হিজরারা এ সমাজের মানুষ, তাদেরও সাধারণ মানুষের মতো মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু সামাজিকভাবে এরা বিভিন্নভাবে অবহেলার শিকার হয়ে সর্বক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। হিজরারা আর ১০ জন মানুষের মতো স্বাভাবিক মানুষ হলেও মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকেই এরা বঞ্চিত। সমাজের অনেকেই তাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করে। তাদের ছিল না কোন অধিকার। প্রকৃত শিক্ষার আলোয় শিক্ষিত হলে এরাও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। এই প্রত্যয় নিয়ে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হিজরাদের শিক্ষার আলোয় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদ পারভেজের দিক নির্দেশনায় ও সার্বিক পরিকল্পনায় এমনি মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই মাঝে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিজরাদের শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। হিজরাদের শিক্ষিত করার লক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে একটি সন্ধ্যাকালীন বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে আশার আলো নাম দিয়ে বিদ্যালয়টির উদ্বোধন করা হয়। স্থানীয় মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন জনৈক অধ্যাপকের একটি বাসার নিচ তলা ভাড়া নিয়ে আশার আলো বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সখিনা বেগম, আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক ও আলহাজ্ব জাকির হোসেন তালুকদারকে উপদেষ্টা করে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। উপজেলার হিজরাদের সংগঠন হিজরা উন্নয়ন সংগঠনের সভানেত্রী জ্যোৎসনার সার্বিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দফায় উপজেলার ৫১ জন হিজরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এরপরপরই শুরু হয় বিদ্যালয়টিতে হিজরাদের পাঠদান কার্যক্রম। গোলাম রব্বানী ও সাদিকুল ইসলা কে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা ২ ঘণ্টাব্যাপী ২টি ব্যাচে হিজরাদের পাঠদান চলে। এরই মাঝে গত ২৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার ২০১৬ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদ পারভেজ আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরাদের মাঝে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেন। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টির কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার ২০১৬ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির কমিউনিটি সেন্টারে এক হিজরা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহেদ পারভেজ বলেন, হিজরারা সমাজের বোঝা নয়, তারাও সমাজের মানুষ। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে হিজরাও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারবে। সমাবেশে পৌর মেয়র বেলাল হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম, উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ, সাংবাদিকসহ সুধীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সকলেই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার মহতি এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই সাথে বিদ্যালয়টি পরিচালনার জন্য সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ষ মো. গোলাম ফারুক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন