শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ সুবিচার ও ন্যায়বিচার কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে -বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অধ:স্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে সুবিচার-ন্যায়বিচার কালেরগর্ভে হারিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে আর কিছুই থাকলো না। গতকাল (বুধবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল শৃঙ্খলাবিধি তার পরিপন্থী। এমনকি সংবিধানেরও পরিপন্থী। এই শৃঙ্খলাবিধি সংবিধানের ২২ অুনচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে। ২২ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে লেখা আছে, বিচার বিভাগ হবে একটি স্বাধীন অঙ্গ এবং বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ সম্পূর্ণভাবে পৃথকীকরণ করা হবে। সেজন্য আইনও পাস করা হয়েছে। আজকে এই শৃঙ্খলাবিধির মাধ্যমে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি বলেন, বিধিমালায় বলা হয়েছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ‘নিয়োগকারী’ কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট এবং আইন মন্ত্রণালয়কে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসাবেও নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিধির ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিঘিœত হবে। সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিচারিক আদালত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের সরকারি গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য নির্বাহী বিভাগ তাদেরকে নিরঙ্কুশভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। এর ফলে সরকারের হুকুমেই নি¤œ আদালতের বিচারকদের চলতে হবে। বিচারকরা সবসময় আতঙ্কে থাকবে। চাকরি রক্ষার্থে নির্বাহী বিভাগের সকল অন্যায় আবদার শুনতে ও পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত দ’ুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন-আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়লাভের ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। এখন আওয়ামী লীগকে ভোটে হারানোর মতো দল আর বাংলাদেশে নাই। এই মনোভাবকে বলা হয় ফ্যাসিষ্ট মনোভাব, যা বহুদলীয় গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানুষের নাগরিক অধিকারকে কুঠারাঘাত করার সামিল। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের আগেও তিনি (সজীব ওয়াজেদ) একইরকম জরিপ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, আমার কাছে তথ্য আছে-আওয়ামী লীগই জিতবে। তাহলে এবারেও তার বক্তব্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আরেকটা নীল নকশার নির্বাচনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তিনি মেশিন দিয়ে জরিপ চালিয়েছেন। তিনি জনগণের মধ্যে জরিপ চালাননি। তথ্য প্রযু্িক্ত উপদেষ্টা যে মেশিনের কথা বলছেন সেটি ‘আওয়ামী মেশিন’। সেই মেশিনের জরিপে জনগণের প্রকৃত মনোভাব ফুটে ওঠেনা, মেশিনে শুধু আওয়ামী মনোভাবই ফুটে ওঠে। তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার সেই মেশিন বাকশালী যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরী। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রিজভী বলেন, উনি বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে যা বলেছেন, সেটি একটি ‘টপ ডেমোক্রেটিক কান্ট্রিতে’ বসবাসকারী ব্যক্তির ওপর সেদেশের সংস্কৃতির যে প্রতিফলন ঘটে, সেটি না হয়ে বরং টুঙ্গিপাড়ার সংস্কৃতির প্রতিফলনই ফুটে ওঠেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তথ্য ও প্রযুুক্তি উপদেষ্টার তথ্যটা হলো-ষড়যন্ত্র ও ভয়ংকর নীল নকশা। তার শিষ্টাচারহীন এধরণের ‘ল গ্রেড কমেন্ট’ এর জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। বিএনপি নেতা মনে করেন, রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী চরিত্র দান করে ক্ষমতা-বিলাসে বিভোর থাকা ক্ষমতাসীন নেতাদের অশুভ ইচ্ছার বারবার বাস্তবায়ন হবে না। এবার জোর করে কিছু করতে গেলে জনগণ সেটির উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
ছাত্রলীগের ‘স্কুল পর্যায়ে কমিটি ঘোষণার বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই ঘোষণার পর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে হানাহানি ছড়িয়ে পড়েছে। গত দু’দিন আগে মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছে শাবাব ও মাহী নামে দুই স্কুল শিক্ষার্থী। এদের পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম। ক্ষমতাসীনরা দেশব্যাপী সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মানের জন্য স্কুল পর্যায়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আওয়ামী লীগ সুশিক্ষা, জ্ঞান, সুরুচি, গণতান্ত্রিক সৌজন্যবোধ এবং পরমতসহিঞ্চুতা বিরোধী একটি রাজনৈতিক শক্তি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সুস্থ জীবনযাপনে যাতে উদ্বুদ্ধ হতে না পারে সেজন্যই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে এখন মাধ্যমিক পর্যায়েও ছাত্রলীগের কমিটির নামে দলীয় সন্ত্রাসী দল তৈরী করছে। এটি শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার মাধ্যমে গোটা জাতিকে পঙ্গু করার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান ঢালী, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরাফত আলী সপু, আসাদুল করিম শাহীন, এম এ মালেক ও মো মুনির হোসেন প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন