পথে পথে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলা ও বাধা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াতে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আজ রবিবার তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন। দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকে ঢাকা থেকে ফেনী পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে জড়ো হন বিএনপি নেতা-কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু সরকার দলীয় অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীদের গাড়ি বহরে হামলা চালায়। তাদের হামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ হামলায় কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি ও গণপরিবহন ভাংচুর করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবির সফর নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। কারো কারো মতে, এটি বিএনপির নির্বাচন পূর্ব শো-ডাউন। মূলত, বিএনপির নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতেই চেয়ারপার্সন দীর্ঘ সড়কপথে টেকনাফে যাচ্ছেন। আবার কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বিদেশ সফরকালে সরকারদলীয় তথা আওয়ামীলীগের হাই প্রোফাইলের অনেক নেতা বিভিন্নœ ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তখন কেউ কেউ বলেছিলেন, খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের পাশে না দাড়িয়ে বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করেছেন। খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের ওইসব নেতিবাচক মন্তব্যের জবাব হয়েছে। বিএনপি সমর্থকরা বলেছেন, সঠিক সময়েই খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেছেন। তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়াতে সরকারকে সব সময় চাপ দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলে আসছেন।
খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজারের পথে প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার জুড়ে বিভিন্নœ স্থানে তোড়ন নির্মাণ করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তার মতে, খালেদা জিয়ার এ সফরের মধ্য দিয়ে পূর্ব-দক্ষিনাাঞ্চলসহ সব এলাকার নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠবে। রাজনীতির উপযুক্ত পরিবেশ কিংবা প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে পলাতক কিংবা ঝিমিয়ে পড়া কর্মীরা সরব হয়ে উঠবে। কাজেই রাজনীতির বিচারে খালেদা জিয়ার এ সফরের গুরুত্ব অনেক।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়া তার গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে গাড়ী বহর নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। রবিবার খালেদা জিয়া কক্সবাজার পৌঁছবেন। দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী,লক্ষ্মীপুর,চাঁদপুরসহ পথের বিভিন্নস্থানে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে স্বাগত জানান।
গুলশান থেকে বের হওয়ার পর গুলিস্তানের মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার অতিক্রমের পর কাঁচপুর ব্রিজের আগে বিএনপি নেত্রীর এ বিশাল গাড়ী বহর প্রথম যানজটে কিছু সময় আটকে পড়ে। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রিয় দেশনেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি ও এর সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তার দু’ধারে জড়ো হন। পথে পথে খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। খালেদা জিয়াকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শুভেচ্ছা জানায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেন তারা। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ওই পথে যাওয়ার সময় শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের প্ল্যাকার্ড, দলীয় প্রতীক ধানের শীষ, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রঙিন ছবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার প্রদর্শন করেন। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি কাঁচপুর অতিক্রম করেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম বলেন, এতদিন আমরা মিছিল-মিটিং কিছুই করতে পারিনি। আজ খালেদা জিয়ার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সফর উপলক্ষে আমরা মহাসড়কে অবস্থান নিতে পেরেছি। তাই এই সফর আমাদের উজ্জীবিত করেছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বলেন, আমরা আজ খালেদা জিয়ার সফর উপলক্ষে সবাই একত্রিত হয়েছি। আমরা অনুপ্রাণিত, এই ঘটনায় আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম ত্বরান্বিত হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যাওয়ার পথে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে নেতাকর্মীদের জমায়েতের উপর সরকারী দল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বাধা ও হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ইনকিলাবকে বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণভয়ে আশ্রয় নেতা অসহায় রোহিঙ্গাদের খোঁজ-খবর নিতে ও তাদের সহযোগিতা করতে আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কক্সবাজার যাচ্ছেন। তার সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। এটা অরাজনৈতিক একটি মানবিক কর্মসূচি। অথচ বিএনপি ও খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকার আমাদের এ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে। ম্যাডামকে শুভেচ্ছা জানাতে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের উপর সরকারের গুণ্ডা বাহিনী হামলা চালাচ্ছে। শাহজাহান অভিযোগ করেন, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর ছাগলনাইয়া, নোয়াখালীর সেবার হাট ও চট্টগ্রামের কক্সবাজারে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫জন নেতাকর্মী। আমরা তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে তারা।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সুশৃঙ্খল যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাদের নেত্রীকে স্বাগত জানাতে আসা দলীয় নেতা-কর্মীদের বাধা দেয়। এ্যানি আরো বলেন, বিএনপির জনস্রোত ঠেকাতে পথে পথে কৃত্রিম যানজট কোথাও কোথাও একেবারেই রাস্তায় ব্লক সৃষ্টি করেও সন্ত্রাসীরা আমাদের সফর ঠেকাতে পারবেনা। পুলিশ কোথাও কোথাও আমাদের সহযোগিতা করেছে। যেখানে পুলিশের সহযোগিতা পাইনি সেখানেই হামলা হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যাওয়ার আগেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছিলাম। এসময় দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাড়ি আটকে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা অবরোধ মোকাবেলা করেন।
এদিকে, কক্সবাজার সফরের কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর দুপুরে ফেনী সার্কিট হাউজে যাত্রা বিরতি করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তার সফরসঙ্গীরা। বিকেলে যাত্রা শুরু করে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন। আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দিয়ে বিকালে কক্সবাজার সার্কিট হাউজে পৌঁছবেন এবং সেখানে রাতে অবস্থান করবেন তিনি। কাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন।
এরপর আবার কক্সবাজার সার্কিট হাউজে বিশ্রাম শেষে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন খালেদা জিয়া। সেখানে রাতে থেকে ৩১ অক্টোবর ফেনী হয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন বিএনপি প্রধান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন