চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিএনপির তৃণমূলে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা এখন দারুণ উচ্ছ¡সিত। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী এবং সমমনা পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উল্লসিত। বেগম জিয়া দেশে ফিরেই জামিন পেয়েছেন- তার আগে নির্বাচন কমিশনের সাথে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংলাপও করেছেন দলের নেতারা। এ দু’টি ইতিবাচক ঘটনায় এখন চাঙা চট্টগ্রাম বিএনপির তৃণমূল। চার চারটি মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে নানা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর উত্তেজনার মধ্যে বুধবার দেশে ফিরেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে দেশনেত্রী দেশের মাটিতে নামতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ততক্ষণে রাজধানীর রাজপথে লাখো মানুষ। দেশের মাটিতে নেমেই লাখো জনতার শুভেচ্ছায় সিক্ত হন আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়াকে বরণ করে নিতে রাজপথে জনতার উত্তাল ঢেউ বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে দারুণভাবে। এখানকার অনেক নেতাকর্মী তাদের প্রিয় নেত্রীকে বরণ করতে ঢাকায় যান।
নানা ক‚টকৌশল, অপপ্রচার, গ্রেফতারী পরোয়ানা, গ্রেফতারের আশঙ্কাসহ নানা ভয়ভীতিকে পায়ে দলে জনতার নেত্রী জনতার মাঝে ফিরে আসাকে বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট বলছেন এখানকার তৃণমূলের নেতারা। টানা ৯৪ দিন চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থান শেষে দেশে ফেরার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গতকাল আদালতে হাজির হয়েছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিনও নিয়েছেন তিনি। কয়েকদিন আগেই নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ করেছেন বিএনপির নেতারা। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির জোরালো আপত্তি ছিল। তবে সংলাপে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলের শীর্ষ নেতারা। সংলাপের পর থেকে বিএনপির আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা আরও বেশি নিশ্চিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। তারা বলছেন, জনগণকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যায় না-তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। খালেদা জিয়াকে বরণ করতে রাস্তায় নেমে জনতা জানিয়ে দিয়েছে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে। খাঁচায় বন্দি গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে খালেদা জিয়ার ডাকে জনতা রাজপথে নামতে প্রস্তুত তার বারতা তারা দিয়ে রেখেছেন।
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তি রাজনৈতিক সিডর কাটিয়ে উঠার আগেই বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে অভাবনীয় পরাজয় এবং এরপর থেকে রাষ্ট্রীয় জুলুম নির্যাতনে দেশের অন্য এলাকার মতো চট্টগ্রামের বিএনপিও কাহিল। হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়ি ঘরছাড়া। মামলা, হুলিয়া নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অগণিত নেতাকর্মী। এতকিছুর পরও তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে রাজপথে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় গত কয়েকদিনের এসব ঘটনায় আরও বেশি সাহসী ও আশাবাদি হয়ে উঠছে এ অঞ্চলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বীরের বেশে দেশে ফিরে জনগণকে যে বার্তা দিয়েছেন তাতে জুলুম নির্যাতন আর দুঃশাসনে অতিষ্ঠ জনতা নতুন করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। সাধারণ মানুষও সরকারি অপপ্রচারে কিছুটা বিভ্রান্ত ছিল। কিন্তু বেগম জিয়া দেশে ফেরায় সকল বিভ্রান্তি কেটে গেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, সরকারি তরফে নানা অপপ্রচার কূটকৌশল আর ষড়যন্ত্রের মধ্যে আপোসহীন নেত্রী দেশে ফিরে এসে জনতার ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় সারাদেশের মত চট্টগ্রামের সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা উৎফুল্ল-উল্লসিত। বেগম খালেদা জিয়াকে বরণ করে নিতে রাস্তায় জনতার ঢল আবারও প্রমাণ করেছে বিএনপি এদেশের গণমানুষের দল, গণমানুষের আস্থার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ বিএনপিকেই বেছে নেবে। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরায় চট্টগ্রাম বিএনপি আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তি নিয়ে রাজপথে নামবে। তিনি বলেন, জুলুম নির্যাতন চালিয়ে জনগণকে বেশিদিন ঘরে আটকে রাখা যাবেনা। আগামী দিনে রাজপথে আন্দোলন ও নির্বাচনে বিএনপি জনগণকে নিয়ে মাঠে নামবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ঘটনায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে এ অঞ্চলের বিএনপির সর্বস্তরের সমর্থকেরা উল্লসিত উজ্জীবিত। বিএনপির সাথে ইসির সংলাপের পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে আমরা আরও আশাবাদী। আগামী দিনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে গণআন্দোলনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা জোর প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে তারা বিএনপির পক্ষেই রায় দেবে। কারণ জনগণ এ দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়, তারা পরিবর্তন চায়।
প্রবীণ বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে সরকার যে ভীতিকর ও শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল জনতার বাঁধভাঙা জোয়ারে তা মুহূর্তে উড়ে গেছে। জনতার নেত্রী জনতার ভালবাসায় অভিসিক্ত হয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে জনগণ সরকারকে একটি বার্তা দিয়েছে। জনগণ দুঃশাসনের পক্ষে নয়, গণতন্ত্রের পক্ষে। বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের জনতার এ ম্যাসেজ বুঝতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া যে সাহস নিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপির নেতৃত্বকেও সে সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। নেতারা রাস্তায় নামলে জনতা রাস্তায় নামবে। তিনি বলেন, উন্নয়নের গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দি করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে গণতন্ত্র রক্ষা তথা স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হেফাজত করতে আগামী দিনগুলোতে বিএনপি নেতাদের আরও বেশি সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
পেশাজীবী নেতা ডাঃ খুরশিদ জামিল চৌধুরী বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা অপপ্রচার চালিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া পালিয়ে গেছেন। তিনি আর দেশে ফিরবেন না। তিনি বিদেশে থাকতেই তার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে চারটি মামলায় হুলিয়া জারি হয়। এতসব ষড়যন্ত্র চক্রান্ত আর ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তিনি বীরের বেশে দেশে ফিরে প্রমাণ করেছেন তিনি এদেশের মাটি ও মানুষের নেত্রী। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে অতীতের সকল সংকটে তিনি আপোসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার সাহসী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এদেশের নির্যাতিত মজলুম মানুষের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। ঢাকার রাজপথে জনতার ঢল প্রমাণ করে বেগম খালেদা জিয়াই তাদের আস্থার প্রতীক।
বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, দেশনেত্রীকে বরণ করতে ঢাকার রাজপথে জনতার ঢল দেখে আমি অভিভূত হয়েছি। সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরে জনতার যে ভালবাসা পেয়েছেন তাতে প্রমাণ হয় তিনি এখনো এদেশের জনপ্রিয় নেত্রী। তার দল বিএনপি গণমানুষের আস্থার প্রতীক। তার দেশে ফেরায় চট্টগ্রাম শুধু নয়, সারাদেশের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। আগামী দিনে তার নেতৃত্বে রাজপথের আন্দোলন ও নির্বাচনে জনতা কাতারবন্দি হবে তা এখন স্পষ্ট।
নগর যুবদলের সভাপতি কাজী বেলাল উদ্দিন বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন এ খবর পেয়েই রাজপথে জনতার ঢল নামে। গণতন্ত্র রক্ষায় খালেদা জিয়া যখন ডাক দেবেন তখন জনতা জীবনবাজি রেখে রাজপথে নামবেন এমন বার্তা তারা দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, গত ৯ বছর জুলুম নির্যাতন, হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলার মধ্যেও বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে আগামী দিনে তারা জীবনবাজি রেখে রাস্তায় নামবে।
নগর মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফাতেমা বাদশা বলেন, জোর করে ক্ষমতা দখলকারী এ সরকারের সাথে গণমানুষের কোন সম্পর্ক নেই। এটা প্রমাণ করতেই বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার দিন রাস্তায় জনতার ঢল নেমেছে। এর মধ্যদিয়ে জনগণ সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করেছে। বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরে এসে যে বার্তা দিয়েছেন তাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এদেশের সাধারণ মানুষও আশাবাদী হয়ে উঠেছে। বিএনপি এদেশের জনপ্রিয় দল এবং বেগম খালেদা জিয়া জনপ্রিয় নেত্রী উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপিকেই বেছে নেবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন