বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ইউনেস্কোর স্বীকৃতি উদযাপনে ১৮ নভেম্বর রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘নাগরিক সমাবেশ’ করবে আওয়ামী লীগ। নাগরিক সমাবেশের ঘোষণা হলেও মূলত ১৮ তারিখে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। দীর্ঘদিন পর গত ১২ নভেম্বর রবিবার একই ভেন্যুতে প্রতিপক্ষ বিএনপির ‘একটি সফল জনসভা’ই পূর্বনির্ধারিত নাগরিক সমাবেশ কার্যত জনসভার দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। আর ওইদিন নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের লক্ষে ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়া উপলক্ষে নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে কয়েক মাস পর তিনি প্রকাশ্য জনসভায় ভাষণ দেবেন। সূত্র জানিয়েছে, ওইদিন জাতির উদ্দেশে বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
এর আগে দীর্ঘ তিনমাসেরও বেশি সময় চিকিৎসা শেষে যুক্তরাজ্য থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার দিন বিমানবন্দরের সামনে শোডাউন করে বিএনপি। বিএনপির এমন কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কোনো কর্মসূচি দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচন সামনে রেখে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখা ও দলীয় শক্তি জানান দেয়ার লক্ষ্যেই ১৮ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের আড়ালে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সমাবেশ ঘিরে আলাদা আলাদা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সমাবেশে রাজধানীর সব থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা অংশ নেয়া ছাড়াও ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকেও সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীরা আসবেন। এতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন জানান, ওইদিন বেলা আড়াইটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ আয়োজনে নাগরিক কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পেশার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা বক্তব্য তুলে ধরবেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ইমেরিটাস আনিসুজ্জামান। পরিচালনা করবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী।
নাগরিক সমাবেশ আয়োজন করছে আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটি। গত সোমবার কমিটির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের বাসায় প্রস্তুতি বৈঠক হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ কমিটি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে প্রস্তুতি বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার রাজধানীর আজিমপুর পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে বর্ধিত সভা করবে। নাগরিক সমাবেশকে সফল করতে এসব প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ। তিনি জানান, আজকের প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। এছাড়া বিশেষ অতিথি থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী এড. কামরুল ইসলাম।
এদিকে, দীর্ঘ ১৯ মাস পর গত ১২ নভেম্বর প্রকাশ্যে কোনো ময়দানে জনসমাবেশ করে ক্ষমতাসীনদের রাজপথের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেদিন দলের জনসভাকে কেন্দ্র করে সরকারের নির্দেশে রাজধানীকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় বলে দলটির অভিযোগ। সারাদেশের সড়ক পরিবহণ এক অঘোষিত নির্দেশনায় বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি জনসভা স্থলের দিকে আসার সময় বিএনপি চেয়ারপারসনকে বাসের কৃত্রিম জট দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করা হয় বলেও খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে অভিযোগ করেন। এরপরও দলটির দাবি দেশের জনগণ সরকারের সকল বাধা উপেক্ষা করে ‘গণতন্ত্রের’ মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় জনসভা সফল করেছে। এজন্য স্বয়ং খালেদা জিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন।
এদিকে, শনিবারের নাগরিক সমাবেশ সফল করার জন্য আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলী এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের বৈঠক ডাকা হয়েছে। দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সূত্র বলছে, গত রবিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভার চেয়ে বড় জমায়েত দেখানোর চ্যালেঞ্জে পড়েছে আওয়ামী লীগ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কর্মসূচিটি ৮ নভেম্বর নির্ধারিত ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য এটি পেছানো হয়। অবশ্য গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সমাবেশ নিয়ে রাজনীতি করছি না। আমাদের সমাবেশ পাল্টাপাল্টি না।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে এতে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই। তবে আবার যদি সন্ত্রাস-নাশকতা করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও মোকাবিলা করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন