বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

কাস্টমসে ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি বেনাপোলে আট মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৩১০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আয়

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : রাজস্ব ফাঁকি রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করায় চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে  বেনাপোল কাস্টমস্ হাউসে  লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩১০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে রাজস্ব ফাঁকি রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করে পণ্যের শুল্কমূল্য বৃদ্ধি ও নতুন নতুন নিয়ম চালু করায় এই স্থলবন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণতো হবেই না বরং ঘাটতির পরিমাণ ৫শ’  কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অভিমত ব্যবসায়ীদের। রাজস্ব ফাঁকি রোধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল কাস্টমস হাউসে সৎ ও দক্ষ কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনারসহ ৩ জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়ায় সুযোগ সন্ধানী আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় এই বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ১৪৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্যমাত্রা  ছিল ২ হাজার ১৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ এই ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩০৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে বেনাপোল কাস্টমস্ হাউজের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আহরণ হয়েছে ১৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
 পরবর্তীতে আগস্টে ২৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে ২৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে ২৬৩ কোটি ৫৭ লাখের বিপরীতে ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ, অক্টোবরে ২৪৮ কোটি ৭৯ লাখের বিপরীতে ২৩২ কোটি ২১ লাখ, নভেম্বরে ২৫৬ কোটি ৬৮ লাখের বিপরীতে ২১১ কোটি ২৩ লাখ, ডিসেম্বরে ২৩৭ কোটি ৭৯ লাখের বিপরীতে ২০১ কোটি ৪৯ লাখ, জানুয়ারিতে ২৬৮ কোটি ৪৪ লাখের বিপরীতে ২০৩ কোটি ৪৫ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা রাজস্ব লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২১১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারী আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে গিয়ে সব আমদানি পণ্যের শুল্কমূল্য বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী মংলা, হিলি, সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন আমদানিকারকরা। ফলে, এখানে মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে রাজস্ব ঘাটতি।
বেনাপোল আমদানি রফতানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, কাস্টমস্ কর্মকর্তাদের ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে। আগে এখান দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো। বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ২৫০ ট্রাকে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে। ফলে তারা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। আবার স্থানীয় বাজারে বিক্রি কমার কারণেও আমদানি কমিয়েছেন বলে জানান যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ মফিজুর রহমান সজন জানান, এদেশের বৃহত্তম এই বন্দর দিয়ে আমদানি কমার কারণেই কমেছে রাজস্ব আদায়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়াই আমদানি করা পণ্যের শুল্কমূল্য বৃদ্ধি এবং ইচ্ছামতো এইচএস কোড পরিবর্তন করে শুল্কহার পরিবর্তন করায় বন্দর পরিবর্তন করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তবে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের বিষয়ে এখনো আশাবাদী কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান বলেন, “ইতোপূর্বে এই বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ শুল্ক ফাঁকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সে সুযোগ নেই। প্রধানত উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি ১৩ হাজার টন কম হওয়ায় রাজস্ব আহরণ কমেছে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোয় তা পূরণ হয়ে যাবে।”
 তবে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এই উচ্চাশার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা পূরণ হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন