার হাততালি। এটা কি ভোলা যায়? এখনো কোলকায় গেলে, মাঝবয়সী কিংবা বৃদ্ধ কারো সাথে পথে দেখা হলে আমাকে ওই ইনিংসের কথা মনে করিয়ে দেন তারা।’
বাংলাদেশের এই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মধ্যে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের খেলোয়াড় বলে ইডেন গার্ডেনস সাকিবের খুব চেনা-জানা ভেন্যু। বাংলাদেশের এই প্রজন্মের অন্য কারো এই অভিজ্ঞতা নেই এই ভেন্যুতে খেলার। তবে টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকে সুপার টেনে উঠে ইডেন গার্ডেনসে খেলার স্বপ্ন পূরণ করবে বাংলাদেশ দল, এমটাই প্রত্যাশা করছেন আতাহার আলীÑ ‘যতটা জানি, সাকিব, মাশরাফি, তামীম, মুশফিকুরদের যথেস্ট ভালবাসে কোলকাতার ক্রিকেট ফ্যানরা। যেহেতু দীর্ঘ ২৫ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয় দল খেলবে এখানে খেলতে নামছে, তাই একই ভাষাভাষী ক্রিকেট ফ্যানদের সমর্থন তাই পুরোটাই পাবে বাংলাদেশ দল। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই ইডেন গার্ডেনে খেলতে নেমে নিজেদের ভেন্যুই মনে করবে বাংলাদেশ।’
কোলকাতায় এসেই মাশরাফিরা যেনো নিজেদের চেনা পরিবেশই পাচ্ছে। খোঁজ-খবর নিচ্ছে যারা, তাদের অধিকাংশই বাঙালী। মাশরাফিদের ভক্তের সংখ্যাও তো কম নয় এখানে। ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে সবারই অভিনন্দন পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গতকাল বেলা ৩টায় বাংলাদেশ দল যখন এসেছে এখানে অনুশীলনে, তখন ইডেন গার্ডেনসের বাইরে শত শত লোক, মাশরাফিদের এক নজর দেখতে কৌত‚হলী তারা! ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ভেন্যু মেলবোর্নে ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারত, শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ দল। তবে মেলবোর্নে নিজেদের হোম মনে হয়নি মাশরাফিদের। ইডেনকে সেখানে পরিচিত আবহাওয়া ও খাদ্যাভাস এবং স্থানীয় মানুষদের চার হোম হোমই যে মনে হচ্ছে। ধর্মশালা থেকে টনিক নিয়ে ইডেনে যে প্রানের স্পন্দনটা একটু বেশিই পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের মতো অতো লম্বা সময় প্রতীক্ষা করতে না হলেও ইডেনেও যে ৫ বছর বিরতির পর আন্তর্জাতিক টি-২০ বসছে!
ইডেনে বাংলাদেশ দল অভিষেকে খালি হাতে ফেরেনি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ পেয়েছে বাংলদেশ এই ইডেন থেকেই। ২৫ বছর পর ইডেনে খেলার সুযোগকে স্মরনীয় করে রাখার সংকল্প মাশরাফিরÑ ‘আমরা ইডেন গার্ডেনে খেলার ভালো একটি সুযোগ পেয়েছি। এখানে আমাদের খেলোয়াড়রা সবাই শিহরিত। এখানে প্রায় ৯০ হাজার দর্শক থাকে। কালকের ম্যাচে হয়ত ততটা হবে না। তারপরও ক্রিকেট এটা বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি ভেন্যু। আমরা চাই ভালো খেলতে ও স্মরণীয় করে রাখতে।’
কোলকাতা নাইট রাইডার্সে ৬ বছর কাটিয়ে দেয়ায় ইডেন কোলকাতার ঘরের ছেলেই যেনো হয়ে গেছেন সাকিব। ইডেনে খেলতে এসে বাংলাদেশ দলের মধ্যে সাকিবের কদরটা একটু বেশিই। তাই ইডেনের পীচ,রাতের শিশির সব কিছু’র প্রাক ধারনা নিতে সাকিবই যে প্রধান ভরসা মাশরাফিরÑ ‘এই মাঠ সম্পর্কে আমরা সাকিবের থেকে অনেক তথ্য নিতে পারব। কারন কেকেআরের হোম গ্রাউন্ড এটি।’
বদলে গেছে ইডেন, এক সময়ে লাখ ছাড়িয়ে যেতো দর্শক। ৯৬’র বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারত-শ্রীলংকা ম্যাচে ১ লাখ ১০ হাজার দর্শকের রেকর্ড এখনো ক্রিকেটের কোন ভেন্যু পারেনি ভাংঙতে। সংস্কারে নেমে এসেছে ৬৬ হাজার ৩৪৯ টি আসনে। এই ভেন্যুতে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরম বন্ধু, বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার অন্যতম সমর্থক জগমমোহন ডালমিয়ার স্মৃতিটাও মনে করতে হচ্ছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন