ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন লোকে লোকারণ্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আজ শনিবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঢাকায় আনন্দ শোভাযাত্রা করছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে নানা আয়োজন।
বেলা দেড়টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে উঠেছে লোকে লোকারণ্য। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পল্লি বিদ্যুৎ, সরকারি বিভিন্ন কলেজ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে ঢুকছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর থেকেই নানা আয়োজন থাকছে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে সরকারি চাকুরেদের সমাবেশে ভাষণ দেবেন।
রাজধানীর রাসেল স্কয়ার থেকে দুপুর ১২টার শোভাযাত্রা বের হওয়ার কথা ছিল। সেটা শুরু হয় ১২টা ২০ মিনিটে। তবে এর ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আশপাশের সড়কগুলোয় অবস্থান নিতে শুরু করেন।
বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারসহ শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি ২৭, স্কয়ার হাসপাতালের সামনে থেকে রাসেল স্কয়ারের দিকে যেতে থাকেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ঢাক-ঢোলসহ এসেছেন। তারা নানা রঙের টি-শার্ট পরেছেন। বহন করছেন ব্যানার।
প্রধানমন্ত্রীর এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী র্যালিতে অংশ নিচ্ছেন। তারা ধানমন্ডি ২৭ থেকে র্যালি নিয়ে রাসেল স্কয়ার হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত যাবেন।
সকালের দিকে শুক্রাবাদ, ধানমন্ডি ২৭, স্কয়ার হাসপাতালসংলগ্ন রাস্তাগুলোয় যানজট লক্ষ করা গেছে। রিকশাচালক নজরুল ইসলাম জানান, ধানমন্ডি ২৭ থেকে যাত্রী নিয়ে সামনে শুক্রাবাদ মোড় পর্যন্ত যেতে পারেননি তিনি। যাত্রী নেমে গেছেন। তবে কলাবাগান থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়কে যানজট ছিল না।
একই পথের মোটরসাইকেলচালক মো. ইমরান বলেন, মিরপুর ১ নম্বর থেকে বেলা ১১টার সময় বের হয়ে গাউছিয়া মার্কেটে নিজের দোকানে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যানজটের কারণে আসাদগেটে আটকে গেছেন।
ট্রাফিক বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, র্যালি যাবে। যানবাহন বন্ধ করা হয়নি। ধীরে ধীরে যানবাহন চলছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মসূচির কারণে দুপুর থেকে রাজধানীর কিছু রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগও নগরবাসীকে শোভাযাত্রার ‘রুট ম্যাপ’ দেখে চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে। দুপুরের দিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার পথ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
ডিএমপি থেকে পাওয়া ম্যাপ অনুযায়ী আজ আনন্দ শোভাযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শুরু হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রার রুট হলো বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর থেকে শুরু করে মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ার দিয়ে কলাবাগান হয়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে বাঁয়ে মোড় নিয়ে বাটা সিগন্যাল-কাঁটাবন ক্রসিং হয়ে শাহবাগ। শাহবাগ থেকে ডানে মোড় নিয়ে চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে ছবির হাট হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছবির হাট গেট (চারুকলার বিপরীতে), টিএসসি গেট (বাংলা একাডেমির বিপরীতে), কালীমন্দির গেট ও তিন নেতার মাজার গেট ব্যবহার করবেন অংশগ্রহণকারীরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়গুলো বিভিন্ন অধিদপ্তরকে একই নির্দেশ দিয়েছে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। গত ৩১ অক্টোবর এই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন