মাহফিল হলো মোমিনের সমাবেশ। ওয়াজ নসিহত মোমিনের ঈমান তাজা করে। মাহফিল সামাজিক ও ধর্মীয় স¤প্রীতি বৃদ্ধি করে। মাহফিলের মাধ্যমে অন্ধকারাচ্ছন্ন আত্মা গুলো আলোর দিশা পায়। মাহফিল থেকে মানুষ পরকালের পাথেয় সঞ্চয় করে। মাহফিলের উপদেশ শুনে গোমরাহি ছেড়ে কল্যাণের পথে আসে। অতীতের পাপ কাজের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে। দুর্বল ঈমানের অধিকারী মানুষ গুলো শক্তিশালী ঈমানদারে পরিণত হয়। তবে ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ উপদেশ প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু করণীয় পদ্ধতি রয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আপনি (হে নবী) আপনার প্রভূর পথে প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আহŸান করুণ, আপনি এমন এক পদ্ধতিতে যুক্তি তর্ক করুন যা সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা।’ (সূরা নাহল: ১২৫)।
মাহফিল আয়োজনের উদ্দেশ্যে হলো হেদায়াতের নসিহত বাণী সমূহ শুনানো। গোনাহ মাফের পথ দেখিয়ে দেয়া। জান্নাতের পথ দেখানো। মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসা। মন্দ কাজের প্রতি নিরুৎসাহী করা। কিন্তু কিছু কিছু ওয়ায়েজিন দেখা যায় মাহফিলে অপ্রাসঙ্গিক গল্প গুজব কাল্পনিক কাহিনী বলতে এবং শুনাতে বেশি পছন্দ করেন। কোনো কোনো ওয়ায়েজিন অপর গোষ্ঠী কিংবা ভিন্ন মতালম্বীদের গালমন্দও করেন। অনেক ওয়ায়েজিন তাঁর কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির ফলে এলাকার মধ্যে অনাকাংখিত ঘটনাও ঘটে। কোনো কোনো স্থানে মারামারি ও সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত সতর্কতা জারি করতে হয়। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘আল্লাহ পাক যদি চাইতেন তাহলে এরা কেউ তাঁর সাথে শিরক করতো না; আর আমি তোমাকে তাদের উপর পাহারাদার নিযুক্ত করে পাঠাইনি, তুমি তো তাদের উপর কোনো অবিভাবকও নও। তারা (মুসলমান ব্যতীত) আল্লাহ পাকের পরিবর্তে যাদের ডাকে তাদের তোমরা গালি গালাজ দিওনা, নইলে শক্রতার বশবর্তী হয়ে না জেনে আল্লাহ পাককেও তারা গালি দিবে, আমি প্রত্যেক স¤প্রদায়ের কাছেই তাদের নিজেদের কার্যকলাপ সুশোভন করে রেখেছি।’(সুরা আন আম: ১০৭-১০৮)। ‘আপনাকে যেমন করে আদেশ দেয়া হয়েছে আপনি তাতেই দৃঢ় থাকেন। আপনার সাথে যারা ফিরে এসেছে তারাও, তোমরা কখনও সীমালংগন করো না: এরা যা কিছু করছে আল্লাহ পাক অবশ্যই তার সব কিছু দেখছেন।’ (সূরা হুদ:১১)। ‘আপনার প্রভূ চাইলে দুনিয়ার সব মানুষকে তিনি একই উম্মত বানিয়ে দিতে পারতেন।’(সূরা হুদ: ১১৮)।
আজকাল মাহফিলের বক্তা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আয়োজকরা বক্তার জ্ঞান গরিমা তাকওয়া বিবেচনা না করে শুধু সুমধুর কন্ঠ স্বরকে বিবেচনা করেন। যার ফলে মাহফিল শেষে শ্রোতারা বক্তার আলোচ্য বিষয়বস্তুর গুরুত্বের চেয়ে কন্ঠ স্বরের প্রসংশা করতে থাকেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘এমন লোকের কথামত চলবেন না যার অন্তকরনকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি।’(সূরা কাহাফ:২৮)। বর্তমান সময়ে ওয়াজ মাহফিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো হাদিয়া প্রসঙ্গ। যে বক্তার হাদিয়া যতো বেশি। ঐ বক্তার ওয়াজ শুনার প্রতি শ্রোতারা ততো বেশি আগ্রহী। সাধারণ একটি ধারনা হলো যেহেতু বক্তার হাদিয়া বেশি। তাই তিনি খুব বড় আলেম। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘তোমরা তাঁর অনুসরণ করো, যে তোমাদের কাছে কোনো প্রকার প্রতিদান চায় না।’ (সূরা ইয়াসিন:২১)।
ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা একটি দ্বীনি দাওয়াতি কাজ। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘কেহ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে উহাতে তার অংশ থাকবে এবং কেহ কোন মন্দ কাজের সুপারিশ করলে উহাতে তার অংশ থাকবে।’ (সূরা নিসা: ৮৫)। ‘তোমাদের মধ্যে থেকে একটি দল থাকা উচিত যারা আহ্বান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দিবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।’ (সূরা আলে ইমরান:১০৪)। ‘কেউ কোন সৎ কাজ করলে সে তার দশগুন পাবে, আর কেউ যদি অসৎ কাজ করে তবে তাকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে আর তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।’ (সূরা আনআম: ১৬০)।
শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। এসব ওয়াজ মাহফিল হলো জান্নাতের বাগান সদৃশ। যেখানে প্রবেশ করলে মনের মধ্যে প্রশান্তি আসে। আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা পাওয়া যায়। ওয়ায়েজিনের আলোচনার মাধ্যমে জান্নাতের বাগান থেকে যেনো ফেতনার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও বেহেশতের দিকে ধাবিত হও’। (সূরা আলে ইমরান:১৩৩)। সুতরাং প্রত্যেকটি মাহফিলের আয়োজন লৌকিকতা মুক্ত হউক। সফল হউক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন