শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ব্যর্থ

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারনে মিয়ানমারও বাংলাদেশকে নিয়ে দুঃসাহস দেখাতে স্পর্ধা দেখাচ্ছে। বারবার মিয়ানমার সরকারিভাবে তাদের ওয়েবসাইটে সেদেশের মানচিত্রে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নিজের অংশ হিসেবে দেখাচ্ছে। সেদেশের আরাকান রাজ্যের দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অধিবাসীকে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করেছে। এখন সেখানকার সংখ্যালঘু উপজাতিদেরও তাড়িয়ে ঢুকিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে। এ নিয়ে জাতির ঘাড়ে জোর করে চেপে বসা আওয়ামী দানব সরকার কিছু করতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক, বরং মিয়ানমারের বাংলাদেশ-বিরোধী নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শেখ হাসিনা। সারাবিশ্ব যখন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছিলো সেসময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। গতকাল (শনিবার) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হচ্ছে না কেবলমাত্র মিড নাইট সরকারের নতজানু নীতির কারণে। বাংলাদেশের ভূখন্ডকে মিয়ানমার তাদের দেশের অংশ করে নিতে চাইবে আর আমরা কিছুই করবো না! শুধু দূতকে ডেকে নিয়ে প্রতিবাদ করলেই সব শেষ হয়ে যায় না। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত। বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা একবার না কয়েকবার একই ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেও মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন, জনসংখ্যা মন্ত্রণালয়সহ সে দেশের অন্তত: তিনটি ওয়েবসাইটের মানচিত্রে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে তাদের দেশের অংশ হিসাবে দেখানো হয়। তখনও এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার কেবল নামকাওয়াস্তে প্রতিবাদ করে চুপ হয়ে যায়।
সরকারের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সরকার স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব হেফাজত করতে ব্যর্থ হচ্ছে, কারণ তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনা। দেশ ও মানুষের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মতো জনগণের ভোট ডাকাতি করে তারা মসনদ দখল করেছে। দেশ গোল্লায় যায় যাক তাতে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। তারা সারাক্ষণ ব্যস্ত কিভাবে দেশের জনগণকে দমন করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা যায়। শেখ হাসিনার নির্দেশে সমস্ত আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ একটাই, তাহলো আওয়ামী লীগ বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দেয়া, গ্রেফতার করা, জেলে ভরা, গুম-খুন ও বিচার-বহির্ভূত হত্যা করা। কিন্তু এভাবে কি ক্ষমতায় থাকা যাবে? কখনোই যাবে না।
হরিপুরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্ত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় কি চলছে? সেখানে বিজিবির গুলিতে নিহতদের পরিবারে যখন শোকের মাতম চলছে তখন নিহতদের নামে আবার মামলা দেয়া হয়েছে। হরিপুর উপজেলা বহরমপুর ও রুহিয়া গ্রামের ২৭২ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে বিজিবি। একটি মামলার এজাহারে বিজিবি’র গুলিতে নিহত শিক্ষক নবাব আলী ও কৃষক সাদেক আলী নামও রয়েছে। ভয়ে আতংকে এখন পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। গ্রামবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে অস্থিরতা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সীমান্ত পাহারা দেয়ার কাজ বিজিবি’র। কিন্তু তারা সীমান্ত পাহারা না দিয়ে বিএসএফ-এর মতোই বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। প্রায়দিনই বিএসএফ বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করছে, অথচ বিজিবি এ বিষয়ে নির্বিকার। বাংলাদেশীদের হত্যা করতে তারা কুন্ঠাবোধ করছে না।
রিজভী বলেন, সরকারকে সহায়তা করার জন্যই পুলিশ র‌্যাবের মতো বিজিবি-ও সেই অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছিল। গণবিচ্ছিন্ন এই অবৈধ সরকারও বেপরোয়া আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কিছু বলার নৈতিকতা হারিয়ে তাদেরকেই ক্ষমতা রক্ষার শিখন্ডি মনে করছে। ফলে তারা নিয়ন্ত্রণহীন। ফলে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বেআইনি কর্মকান্ড চালাতে উৎসাহী হচ্ছে। সেজন্য তারা অনাচার থেকে ‘ইনডেমনিটি’ পাচ্ছে। তারা মনে করছে কোন কাজের জন্যই তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে না। মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের যেন সরকারের প্রধান কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রশ্ন হলো, সামান্য দুটি গরুর জন্য বিজিবি গুলি করে চারজন নিরীহ গ্রামবাসীকে কি করে হত্যা করতে পারে? আবার কি করে মৃত ব্যক্তির নামে মামলা দিতে পারে? তারা তো জনগণের পরিশ্রমলব্ধ অর্থে বেতন-ভাতা নিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। রক্ষকরাই এখন ভক্ষক হয়ে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি কবি আল মাহমুদের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ড. সাহিদা রফিক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমূখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন