শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দল গোছাচ্ছে বিএনপি

ফারুক হোসাইন : | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তৃণমূলে কোন্দল মেটানোর নির্দেশ : ব্যক্তি নয়, রাজনৈতিক স্বার্থ প্রাধান্য : সব পর্যায়ের নেতাদের সাথে বৈঠক করছেন বেগম জিয়া
২০১৪ সালের নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপির সাংগঠনিক দূর্বলতা চোখে পড়েছে সবার। অধিকাংশ জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিট কমিটিগুলোতে নিজস্ব লোককে প্রাধান্য দেওয়া এবং বিরোধ থাকায় কাজে আসেনি কিছুই। দলের নেতাকর্মী হওয়ার পরিবর্তে কথিত ভাইয়ের নেতাকর্মী হওয়ায় মাঠের আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ হয়েছে বৃহত্তম এই রাজনৈতিক দল। আর তাই গত এক বছর ধরেই দলকে পুনর্গঠনের কাজ করছেন শীর্ষ নেতারা। এবার দলের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী এবং গতিশীল করতে পকেট কমিটির (নিজস্ব লোক) পরিবর্তে ত্যাগীদের প্রাধান্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করে তিনি দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পছন্দের পরিবর্তে রাজনৈতিক স্বার্থকে বিবেচনার কথা বলেন।
লন্ডনে দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা শেষে গত ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের পক্ষ থেকে তার এই সফরকে কেবল চিকিৎসার জন্য বলা হলেও রাজনৈতিক তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তা বলে আসছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। হয়েছেও তাই। তিনি দেশে ফেরার পর থেকেই বদলে গেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। বিশেষ করে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে মামলা-হামলা, হত্যা, গুমের কারণে ঝিমিয়ে পড়েছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে লন্ডন থেকে ফেরার দিনে বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানালে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে নেতাকর্মীরা। এরপরই কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যান বেগম জিয়া। যাত্রাপথে মানুষের ঢল নামতে দেখে দলের চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাসের পালে নতুন হাওয়া লাগে। আর সর্বশেষ ১২ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিএনপির সমাবেশে সরকারের বাধা সত্তে¡ও জন¯্রােত অবাক করে দেয় তাদেরই। বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের এই সমর্থনকে কাজে লাগাতে তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে নিজেই কাজ করছেন বিএনপি প্রধান। এজন্য দলের সকল স্তরের নেতাদের সাথে বৈঠক করে দিচ্ছেন নানা দিক নির্দেশনা। নেতাদের মুখ থেকেও শুনছেন তাদের অভাব-অভিযোগ ও পরামর্শ। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি প্রধান ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের সাথে বৈঠক করেছেন তিনি। এসব বৈঠকে বেগম জিয়া নেতাদের নির্বাচনের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন রাখতে বলেছেন। একইসাথে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্যও প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। যারা আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চায়, তাদেরকে নিজ নিজ এলাকায় সভা, সমাবেশসহ সাধারণ মানুষের সাথে নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বেগম খালেদা জিয়া পর্যায়ক্রমে দলের সকল পর্যায়ের নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। সফর করবে বিভাগীয় শহরগুলোতে।
জানা যায়, গত শনিবার দলের ভাইস চেয়ারম্যানদের সাথে বৈঠকে বেগম জিয়া সবচেয়ে বেশি দল গোছানোর বিষয়ে জোর দিয়েছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান। জানা যায়, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চান খালেদা জিয়া। সেই জন্য প্রথমেই দলের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে সংগঠন গোছানোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এ জন্য ভাইস চেয়ারম্যানদের কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলের ও জোটের আগামী দিনের গতিপথ, আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জনমত গঠনে বিভাগীয় শহরগুলোতে খালেদা জিয়ার সফর ও বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে র‌্যালীসহ অন্যান্য কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। সংগঠনকে কিভাবে আরো গতিশীল করা যায় সে ব্যাপারে সবাই মতামত দিয়েছেন। সবার বক্তব্যেই প্রাধান্য পায় যেসব থানা, উপজেলা ও জেলাতে নিজেদের মধ্যে দ্ব›দ্ব-কোন্দল রয়েছে সেগুলো দ্রæত মিটিয়ে সংগঠনকে গতিশীল করার বিষয়টি। তারা বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে ফেলতেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে মজবুত করতে হবে। যেসব জেলা ও উপজেলায় এখনো নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি সেগুলো সম্পন্ন করার তাগিদও আসে আলোচনায়। একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বৈঠকে চেয়ারপারসন বলেছেন- আমরা আগামী নির্বাচনে যেতে চাই, তবে শেখ হাসিনার অধীনে নয়। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ থাকবে, তবে ইভিএম থাকবে না। একইভাবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের বৈঠকেও যতদ্রæত সম্ভব জেলা, উপজেলা এবং তৃণমূল কমিটিগুলো পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন নেতারা। এসময় চেয়ারপারসন যেসব জেলায় বিরোধ আছে তা চিহ্নিত করে শিগগিরই মীমাংসা করার জন্য বলেছেন। যারা দলে বিভেদ-বিশৃংখলা করবে তাদের বহিস্কার করা হবে বলে কড়া হুশিয়ারী দেন বেগম জিয়া। একইসাথে দলের নেতাদের পকেট কমিটি (নিজেদের লোক দিয়ে) না করারও কথা বলেছেন তিনি। দলের নেতৃত্ব পুনর্গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি আন্দোলনের জন্যও প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এর আগে গত ১৫ নভেম্বর ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠকেও বিএনপি চেয়ারপারসন জোটকে আরও শক্তিশালী করতে সকল নেতাদের কাজ করার নির্দেশনা দেন। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও একই বার্তা দেন বিএনপি প্রধান।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সবার লক্ষ্য এখন একটাই, ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে মুক্তি লাভ। এজন্য সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সকলকে পদের জন্য নয়, দলের জন্য কাজ করতে বলেছেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, দলের যেসব নেতাকর্মী আছেন তাদের এখন সময় কি পেলাম তা না ভেবে দলকে কি দিলাম সেটা ভাবার। কেউ যদি উপযুক্ত পদ নাও পায়, তাহলে যে যেই পদ পাবে সেটা নিয়েই যদি দলের জন্য কাজ করে তাহলে সফলতা আসবে।
ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন ম্যাডাম। সংগঠন শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে, এটি খুব সাধারণ বিষয়। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনই চূড়ান্ত। কিন্তু নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার, সেনা মোতায়েন, ইসির নিরপেক্ষতা, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ না হলে কিভাবে নির্বাচনে যাবে।
এদিকে পুরোদমে চলছে দল পুনর্গঠনের কাজ। নির্বাচনে ইতিবাচক ফল আনতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সব উইং। এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। দলের সূত্রে জানা যায়, ৭৫টি জেলা ও ৬টি বিভাগীয়সহ মোট ৮১টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে ইতোমধ্যে ৪৮টি কমিটি সম্পন্ন করা হয়েছে। বাকী কমিটিগুলো নির্বাচনের আগেই পুনগর্ঠন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পুনর্গঠনের দায়িত্বে থাকা এক নেতা। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোও পুনর্গঠন করা হচ্ছে। যেসব কমিটির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ করা হবে। বিশেষ করে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামের জন্য যুবদল, স্বেচ্ছাবেক দল ও ছাত্রদলকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বশির ২৫ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:১৭ এএম says : 7
শেষ হবে হবে কবে ? কবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিবে ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন