১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। সমাবেশকে কেন্দ্র দলটির নেতাকর্মীদের মাঝেও বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। দীর্ঘদিন পর রাজধানীর এই সমাবেশ এবং সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শোনার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তারা। দুই বছর পর রাজধানীতে হতে যাওয়া এই সমাবেশকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও মনে করছেন দলের নেতারা। এর মাধ্যমে বড় ধরনের শোডাউন করে সরকারকে একটি বার্তা দিতে চায় বিএনপি। বিশেষ করে দলের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম-নির্যাতন, জেল, গুম-খুনের পরও দলটি যে মানুষের মাঝে জনপ্রিয় এবং আগামী নির্বাচনের বিষয়ে বার্তাও দিতে চায় তারা। এজন্য সমাবেশের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই তৎপর হয়ে উঠেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা। বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দিনরাত বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা মতবিনিময় সভা করছেন। ঢাকার আশপাশের জেলার নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এসব জেলায় গিয়ে সমন্বয় সভা করছেন, যোগাযোগ রাখছেন ফোনেও। সমাবেশকে সফল করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের জন্য তাদের কাজ করতে বলা হচ্ছে। এ উপলক্ষে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও হয়ে উঠেছে বেশ সরগরম।
গত ১৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর এলাকায় লাখ লাখ মানুষের জমায়েত এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়ার সময় ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়কে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এমনিতেই চাঙ্গা করে তুলেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। সাম্প্রতিক সময়ে দুটি সফল কর্মসূচির পর ঢাকার এই সমাবেশকে একটি মাইলফলক হিসেবেই দেখাতে চায় বিএনপি। বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ সকল অঙ্গসংগঠনের প্রস্তুতি চলছে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত থাকার। তাদের সাথে যোগ দিবেন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী। এজন্য গত কয়েকদিন ধরেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক করছে একের পর এক দল। গতকালও সকাল ১০টায় শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, বিকেল তিনটায় ঢাকা মহানগর উত্তর, সাড়ে ৪টায় ঢাকাস্থ জাতীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছেন শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান্না। ব্যাপক লোক সমাগমের লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা সেরেছে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও মহিলা দলও। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মাঠের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হবে। এ ছাড়া সরকারও বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দিয়ে ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ ফিরিয়ে আনবে। তবে কেবল নেতাকর্মীই নয় সমাবেশে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আশা করছেন তারা। কাজ করতে গিয়ে তেমন সাড়াও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা। ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় মতবিনিময় সভা করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করেছি। সাধারণ মানুষের মাঝেও ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। অনেকেই নিজ উদ্যোগে বিএনপির সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শোনার জন্যও সমাবেশে আসবেন বলে তারা জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য সমাবেশ বিষয়ে বলছেন, বিএনপির সমাবেশে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হয়। এখানে আয়োজন করার কিছু নেই। সরকার বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা থেকে বিরত রেখেছে। এর ফলে মানুষও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের নিজেদের বঞ্চনা বোধ থেকে এবার সমাবেশে জনগণের ঢল নামবে। এ ছাড়া সরকার আবারও অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে কি না, এটা নিয়েও দেশের জনগণ অনেক বেশি উদ্বিগ্ন রয়েছে। এ কারণেও ব্যাপক জনসমাবেশ হবে। ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ না এলেও এবার সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অন্য সব সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার যদি অগণতান্ত্রিক কোনো কার্যকলাপ না করে, তাহলে বড় ধরনের লোক সমাগম হবে। সরকার কোনো শর্ত দিয়ে সমাবেশ সীমাবদ্ধ করবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে চায় না। সরকার বিরোধী দল দমনে যেসব কর্মকাণ্ড করে, তা গণতান্ত্রিক রীতির অংশ হতে পারে না। সরকারের এসব আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত এবং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সমাবেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। সরকারের শোষণ, নিপীড়নের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এ কারণে মানুষ বিএনপির সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তো থাকবেই, তবে জনগণের উপস্থিতি অন্য সব সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
প্রতিটি সমাবেশে বিপুল জনসমাবেশ হয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমাবেশের জন্য স্বাভাবিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এটা মূলত ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সমাবেশ, অন্য কিছু না। এই সরকার আসার পর থেকে যেসব সমাবেশ করা হয়েছে, প্রায় প্রতিটিতেই বিপুল জনসমাগম হয়েছে। এবারও তেমনই হবে।
এদিকে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট আবদুল সালাম আজাদ, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম রাসেল, সাইফুল ইসলাম পটু, উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, আহসানউল্লাহ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান ফিরোজ, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, নুরুল ইসলাম নয়ন, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ। এসময় মির্জা আব্বাস বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা করতে আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা কামনা করবো তারা যেন কোনো রকমের উস্কানিমূলক কার্যক্রম না করেন এবং আমাদেরকে সহযোগিতা করেন। আমরা সরকারের কাছ থেকে রাজনৈতিক আচরণ আশা করবো। একই সঙ্গে আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ সকলের সহযোগিতা চাইব। যাতে জনগণের মত আমরা নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারি। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন সরকার কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করলে ‘ব্যাপক লোকসমাগম’ ঘটবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন