শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একুশ শতকের এ বিশ্বে আমরা মুসলমান হিসাবে জীবন যাপন করতে চাই। পৃথিবীর ছয়শ কোটি মানুষের এক পঞ্চমাংশ মুসলমান। অর্ধশতের বেশি স্বাধীন রাষ্ট্র সীমানায় আমরা ইসলামী আইনের শাসন জারি করার ক্ষমতা রাখি। কিন্তু দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কোথাও সে সৌভাগ্য মুসলমানদের হয় নি। ইসলামী আইন আজ মুসলমানদের মধ্যেই অপরিচিত হয়ে পড়েছে। প্রায় এমনি একটি কথা নবী স. বলেছেন : ‘বাদাআল ইসলামু গারীবান, ওয়া সাইয়াউদু কামা বাদাআ, ওয়া তুবা লিল গুরাবা।’ ‘ইসলাম এসেছিল অপরিচিত অবস্থায়।’ অর্থাৎ সমস্ত নবী রসূলের আমল থেকে চলে আসা পৃথিবীর মানুষদের মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ইসলামের তখন কোনো পরিচিতিই ছিল না। আবার মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে নতুন করে তাকে পরিচিত করেছেন। তার দাওয়াত দিয়েছেন এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে তাকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
‘পরিচিত মানুষদের মধ্যে ইসলাম আবার আগের মতো অপরিচিত হয়ে যাবে।’ অর্থাৎ শত শত বছর পরে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী পরিবেশ খতম হয়ে যাবে। ইসলামী আইন অনুসারে মুসলমানরা জীবন যাপন করবে না। অনৈসলামের তুলনায় ইসলাম মুসলমানদের কাছে অপরিচিত হয়ে উঠবে। ইসলামী আইন জারি করার পথে মুসলমানরাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ‘এ অবস্থায় অপরিচিতজনদের জন্য মুবারকবাদ।’ অর্থাৎ প্রকৃত মুমিনরা যারা ইসলামকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সমাজে নিগৃহীত ও নির্যাতীত হয়ে ক্ষমতাহীন ও সহায়তাহীন জীবন যাপন করবে, পরিচিতজনদের মধ্যেও যারা অপরিচিতের মতো অবস্থান করবে এবং নিজেদের প্রচেষ্টা ও সংগ্রামকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকবে তারাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করবে।
হাজার দেড় হাজার বছরের পথ পরিক্রমার পর আমরা প্রায় এই অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছি। এ দেশে মুসলমানের সংখ্যা তের কোটি, ইসলাম ও কুরআনের জ্ঞান সম্পন্ন আলেম উলামার সংখ্যা হাজার হাজার হলেও এবং হাজার হাজার মাদরাসায় প্রতিদিন ইসলামের পাঠ অবিরত ধারায় চললেও, দেশের অগণিত মসজিদে প্রতিদিন পাঁচবার লাখো লাখো মুসলমান আল্লাহর কাছে নতশির হলেও তাদের ওপর আল্লাহর আইনের শাসন চলছে না। তাদের ওপর চলছে দুনিয়ায় যারা মানব রচিত কায়েম করেছে তাদের আইনের শাসন। এই আইনের চর্চা চলছে দুনিয়ার সমস্ত পার্লামেন্টে। সেখানে ইসলামকে সন্ত্রাস এবং আল্লাহর আইনের শাসনকে জুলুম হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর মুসলমান শাসকরা তাদের তাবেদারী করাকে নিজেদের সাফল্য মনে করে নিয়েছে। কেবল শাসকরাই বা কেন কালক্রমে মুসলিম এলিট শ্রেণীর মধ্যে একটি বিরাট গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়ে গেছে যারা আল্লাহর আইনের শাসনকে দেশের ও জাতির জন্য ক্ষতিকর মনে করতে শুরু করেছে। কারণ এটা তাদের সারা জীবনের শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চা এবং পার্থিব কর্মকান্ড ও স্বার্থচিন্তা বিরোধী।
কোর্ট-কাছারীতে যারা আইন চর্চা করেন তারা কোনো কেতাবে এই আল্লাহর আইনের কথা পড়েন নি। কাজেই আল্লাহর আইনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার কথা শুনে তারা আকাশ থেকে পড়েন। আর দেশের উলামায়ে কেরাম মক্তব মাদরাসায় গুটিকয়েক ছাত্রকে কুরআন হাদীস পড়িয়ে এবং জলসায় ওয়াজ নসিহত করে মনে করেন তাঁদের দায়িত্ব শেষ। এই হচ্ছে আমাদের দেশে ইসলাম কুরআন ও আল্লাহর আইনের হাল হকিকত। অথচ একজন মুসলমানের সংগাই একথা নির্ধারণ করে দেয় যে তাকে কুরআন ও আল্লাহর আইনের আওতায় বসবাস করতে হবে। কারণ সে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ ঘোষণা করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার বাণীবাহক হিসাবে মেনে নিয়েই ইসলামে প্রবেশ করেছে। কাজেই মুসলিম অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য এমন জীবন যাপন করতে হবে সে জীবনে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইলাহ বলে মানা যাবে না। এখন ইলাহর অর্থ কুরআন কি বর্ণনা করেছে দেখা যাক: ‘ইয়াকুবের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়েছিল তখন কি তোমরা সেখানে ছিলে? সে যখন তার পুত্রদেরকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমার পরে তোমরা কিসের ইবাদত করবে? তারা বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহর এবং আপনার পিতৃ পুরুষ ইবরাহীম ইসমাঈল ও ইসহাকের ইলাহর ইবাদত করবো। তিনি একমাত্র ইলাহ এবং আমরা তাঁর কাছে আত্মসমর্পণকারী।’ (বাকারা : ১৩৩)
আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের একত্র করবেনই এতে সন্দেহ নেই। কে আল্লাহর চাইতে বেশি সত্যবাদী?’ (নিসা : ৮৭)। ‘এই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত করো। তিনি সবকিছুর তত্ত¡াবধায়ক।’ (আন’আম : ১০২)। ‘তোমার রবের থেকে তোমার প্রতি যা কিছু অহী করা হয় তার অনুসরণ করো। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুশরিকদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। (আন’আম : ১০৬) তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটনা। কাজেই তোমরা ঈমান আনো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তার বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তাঁর অনুসরণ করো যাতে তোমরা পথ পাও।’ (আরাফ : ১৫৮)।
(চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন