বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের আনন্দ শোভাযাত্রায় সবাইকে অংশ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১২টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর কেন্দ্রীয়ভাবে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে মিলিত হবে।ঢাকার বাইরে সব জেলা ও উপজেলায়ও আনন্দ শোভাযাত্রা ও সভা হবে।
শুক্রবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি ও বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যখন ঘোষণা করা হয়েছিল তখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান করেছি, একইভাবে এটা করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল বড় অর্জন, জাতির জন্য। দলমত নির্বিশেষে সবার জন্যই অর্জন। এখানো কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই, এটা বাংলাদেশের অর্জন। তিনি জানান, শনিবার বেলা ১২টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শোভাযাত্রা শুরু হবে। শোভাযাত্রাটি কলাবাগান-সায়েন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ গেইট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করবে। শোভাযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিশু-কিশোর, ক্রীড়া সংগঠক ও খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক, শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, এনজিও, স্কাউটস ও রোভার, পুলিশের সুসজ্জিত ঘোড়া, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুসজ্জিত বাদকদল, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষ, সংগঠন নিজ নিজ উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দীতে মিলিত হবেন। শোভাযাত্রার পর সভায় যোগ দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সবগুলো অর্থাৎ পাঁচটি গেইটই খোলা থাকবে। আর্চওয়ে পার হয়ে সবাইকে উদ্যানে প্রবেশ করতে হবে। আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে ঢাকা শহরকে প্রাণচাঞ্চল্যমুখর করা হবে। সবাই প্রায় একই সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে রওনা হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসবেন। তিনি জানান, ঢাকার বাইরে সব জেলা ও উপজেলায় একই ধরনের আনন্দ শোভাযাত্রা হবে। সেটা সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জেলা-উপজেলায় এই কর্মসূচি শুরু হবে। সুবিধাজনক সময়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওরা ১১ জন চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন করতে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শোভাযাত্রা সহকারে উপজেলা পর্যায়ে সবাই মিলিত হবেন। জেলা শহরে বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে এক জায়গায় মিলিত হয়ে অনুষ্ঠান হবে। শফিউল আলম বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সভায় বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। স্বাগত বক্তব্যের পর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ভাষণটি বাজানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লেজার শোর মাধ্যমে শেষ হবে আনন্দ শোভাযাত্রা পরবর্তী সভা। আনন্দ শোভাযাত্রা ও সভা আয়োজন নিয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে, ভিডিও কনফারেন্স করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। আশা করছি জেলা ও উপজেলার অনুষ্ঠানগুলো আরও কালারফুল হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,বিদেশে বাংলাদেশ মিশনেও সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ত করে একই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা, উপজেলাসহ ঢাকা মহানগরে কেন্দ্রীয়ভাবে যে গ্রোগ্রাম হচ্ছে তাতে সবাইকে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা আম দাওয়াতের মত দাওয়াত দিচ্ছি, সবাই আসতে পারেন এখানে। অংশগ্রহণ করার জন্য সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সরকারিভাবে কেন এই আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে, এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বিষয় জড়িত কি না- এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যখন ঘোষণা করা হয়েছিল তখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান করেছি, একইভাবে এটা করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বিশাল বড় অর্জন, জাতির জন্য। দলমত নির্বিশেষে সবার জন্যই অর্জন। এখানো কোনো রাজনৈতিক বিষয় নেই, এটা বাংলাদেশের অর্জন। শফিউল আলম বলেন, শোভাযাত্রা ও সভা আয়োজনে জননিরাপত্তা বিভাগ সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। আশা করছি কোনো অসুবিধা হবে না। শোভাযাত্রার সময় কোনো রাস্তা বন্ধ থাকবে কিনা, ঢাকা মহানগর পুলিশ তা জানিয়ে দেবে। একাত্তরের ৭ মার্চ যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে যুক্ত হয়েছে। ৭১ সালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) স্বাধীনতাকামী মানুষকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন