শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

সউদী আরবে হঠাৎ কেন এত পরিবর্তন

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সউদী আরবে গত কয়েক দশকে ধীর গতিতে সামান্য কিছু পরিবর্তন ঘটলেও দেশটি এখন নাটকীয় কিছু ঘটনা প্রবাহের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। আধুনিকায়ন, নারীদের অধিকার এবং ইরানের বিরুদ্ধে দল পাকানো- এর সবই আছে দেশটির কার্য তালিকায়। আর এসব কিছুর কেন্দ্রে আছেন একজন ব্যক্তি- নতুন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তার নেতৃত্বে চলছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। সমালোচকদের অনেকে বলছেন, নিজের ক্ষমতা আরো কুক্ষিগত করতে বিরোধীদের তিনি নির্মূল করার চেষ্টা করছেন এই অভিযানের মাধ্যমে। দেশের ভেতরে তো বটেই, যুবরাজ বিন সালমান এখন চেষ্টা করছেন নিজেকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- হঠাৎ করে এখন কেন তেল সমৃদ্ধ এই দেশটিতে এতো কিছু ঘটতে শুরু করেছে?
সউদী আরবের নাগরিকরাও গভীর আগ্রহের সঙ্গে এসব পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রাখছেন। নজর রাখছেন মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও।
পরিবর্তনের হাওয়া
গত কয়েকদিনে নাটকীয় কিছু ঘটনা ঘটে গেলো সউদী আরবে। এসব কারো কল্পনাতেও ছিলো না। যেমন বিলাস বহুল হোটেল রাতারাতি পরিণত হলো কারাগারে। আর ধনকুবের রাজকুমাররা হয়ে গেলো কারাবন্দী। ফলে দেশটিতে বাড়তে লাগলো উত্তেজনা, দেশটি জড়িয়ে পড়ছে প্রক্সি যুদ্ধে এবং এতো দ্রæত একের পর এক এসব ঘটনা ঘটে চলেছে যে এসব খবরাখবরের সাথে তাল মিলিয়ে চলাও খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। সউদী আরবে এতো পরিবর্তনের কারণ ও ধরন বুঝতে হলে এর সামান্য পেছনের কিছু ইতিহাসের দিকে ঘুরে তাকাতে হবে।
আজিজ আল সউদ ১৯০২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন তৃতীয় সউদী রাজত্ব। ১৯৫৩ সালে তার মৃত্যুর আগে এই রাজত্ব তিনি স¤প্রসারিত করেন পারস্য উপসাগর থেকে লোহিত সাগর এবং ইরাক থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। এই সউদী বাদশাহর ছিলো কয়েক ডজন পুত্র সন্তান। তিনি চাইছিলেন ক্ষমতা একজনের হাত থেকে আরেকজনের হাতে ঘুরতে থাকবে। তখন তারা একেকজন একেক গোষ্ঠীর নেতা হয়ে উঠলেন। তাদের ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখারও ব্যবস্থা ছিলো তখন। একারণে বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষমতা তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিলো। এভাবেই চলে আসছিলো দশকের পর দশক। খুব ধীর গতিতে কিছু পরিবর্তনও ঘটছিলো। এসবের বেশিরভাগই ছিলো স্থিতিশীল এবং কি ঘটতে যাচ্ছে সেটা আগে থেকেই মোটামুটি অনুমান করা যেতো। অর্থাৎ নাটকীয় কিছু তেমন একটা ঘটতো না।
ক্ষমতার খেলা
সউদী আরবের এখনকার বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। তার ভাইদের বেশিরভাগই ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, রাজত্ব এখন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরের সময় চলে এসেছে। বাদশাহর ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফ ২০১৫ সালে হলেন নতুন যুবরাজ। ফলে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে সিংহাসন আল-সউদ রাজ পরিবারের ভিন্ন শাখার দিকে প্রবাহিত হতে চলেছে।
অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ বাদশাহ সালমান তখন তার উচ্চাকাক্সক্ষী পুত্রসন্তান সালমানকে তড়িঘড়ি করে ডেপুটি যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করেন। এর দু’বছরের মধ্যেই মোহাম্মদ বিন নায়েফকে উৎখাত করেন বাদশাহ সালমান। এরপর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হয়ে উঠেন তারই ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান। ফলে এই রাজ পরিবারে যেভাবে সিংহাসনের উত্তরাধিকারের পরিবর্তন হয়ে আসছিলো সেই প্রথা ভেঙে যায়। এবং তারপরই বদলে যেতে শুরু করে সবকিছু। নতুন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান রাতারাতি তার প্রতিদ্বন্ধীদের আটক করে জেলে ভরতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন অত্যন্ত বিত্তশালী ব্যবসায়ীরা। এমনকি ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানও। সব ক্ষমতা চলে আসলো এক ব্যক্তির হাতের মুঠোয় যা সউদী রাজ-পরিবারে কখনো ছিলো না। বিন সালমান ভাবছেন, সউদী আরবকে এমন একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে যা তেল ছাড়াও তার বর্তমান প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে টিকে থাকতে পারবে। তিনি আরো চাইলেন সউদী আরবে নারীরা যাতে গাড়ি চালাতে পারে, এমনকি দাঁড়াতে পারে নির্বাচনেও। তিনি চাইলেন পররাষ্ট্রনীতিকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে। এভাবে তিনি নতুন এক সউদী আরবের প্রতিশ্রুতি দিতে থাকলেন।
রূপকথার গল্পের মতো এখানেই কি এর একটি সুন্দর সমাপ্তি হতে পারে না?
না, পারে না। কারণ বাস্তব পরিস্থিতি আসলে সেরকম কিছু নয়। যুবরাজ বিন সালমানের এতো সব উদ্যোগের পেছনে রয়েছে বড় ধরনের সব চ্যালেঞ্জ। তার এই ক্ষমতার খেলা দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে শ্লথ করে দিতে পারে, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন বিনিয়োগকারীরাও। মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে তার যে নীতি সেখানেও রয়েছে সংঘাতের আশঙ্কা।
ইতোমধ্যেই সউদী আরব বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইরানের সাথে। আর দেশটিতো ইতোমধ্যেই সরাসরি যুদ্ধ করছে ইয়েমেনে। এই অবস্থা থেকে সউদী আরব এখন কোন দিকে যেতে পারে এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এতোসব পরিকল্পনার পরিণতি কি হয় সেসব দেখার জন্যে হয়তো আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে নাটকীয় কিছু যে ঘটবে সেটা নিয়ে হয়তো কারো সন্দেহ নেই। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
শরীফ ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:০৬ এএম says : 1
সউদীর উচিত মুসলীম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা
Total Reply(0)
jainul ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৫:০৮ পিএম says : 0
ইসলামি প্রজাতন্ত্র কায়েম কর। রাজতন্ত্র বাতিল কর।
Total Reply(0)
Rafi ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৬:৩৯ পিএম says : 0
আসলে আমরা অনেকেই ইসলাম ধর্মকে সউদী আরবের সাথে মিশিয়ে ফেলি।ইসলাম ধর্মে রাজতন্ত্রের কোন বিধান নেই।আমরা ইসলাম ধর্মের জীবন বিধান মেনে চলব সউদীয়ানদের নয়।এখনও পর্যন্ত অনেক সউদীয়ানদের জীবন যাপন ইসলাম পূর্ব জামানার মত।হে আল্লাহ ওদের ইসলাম ধর্ম বুজার তৌফিক দান করুন।আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন