বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ইউনেস্কোর বিশ্ব স্বীকৃতি উদযাপনে নাগরিক সমাবেশের জন্য প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আশা, এ নাগরিক সমাবেশ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে। দল-মত নির্বিশেষে জনতার বিস্ফোরণ ঘটবে আজ শনিবারের এ নাগরিক সমাবেশে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বেলা আড়াইটায় এই নাগরিক নাগরিক সমাবেশ শুরু হবে জাতীয় সংগীত, ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ আর নির্মলেন্দু গুণের কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে।
সমাবেশ আয়োজনে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নাগরিক কমিটি। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলিতে সাজানো হয়েছে ডিজিটাল ব্যানার। সমাবেশ স্থলের আশপাশের এলাকায় রয়েছে আলোকসজ্জা। নাগরিক সমাবেশ সফল করতে ঢাকায় চলছে জোর মাইকিং প্রচারণা। এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সামাজিক, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
নাগরিক সমাবেশের জন্য ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য সামনে থাকছে আলাদা একটি মঞ্চ।
নাগরিক সমাবেশ সফল করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সম্পাদকমণ্ডলী, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে সভা করেছে। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও আলাদাভাবে প্রস্তুতি সভা করেছে।
নাগরিক সমাবেশের প্রস্তুতি দেখতে গতকাল শুক্রবার সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করেন। এ সময় কাদের বলেন, এই সমাবেশ হবে তাদের, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী, যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে।
সমাবেশের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এর সদস্যরা হলেন অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, ডা. সারওয়ার আলী, হারুন-অর-রশিদ ও অসীম কুমার উকিল।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন তিনি ঘোষণা দেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এরপর পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
বিভিন্ন দেশের আরও ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকেও গত মাসের শেষে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করে নেয় ইউনেস্কো।
ওবায়দুল কাদের জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ভাষণ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন ‘স্বাধীনতা- এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’। নাগরিক সমাবেশের মঞ্চে কবি সেই কবিতাটি পাঠ করবেন।
নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর রশিদ জানান, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও বাংলাদেশে ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্টিস কালদুল নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি ইউনেস্কোর প্রতিনিধির হাতে একটি ধন্যবাদ স্মারকও তুলে দেবেন।
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল জানান, আলোচনা ছাড়াও সমাবেশে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। নির্মলেন্দু গুণ ছাড়াও সেখানে আবৃত্তি করবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সমবেত সংগীতের পর শুরু হবে একক সংগীত। কিরণ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী চন্দনা মজুমদার লোক গান গাইবেন। রবীন্দ্র সংগীত শোনাবেন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শিল্পী সাজেদ আকবর। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় থাকবেন অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী।
ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, এ নাগরিক সমাবেশ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আমরা আশা করছি। চারদিকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। দল-মত নির্বিশেষে জনতার বিস্ফোরণ ঘটবে ১৮ তারিখের সমাবেশে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন