শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ হবে জনসমুদ্র

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের মহাসমাবেশে ভাষণ দেবেন খালেদা জিয়া

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর রাজধানীতে বড় ধরণের জনসমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আজকের সমাবেশ প্রায় চার বছর পর। রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা থাকার পর ফের সভা-সমাবেশের কর্মসূচি শুরু হওয়ায় চাঙ্গা হয়ে ওঠেছেন দলের নেতাকর্মীরা। আর সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির দুটি সফল কর্মসূচি আরও উজ্জীবিত করে তুলেছে তাদের। ফলে আজকে রাজধানীর সোহরওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সমাবেশকে দেশের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা। আজ দুপুর ২টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশে নেতাকর্মীসহ জনগণের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও। গণসমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই সমাবেশ শুধু জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালনই নয়, আমরা মনে করি, এই গণসমাবেশ থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে জাতি যে বার্তা পাবে, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
এই সমাবেশকে স্মরণকালের সেরা সমাবেশে রূপদানের জন্য প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছে বিএনপিসহ এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজধানীসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হয়ে সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরের কয়েক হাজার মানুষ রাজধানীতে এসে উপস্থিতও হয়েছেন। গতকাল রাত থেকেই সমাবেশ স্থলে উপস্থিত ছিলেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। সেখানে তারা সমাবেশের জন্য স্টেজ নির্মানসহ অন্যান্য প্রস্তুতি কাজে অংশগ্রহণ করেন এবং নিরাপত্তার জন্য নিজেদের উদ্যোগেই কাজ করেন। তাদের উপস্থিতি দেখে কেউ কেউ মন্তব্য করে ফেলেন, মূল সমাবেশের আগে রাতেই এতো মানুষের উপস্থিতিতে ছোট-খাটো সমাবেশও হয়ে গেছে। আজও সকাল থেকে আরও কয়েক লাখ মানুষের গন্তব্য থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার নিয়ে সমাবেশ স্থলে উপস্থিত হয়ে তারা সরকারের চলমান জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুনসহ অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন। কেবল বিএনপি নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এর মাধ্যমে বিএনপির জনপ্রিয়তা সম্পর্কে সরকারকে বার্তাও দিতে চায় দলটি।
গত ১৮ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার দিনে বিমানবন্দর এলাকায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি দেখে চাঙ্গা হয়ে ওঠে দলের নেতাকর্মীরা। এর পরই বেগম খালেদা জিয়া কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়ার সময় ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মহাসড়কের দুইপাশেই লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি রাজনীতিতে নতুন বার্তা দেয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীতে বড় ধরণের সভা-সমাবেশ করতে না পারায় কিছুটা অতৃপ্তিতে ভুগছিলেন নেতাকর্মীরা। কিন্তু ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সেই সমাবেশের ঘোষণা আসার পর থেকেই উজ্জীবিত ও চাঙ্গা নেতাকর্মীরা এবার ঢাকাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, উপস্থিতির দিক দিয়ে আজকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশকে স্মরণকালের সেরা সমাবেশে পরিণত করতে চান তারা। এজন্য সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা কয়েক দফা প্রস্তুতি সভা করেছে। পৃথকভাবে প্রস্তুতি সভা করেছে, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, কৃষকদলসহ সকল অঙ্গসংগঠনই। এসব সংগঠনের নেতারা সকলের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষকেও এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দেন। এজন্য ঢাকা মহানগরের নেতারা বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েও কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা রাজধানীর আশাপাশের জেলাগুলো থেকেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি আশা করছেন। জানা যায়, আজকের এই সমাবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, কৃষক দলসহ সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের সাথে যোগ দিবেন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী। এজন্য গত কয়েকদিন এসব জেলার নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েকদফা বৈঠকও করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় নেতারা এসব জেলায় সমন্বয় ও মতবিনিময় সভাও করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য সমাবেশ বিষয়ে বলছেন, বিএনপির সমাবেশে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ হয়। এখানে আয়োজন করার কিছু নেই। সরকার বিরোধী দলকে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা থেকে বিরত রেখেছে। এর ফলে মানুষও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের নিজেদের বঞ্চনা বোধ থেকে এবার সমাবেশে জনগণের ঢল নামবে। এ ছাড়া সরকার আবারও অন্য কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে কি না, এটা নিয়েও দেশের জনগণ অনেক বেশি উদ্বিগ্ন রয়েছে। এ কারণেও ব্যাপক জনসমাবেশ হবে। ঢাকার বাইরে থেকে মানুষ না এলেও এবার সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অন্য সব সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সমাবেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। সরকারের শোষণ, নিপীড়নের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এ কারণে মানুষ বিএনপির সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তো থাকবেই, তবে জনগণের উপস্থিতি অন্য সব সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
প্রতিটি সমাবেশে বিপুল জনসমাবেশ হয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার আসার পর থেকে যেসব সমাবেশ করা হয়েছে, প্রায় প্রতিটিতেই বিপুল জনসমাগম হয়েছে। এবারও তেমনই হবে।
সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার যদি অগণতান্ত্রিক কোনো কার্যকলাপ না করে, তাহলে বড় ধরনের লোক সমাগম হবে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, সরকারের দুঃশাসন, নিপীড়ণ নির্যাতনে অতিষ্ঠ জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই অনির্বাচিত সরকারকে ‘না’ বলতে তারা উদগ্রীব হয়ে আছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে জনতার যে জোয়ার সৃষ্টি হবে, তা ঠেকানোর সাধ্য কারো নাই।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিসাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, দীর্ঘদিন পর বেগম খালেদা জিয়া আমাদের নেতাকর্মীদের মাঝে সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। এটা নিয়ে এমনিতেই সবাই উজ্জীবিত। সকলেই আগ্রহভরে অপেক্ষা করছে তার কথা শোনার জন্য। ওই দিন বিএনপি নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সমর্থক ও সাধারণ মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত থাকবেন।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, ১২ নভেম্বরের সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। কারণ ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুম-নির্যাতনে সবাই এখন অতিষ্ঠ। তারা এ থেকে মুক্তি চায়। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ এবং গণতন্ত্রকামী মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল ও নির্ভরতার স্থান হচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। তাই সকলেই তার দিকে চেয়ে আছে, তার বক্তব্য শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন। বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ঢাকায় খালেদা জিয়ার সর্বশেষ জনসভা হয়েছিলেন ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে। আর সোহরাওয়ার্দীতে খালেদার সর্বশেষ সমাবেশ হয় ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি। তার মাত্র ১৫ দিন আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
মাহমুদ ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ২:০৮ এএম says : 0
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক মহাসমাবেশে জনতার যে জোয়ার সৃষ্টি হবে, তা ঠেকানোর সাধ্য কারো নাই।
Total Reply(0)
মোঃ আকবার আলী ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ১০:০৯ এএম says : 0
আমি মনে করি সরকার আজকের জনসভায় কোন রকম বাধা না দিয়ে দেখতে পারে বিএনপির জন সমর্থন কি আছে নাকি নেই। প্লীজ দয়া করে বাধা দিবেন্না।
Total Reply(0)
Kamrul Hasan Robel ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ১:২৩ পিএম says : 0
চলো চলো চলো ঢাকা চলো দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিশাল সমাবেশে চলো
Total Reply(0)
Jahid ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:০৮ পিএম says : 0
kono vadha e jonosomudro thamate parbe na
Total Reply(1)
SM Arif ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:২২ পিএম says : 4
Ami o tai mone kori are doa o kori.

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন