মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ইডেনে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী (কোলকাতা) ভারত থেকে : অবিশ্বাস্য ক্যাচে হাফিজকে ফিরিয়ে বাহাবা পেয়েছেন সৌম্য। ডিপ মিড উইকেটে শটটি উড়িয়ে ছক্কা অবধারিত বলে ধরে নিয়েছিলেন হাফিজ, অথচ শূন্যে লাফিয়ে বাউন্ডারি রোপের বাইরে থেকে বলটি দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় শূন্যে লাফিয়ে ক্যাচ-চোখকেও যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু অবিশ্বাস্য ওই ক্যাচে পরিণত যিনি, সেই হাফিজই যে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের হিরো! তার ৪২ বলে ৬৪ রানের ইনিংস, শেহজাদকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৮ বলে ৯৫ এবং আফ্রিদিকে নিয়ে ১৭ বলে ৪২ রানের পার্টনারশিপে নেতৃত্ব দেয়া হাফিজই যে ম্যাচে করেছেন ২ দলের ব্যবধান রচনা। যে দলটিকে ওয়ানডে, টি-২০ মিলিয়ে সর্বশেষ ৫ ম্যাচের সব ক’টিতে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল, ইডেনে ২৫ বছর ১০৬ দিন পর খেলতে এসে সেই দলটির কাছেই কি না সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে পর্যুদস্ত হতে হলো মাশরাফিদের।
গত ১৩ মাস ধরে বাউন্সি উইকেটের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা মাশরাফিরা ফ্লাট উইকেটে খেলতে এসেই খেল ধাক্কা! ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে দলের বোঝা হওয়া আফ্রিদি বুম বুম রূপটা ফিরে পেলেন, অফ ফর্ম কাটিয়ে হাফিজ পেলেন ব্যাটিং ছন্দ, আর এশিয়া কাপে দলের বাইরে থাকার জ্বালা জুড়ালেন আহমেদ শেহজাদ। এই ত্রয়ীকে ফর্মে ফিরিয়ে আনল বাংলাদেশ বোলাররা। হোক না ফ্লাট উইকেট, নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠা বাংলাদেশ বোলাররা যে চেনাতে পারেনি এই ম্যাচে। আল আমিনের দ্বিতীয় ওভারে শারজিলের ২ ছক্কা এক চারে শুরু পাকিস্তান সমর্থকদের ‘জিতেগা স্লোগান’-শেষ বল পর্যন্ত সেই স্লোগানেই যে ছন্দ হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ দল।
টি-২০তে ফিল্ড রেস্টিকশনের প্রথম ৬ ওভারকে বিশেষ টার্গেট করে ব্যাটিং করতে হয়, তা এদিন জানিয়ে দিয়েছেন শেহজাদ-শারজিল-হাফিজ। প্রথম ৬ ওভারে স্কোর ৫৫/১, শেষ ৩০ বলে সেখানে ৬২! পাকিস্তানের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের এই শুরু এবং শেষটাই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশকে ছিটকে ফেলেছে। ১৬৪’র উপর চেজ করে টি-২০তে জয়ের রেকর্ড নেই বাংলাদেশ দলের, সেই দলটি ২০২ চেজ করে জিতবে কীভাবে? প্রতিপক্ষের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোরে চাপা পড়ে জবাবটা যেভাবে দেয়ার কথা তা পারেনি বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারে। মোহাম্মদ আমির এবং ইরফানের আক্রমণে সতর্ক হয়ে খেলাটাই ধীরে ধীরে বাংলাদেশের টার্গেটকে করেছে পাহাড়সম। আফ্রিদির প্রথম বলে স্কোয়ার লেগের উপর দিয়ে তামীমের ছক্কায় নেচেছে বাংলাদেশ সমর্থকরা, কিন্তু ওই ওভারে দেরিতে কাভার দিয়ে খেলতে যেয়ে রুম্মান বোল্ড আউট হলে (১৯ বলে ২৫) সেই যে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ দল, তা সামাল দিয়ে ম্যাচে ফিরতে পারেনি। প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তানের স্কোর যেখানে ৯০/১, সেখানে বাংলাদেশের স্কোর ৬৯/৩। টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা তামীম মাইলস্টোন ম্যাচে (৫০তম) ২৪ রানে ফিরে গেলে ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে ফেরানোর মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। এমন এক ম্যাচে জয়ের আশা বাদ দিয়ে সাকিব খেলেছেন নিজের জন্য। তামীমের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টি-২০তে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এই দিনে। ২৪ রানের মাথায় আমিরের বলে মিড উইকেটে শেহজাদের হাতে ৩৩ রানে লাইফ পেয়ে ইনিংসকে টেনে নিয়েছেন ৫০ পর্যন্তÑ৪০ বলে ৫০ রানের হার না মানা এই ইনিংসটিই বাংলাদেশের সান্ত¦না।
টি-২০ ব্যাটসম্যানদেরই খেলা, সব সময় বোলাররা এই ফরমেটের ক্রিকেটে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে নাÑঅন্তত সেটাই জেনে গেলেন মাশরাফিরা। ডট বলের সংখ্যা কমানোটাও এই ফরমেটের ক্রিকেটে ক্যালকুলেটিভ তত্ত্ব। সেখানেও যে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ এই ম্যাচে। ১২০ বলে পাকিস্তান যেখানে ডট করেছে ৩৫টি বল, সেখানে বাংলাদেশের ডট বলের সংখ্যা ৫২টি ! যে ২ বোলার ধর্মশালায় প্রথম ম্যাচে ২ আম্পায়ারের সন্দেহের দৃষ্টিতে ছিলেন, সেই পেস বোলার তাসকিন (২/৩২) এবং আরাফাত সানি (২/৩৪) ছাড়া অন্য কোনো বোলার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফর্মুলা মেনে চলেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার টেনে সেঞ্চুরি আছে শেহজাদের (১১১ নট আউট), সেই শেহজাদ গতকাল থেমেছেন ৫২তে। দলের প্রয়োজনে শ্লগ করতে ৪ নম্বরে ব্যাটিংয়ে এসে ১৯ বলে ৪ চার ৪ ছক্কায় ৪৯ রানে বুম বুম রূপটাও যে দেখিয়ে দিয়েছেন আফ্রিদি! শহীদ আফ্রিদির ৪ ওভার বোলিংটাও যে ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে (২/২৭)। ইনিংসের মাঝপথে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে নামিয়ে এনেছে যে এই বোলার। এমন শুরুতে টি-২০ বিশ্বকাপ জমিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান, আনপ্রেডিক্টেবল দলের পরিচয়টা আসলেই যে তাদের মানায়। অন্যদিকে, সুপার টেনের প্রথম ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরে সেমি’র পথ কঠিন হয়ে পড়া বাংলাদেশ অধিনায়ক এখন গ্রুপটিকে গ্রুপ অব ডেথ মানছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ২০১/৫ (২০.০ ওভারে)
বাংলাদেশ : ১৪৬/৬ (২০.০ ওভারে)
ফল : পাকিস্তান ৫৫ রানে জয়ী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Saiful ১৭ মার্চ, ২০১৬, ১১:৫৭ এএম says : 1
সৌম্য সরকার এবং এনামুল হক বিজয় এর টি২০ ক্যারিয়ার । সৌম্য সরকার । ম্যাচঃ ১৬ রানঃ ২৭১ সর্ব্বোচঃ ৪৮ এভারেজঃ ১৬.৯৩ স্ট্রাইক রেটঃ ১১৬.৮১ ৪ এর মারঃ ৩৪ ৬ এর মারঃ ৮ এনামুল হক বিজয় । ম্যাচঃ ১৩ রানঃ ৩৫৫ সর্ব্বোচঃ ৫৮ এভারেজঃ ৩২.২৭ স্ট্রাইক রেটঃ ১১৭.৯৪ ৪ এর মারঃ ৩৮ ৬ এর মারঃ ১২ মজার বেপার হচ্ছে গত টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্ব্বোচ রান সংগ্রহকারী বিজয় দলে নাই হাহাহাঃ বিজয় খেলা পারে না বিজয় হবে বিজয়ের বিশ্বাস না হলে ক্রিকইনফো তে দেখেন
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন