(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ইয়াতিম-অসহায়দের প্রতি দয়া : রাসুল (সা.) ইয়াতিম ও অসহায়দের প্রতি অপরিসীম দয়া-অনুকম্পা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করতেন। বহু অনাথের মুখে তিনি মধুর হাসি ফুটিয়েছেন। একবার ঈদগাহে যাওয়ার পথে ইয়াতিম এক বাচ্চাকে কাঁদতে দেখে প্রিয় নবীজি তাকে আদর দিয়ে দুঃখ-দুর্দশার কথা জিজ্ঞেস করলেন। সব শুনে রাসুল (সা.) তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে এলেন। গোসল করিয়ে সুন্দর কাপড় পরিয়ে ঈদগাহে নিয়ে গেলেন। অনন্তর তাকে বললেন, হে বৎস! আমি যদি তোমার বাবা হই, আয়শা যদি তোমার মা হয় আর ফাতেমা যদি তোমার বোন হয়, তাহলে কি তুমি সন্তুষ্ট?’ ছেলেটি সমস্বরে জবাব দিলো, হ্যা, অবশ্যই। এবার তার রসনায় আনন্দের হাসি বিকশিত হলো।
অমুসলিমদের প্রতি সদাচার : রাসুল (সা.) মুসলমান এবং ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রতি যেরূপ সদাচারণের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতেন, তদ্র”প অমুসলিম বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও করতেন এবং সর্বদা তাদের প্রতি সৎ মনোভাব প্রকাশ করতেন। একবার এক ইহুদি আল্লাহর হাবিবকে মারতে এসে তার মেহমান বনে গেলো। রাতে রাসুল (সা.) যথাসাধ্য আপ্যায়ন করে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু শয়ন প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে ইহুদি লোকটি বিছানায় পায়খানা করে চলে গেলো। সকালে হুজুর (সা.) তার কোনো সন্ধান পেলেন না। রাসুল (সা.)- এর চেহারা মুবারক মলিন হয়ে গেলো। আফসোস আর আক্ষেপ করে বলতেছিলেন, ‘হায়! আমি বুঝি তার যথাসাধ্য আপ্যায়ন করতে পারিনি’। এমনিভাবে একবার এক বেদুঈন এসে প্রিয়নবী (সা.)- এর চাদর ধরে এতো জোরে টানতে লাগলো যে, গলায় ফাঁস লাগার উপক্রম হলো এবং জোর গলায় বলতে লাগলো, ‘হে মুহাম্মদ! আমাকে কিছু দাও। রাসুল (সা.) তখন তার দিকে ফিরে হেসে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিলেন। (বোখারি, মুসলিম)
জীবজন্তুর প্রতি সদাচার : প্রিয়নবী (সা.) শুধু মানুষের প্রতিই সদাচারণ করেছেন, এমন নয়। বরং তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্ট অন্যান্য প্রানী ও জীবজন্তুর প্রতিও অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গত সদাচারণ প্রদর্শন করতেন। একবার এক সফরে দুজন সাহাবি একটি পাখির বাসা থেকে দুটি পাখির ছানা নিয়ে এলেন। মা পাখিটি তার বাচ্চার সঙ্গে সঙ্গে করুণ সুরে মুক্তির আবেদন জানাতে লাগলো। প্রিয় নবীজি এ অবস্থা দেখে বললেন, ‘এ পাখি ধরে কেনো এই মা পাখিটাকে অধীর করে তুলেছো? বাচ্চা দুটি ছেড়ে দাও। উভয়ে বাচ্চা দুটি ছেড়ে দিলো। ( সিরাতুন্নবী: ৬/২৪১) বলা বাহুল্য, জীবজন্তুর ব্যাপারে হুজুর (সা.) উম্মতকে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছেন। জীবজন্তুর প্রতি দয়া, অনুগ্রহ, তাদের দানা-পানির ব্যবস্থা এবং ওগুলোকে সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট না দেয়ার হুকুম দিয়েছেন।
প্রিয়নবী (সা.) হলেন সর্বাধিক উদার ও দানশীল, সর্বাপেক্ষা সত্যবাদী, সমধিক অঙ্গীকার পালনকারী, সর্বাধিক ন¤্র-ভদ্র এবং বংশে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভ্রান্ত। সর্বোপরি, জীবন চলার পথে প্রতিটি বাঁকে বাঁকে পাবে তুমি নবীজীবনের উত্তম আদর্শ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন