বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়াীলীগ সরকারের আমলেই হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর সব চেয়ে বেশী জুলুম নির্যাতন হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে রামুর ঘটনাতেও আওয়ামীলীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ জড়িত ছিল। নাসিরনগরেও তাদের উপজেলা চেয়ারম্যান সরাসরি জড়িত। পাগলাপীরের ঘটনায়ও উচ্চ পর্যায়ের নিরেপক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পুলিশ যেন অযথা কাউকে হয়রানী না করে।
তিনি গতকাল সোমবার সকাল ১১ টায় রংপুরের পাগলাপীর সলেয়াশা ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু পল্লীতে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির এবং গুলিতে নিহত চায়ের দোকানের কর্মচারী হাবিবুর রহমান হাবিবের বাড়ি পরিদর্শণ শেষে উপস্থিত সাংবাদিক ও জনতার উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন তিনি। পাগলাপীরের ঘটনায় বিএনপি থেকে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির ওপর এ ঘটনার জন্য দোষ চাপানো সর্বৈব মিথ্যা বানোয়াট ও হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত। রামুর ঘটনা দেশবাসী শুনেছেন, দেখেছেন। ইনভেস্টিগেশন দেখেছেন। আমাদেরও ইনভেস্টিগশন টিম সেখানে গিয়েছিল্। কি দেখে তারা সেখানে। আওয়ামীলীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবন্দ সেখানে ঘটনা ঘটিয়েছে। পাবনার ঘটনা কারা ঘটিয়েছে আপনারা জানেন। নাসিরনগরে তো প্রকাশ্যে সেখানকার যে উপজেলা চেয়ারম্যান তার নেতৃত্বে ঘটনা ঘটেছে। কোথায় এখানে বিএনপির নেতাদের পাচ্ছেন যে তারা এ ধরনের ঘটনার সাথে জড়িত। তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারকে অনুরোধ করবো তারা যেন খতিয়ানগুলো খুলে দেখেন। স্যাটিটিক্সগুলো দেখেন। সেই স্ট্যাটিটিক্সের মধ্যে দেখবেন। কোন সরকারের আমলে বেশী করে এই হিন্দু স¤প্রদায়রে উপর জুলুম নির্যাতন হয়েছে। সংখালঘু স¤প্রদায়ের উপর অত্যাচার হয়েছে। তাহলেই বোঝা যাবে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই সবচেয়ে বেশী এই স¤প্রদায়ের ওপর বেশী আঘাত এসেছে। তাদের ঘরবাড়ি ও সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধরনের কথাবার্তা বলে জাতীকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা দুরভিসন্ধিমুলক। আমরা মনে করি এটি শুধু রাজণৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা। কিন্তু বাংলার মানুষ তা হতে দেবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোন বিএনপি নেতা যদি এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকে। তাহলে তারা ব্যক্তিগত অপরাধ করেছেন। কি›ন্ত দল বা আমাদের নেতারা এবং সত্যিকার যারা আমাদের সামনের লোক তারা কখনই এ ধরনের কাজে জড়াবে না।
রোববারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন কর্মসূচি বাতিল নিয়ে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি গতকাল টিভি খুলে দেখলাম, সরকারের সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি বলছেন, আমার এখানে আসার কথা ছিল। আমি এখানে ভয়ে আসিনি। এটাও বলছেন, যারা এসব ঘটনায় জড়িত, তারা কিভাবে আসে। তিনি একটি বিশাল দলের সাধারণ সম্পাদক। আমি আশা করব তিনি দ্বায়িত্বশীল কথা বলবেন। আমি গতকালই আসতাম। আসিনি কারন, আমরা শিস্টাচারে বিশ্বাস করি। একটা রাজনৈতিক দল যেখানে প্রোগ্রাম করবে। সেখানে উপস্থিত হয়ে আমরা বাধা সৃষ্টি করতে পারি না। এটা আমরা সব সময় এড়িয়ে চলেছি। সেকারনে আজকে আমি আবার আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। তিনি আরও বলেন, আমি পারিবারিক কারনে আমার ফ্লাইট বাতিল করে পরের ফ্লাইটে এসেছি। ফলে সেতু মন্ত্রীর সাথে আমার একই ফ্লাটে আসা হয়নি। যাওয়ার পথে তার সাথে বিমানবন্দরে আমার কথা হয়েছে। কুশল বিনিময় হয়েছে।
নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এমন হামলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরাই চাচ্ছি। তার জন্য একটা সহায়ক সরকার চাচ্ছি। কিন্তু তারা এটা করতে চান না। তারা নির্বাচন না করেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান। ২০১৪ সালে যেভাবে তারা বিনা ভোটে ১৫৪ জনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন। এখনও আছেন। তারা আরেকটা সেধরনের নির্বাচন করতে চাইছেন। সেকারনে তাদের পক্ষ থেকে এ ধরনের দুঃখজনক প্রচারণা করছেন তারা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগ মিডিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রন করে রেখেছে। মানুষের বাক স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারনেই প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে দেশত্যাগ করতে হলো, পদত্যাগে বাধ্য করা হলো। সেটা আপনারা সবাই জানেন।
তিনি পাগলাপীরের ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত টিম গঠনের দাবি জানিয়ে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাদের এখানে। যে দুর্ঘটনা ঘটেছে এটা আমরা কোন ভাবেই কামনা করি না। আমাদের এই বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সব সময় একটা সুসম্পর্ক আছে। হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্টান আমরা একসাথে বাস করি। এই দুঃখজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা দুর্বৃত্ত। তারা খারাপ লোক। তারা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে। তারা আমাদের এই সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতিতে ফাটল ধরাতে চায়। এই ইস্যুগুলোতে কোন রাজনৈতিক ব্যাপার নেই। এই ইস্যুতে সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর মোকাবেলা করতে হবে। এই ধরনের যারা সা¤প্রদায়িকাতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হতেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছে। আমরা কোন মন্তব্য করতে চাই না। এভাবে জাতিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার করে টাকা, শাড়ি লুঙ্গি বিতরণ করেন।
এসময় তার সাথে ছিলেন বিএনপি রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক এমপি পরিতোষ চক্রববর্তী মোহাম্মদ আলী সরকার, রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, মহানগর সেক্রেটারী শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা সেক্রেটারী রইচ আহম্মেদ, জেলা যুবদল সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, মহানগর যুবদল সভাপতি মাহফুজ উন নবী ডন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আব্দুস সালাম, জেলা যুবদলী সেক্রেটারী সামসুল হক ঝন্টু, মহানগর যুবদল সেক্রেটারী লিটন পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক জহির আলম নয়ন, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মনিরুজ্জামান হিজবুল, মহাগর ছাত্রদল সভাপতি নুর হাসান সুমন, জেলা ছাত্রদল সেক্রেটারী শরীফ নওয়াজ জোহা, মহানগর সেক্রেটারী জাকারিয়া ইসলাম জিমসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন