শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

মেসি-পিকেদের ভিন্ন অভিজ্ঞতা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পুরো ফুটবল ক্যারিয়ারে লিওনেল মেসি-আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা-জেরার্ড পিকেরা এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন এই প্রথম। ক্যাম্প ন্যুতে লা লিগার ম্যাচ খেলছে বার্সেলোনা। অথচ গ্যালারিতে শুনশান নীরবতা। বার্সার জার্সি পরে ছোট ছোট কাতালান পতাকা হাতে নিয়ে এদিন গলা ফাটাননি হাজারো দর্শক। পুরো গ্যালারিই ফাঁকা। এমন দর্শকশূন্য ম্যাচে লাস পালমাসকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে বার্সা। এমন ঐতিহাসিক দিনটি জাদুকরী দুই গোল করে ও মাপা কর্ণার কিকে আরেকটি সার্জিও বুসকেটসকে দিয়ে করিয়ে স্বরণীয় করে রাখলেন মেসি।
তবুও তো ম্যাচটা হতে পেরেছে। সেটাও নিশ্চিত করা হয় নির্ধারিত সময়ের মাত্র ২৫ মিনিট আগে। স্পেন থেকে কাতালানদের স্বাধীনতা প্রশ্নে উত্তাল পুরো বার্সেলোনা। এজন্য পরশু সেখানে ছিল গনভোট। ৯০ শতাংশ ভোটই পড়ে স্বাধীনতার পক্ষে। কিন্তু স্পেন সরকার এটাকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ভোট বানচাল করার জন্যে ধড়পাকড়, ভাংচুর ও আইনসৃংখলা বাহিনীর হাতে সহ¯্রাধীক আহতও হয়। কোথাও কোথাও ব্যালট বাক্সও ছিনিয়ে নেয় স্পেনের পুলিশ। এমন উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে লা লিগা কর্তৃপক্ষের কাছে ম্যাচ বাতিলের আবেদন জানিয়েছিল বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব। কিন্তু লা লিগা কর্তৃপক্ষ ম্যাচ বাতিলে অস্বীকৃতি জানায়। শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে ‘দর্শকশূন্য’ গ্যালারিতে খেলতে রাজি হয় বার্সেলোনা। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হয় হাজার হাজার দর্শক-সমর্ধকরা।
কাতালানদের স্বধীনতা প্রশ্নে বরাবরই সোচ্চার জেরার্ড পিকের কন্ঠ। গনতন্ত্রের পক্ষে এদিনও কন্ঠ মেলান তিনি। ম্যাচের পর নিজের হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ম্যাচটা খেলা খুব কঠিন ছিল। এটা ছিল আমার পেশাদার জীবনের সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা। সাত বছর ধরে আমরা পরিস্থিতি সামলেছি। কিন্তু আজ যা হলো তা গোটা পৃথিবী দেখেছে।’ কাতালানদের স্বধীনতার প্রশ্নে স্পেনের জার্সিও প্রয়োজনে খুলে রাখতে প্রস্তুত বলে জানান পিকে। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন স্পেন জাতীয় দলের অপরিহার্য হয়ে ওঠা এই ডিফেন্ডার। পরে সেই ছবি টুইটারেও পোষ্ট করেন।
আরেক প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ম্যাচের আগে কাতালান পতাকার রঙে রঙিন টি-শার্ট পরে ছবি তোলে বার্সেলোনা দল। বিরতির আগ পর্যন্ত ম্যাচেও যেন এর প্রভাব ছিল স্পষ্ট। এসময় মাঠে ফুটবল ছিল নিরুত্তাপ। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বলের দখলেও এসময় বার্সেলোনা ছিল পিছিয়ে। বিরতির পর বদলি হিসেবে ইনিয়েস্তা-রাকিটিচ মাঠে নামতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। একের পর এক আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে তটস্থ করে রাখেন রাকিটিস-মেসি-সুয়ারেজরা। ফল পেতেও দেরি হয়নি বেশিক্ষণ। ৪৯তম মিনিটে মেসির মাপা কর্ণার কিক খুঁজে নেয় বুসকেটসের মাথা। সেখান থেকে বল সরাসরি জালে।
৭০ ও ৭৭তম মিনিটে দেখা দিলেন জাদুকরী মেসি। সাত মিনিটের ব্যবধানে দর্শনীয় দুই গোলে লা লিগায় দলের টানা সপ্তম জয় নিশ্চিত করেন আর্জেন্টাইন তারকা। ৭ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা দাঁড়োলো ১১-তে। সাবেক সতীর্থ কার্লোস পুয়েলকে (৫৯৩) টপকে বার্সার জার্সিতে এদিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পর্শ করেন মেসি। কিন্তু এমন দিনটি উদযাপনের জন্য কোন ভক্তকে মাঠে পেলেন না রেকর্ড ৫ বারের বর্ষসেরা। তবে গোল না পেয়ে এদিন হতাশার বহিপ্রকাশ ঘটান সুয়ারেজ। ম্যাচের যোগ করা সময়ে মেসির বাড়ানো সহজ বল গোলে পরিণত করতে না পারায় জার্সি ছিড়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান উরুগুয়ান স্ট্রাইকার।
একই রাতে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেও মাঠে নেমেছিল আরেক কাতালান ক্লাব এস্পানিওল। ম্যাচটি ২-০ ব্যবধানে জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু এই ম্যাচেও গোল পাননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ম্যাচের দু’আর্ধ মিলে অর্ধডজন মত গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন পর্তুগিজ তারকা। দুই গোলই করেছেন ধীরে ধীরে রিয়ালের অপরিহার্য খেলোয়াড়ে পরিণত হওয়া ইস্কো। পুরো মাঠ এদিন চষে বেড়িয়েছেন স্প্যানিশ এই তরুণ মিডফিল্ডার। তার কল্যাণেই লা লিগায় নিজেদের মাঠে প্রথম জয় পায় রিয়াল। আগের তিন ম্যাচের দুটি ছিল ড্র, একটিতে হার।
ফলে ৭ ম্যাচ শেষে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী বার্সার সাথে জিনেদিন জিদানের দলের পয়েন্ট ব্যবধান সাতই রইল। পূর্ণ ২১ পয়ন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে বার্সেলোনা। পাঁচে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের পয়েন্ট ১৪। দুইয়ে থাকা সেভিয়ার সংগ্রহ ১৬ পয়েন্ট। সমান ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তিন ও চারে যথাক্রমে ভ্যালেন্সিয়া ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন