ঢাকঢোল পিটিয়ে সবার হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু করলেও ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ কার্ড বিতরণ করতে পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সবার হাতে কার্ড পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি ইসি। এদিকে ঢাকার দুই সিটিতে অর্ধকোটি ভোটারের মধ্যে ৬০ শতাংশ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশ কার্ড বিতরণ করতে পারেনি। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ শেষ হবে কি না তা বলতে পারছে না ইসি। গতকাল শনিবার রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডে প্রায় তিন লাখ ৫৭ হাজার স্মার্টকার্ড জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার রংপুর জেলা পরিষদের কমিউনিটি সেন্টারে স্মার্টকার্ড বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কেন্দ্রে এই কার্ড বিতরণ করা হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, প্রকল্পের মাঝখানে ফ্রান্সের একটি কোম্পানির ব্যর্থতার কারণে বিতরণ কাজ পিছিয়েছে। এখন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন ও পার্সোনালাইজেশন (কার্ডে ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য সন্নিবেশ করার কাজ) করা হচ্ছে। কাজের গতি বাড়িয়ে মাসে ৫০ লাখ পর্যন্ত কার্ড ছাপানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আশা করি আগামী বছর দেশজুড়ে পুরোদমে বিতরণ কাজ হবে। সে ক্ষেত্রে নভেম্বর-ডিসেম্বরে জেলাপর্যায়ে বিতরণে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আগামী ১৫ মাসের মধ্যে সবার হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিতে পারব। তিনি বলেন, আমরা চাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ শেষ করতে। তবে এখনই বলা যাবে না শেষ হবে কি না।
নির্বাচন সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধন করেন। এরপর প্রেসিডেন্টের কাছেও স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া হয়। ৩ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীতে শুরু হয় বিতরণ। এ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনগুলো ও বিলুপ্ত একটি ছিটমহলে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ চলেছে। কতটা এগিয়েছে কাজ? বর্তমানে দেশে ভোটার ১০ কোটি ১৮ লাখের বেশি। এর সঙ্গে জানুয়ারিতে যোগ হচ্ছে আরো ২৫ লাখ নতুন ভোটার। লক্ষ্য ছিল এর মধ্যে ৯ কোটি ভোটারের হাতে ডিসেম্বরের মধ্যে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া। সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত এক কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও পার্সোনালাইজেশন হয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এখনো উৎপাদন ও বিতরণ বাকি সাত কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার (৭৭ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন) স্মার্টকার্ড।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ প্রকল্পের আওতায় নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দিতে ২০১৫ সালে ফ্রান্সের অবার্থর টেকনোলজির সঙ্গে চুক্তি করেছিল নির্বাচন কমিশন, যা গত মাসে বাতিল করা হয়। কয়েক দফা বাড়ানোর পর এ বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান আইডিইএ প্রকল্পটিতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংক আর আগ্রহী না হওয়ায় সরকারি অর্থায়নে নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণে সেনাবাহিনীকেও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইডিইএ প্রকল্প শেষে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভোটার তালিকা প্রস্তুত এবং জাতীয় পরিচিতি সেবা প্রদানে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক নতুন একটি প্রকল্প নিতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগরী থেকে বিতরণ শুরু করে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা সিটিতে বিতরণ চলছে। গতকাল শনিবার রংপুর সিটিতে ও মধ্য অক্টোবরে সিলেট সিটিতে বিতরণ শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরেও শিগগিরই শুরু হবে। নভেম্বরের শেষ ভাগে ৬৪ জেলায় বিতরণে যাওয়ার প্রস্ততি চলছে। ঠিকমতো শুরু করতে পারলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বিতরণ কাজ শেষ করতে পারব।
ঢাকা মহানগরে প্রায় ৬০ শতাংশ কার্ড বিতরণ
ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মন্ডল ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা মহানগরের অর্ধকোটি ভোটারের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫২ জন স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করেছেন। যা ৬০ শতাংশের মতো। ২০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৭ জন ভোটার এখনো কার্ড নেননি। মিরপুর ও উত্তরার কয়েকটি ওয়ার্ডে এখনো বিতরণ চলছে। ঠিকানা পরিবর্তন, কর্মস্থল পরিবর্তনসহ নানা কারণে নাগরিকরা কার্ড নেননি অনেকে। তাদেরকে পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। যারা হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং এখনো কোনো ধরনের কার্ড পাননি- তাদের বিষয়েও দ্রæত কমিশন সিদ্ধান্ত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন