শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ডিএনসিসিতে নির্বাচনী আবহ

জনপ্রিয় প্রার্থী দেবে বিএনপি

ফারুক হোসাইন : | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) এলাকায় নাগরিকদের মধ্যে এখন ভোটের আবহ। নন্দিত মেয়র আনিসুল হকের হঠাৎ মৃত্যুর পর ডিএনসিসি’র মেয়র পদ শুন্য ঘোষণায় এ আবহ সৃষ্টি হয়। নির্বাচন কমিশন সংবাদ সম্মেলন করে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা জানালে ‘মেয়র উপনির্বাচনী’ বাতাসে নতুন ঢেউ লাগে। সাধারণ ভোটাররা যেমন ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন; তেমনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়ে উৎস্বাহ-উদ্দীপনা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডিএনসিসি উপনির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এরই মধ্যে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিক অনুষ্ঠানে আনিসুল হকের মতো পরিচ্ছন্ন-কর্মঠ-ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করায় দলীয় নেতাদের পাশাপাশি কয়েকজন ব্যবসায়ীর নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে ভোট করতে পারেন এমন খবরও প্রচার করা হচ্ছে।

আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূণ্য হওয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই পদে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার মধ্যে এই উপ-নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই নিচ্ছে বিএনপি। তাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিতে ভেতরে ভেতের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে দলটি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে দলের নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছে। দলের প্রার্থীও মোটামুটি ঠিক। উত্তর সিটিতে আনিসুল হকের ইমেজ ও জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করেই ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীর নামই ঘোষণা করা হবে। তবে এখনো অনেক সময় বাকী থাকায় এবং সরকার এই নির্বাচন দেবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকায় এখনই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করতে চাইছেনা বিএনপি। এছাড়া নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় এবার ভিন্ন কৌশলের চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে দলটির। আগে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেখেই বিএনপি নিজেদের প্রার্থী ঠিক করবে বলেও জানিয়েছেন সিনিয়র নেতারা। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ যেই মানের প্রার্থী দেবে বিএনপিও তার সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার মতো হেভিওয়েট প্রার্থী দেওয়ার কথা চিন্তা করছে। তবে স্বাভাবিকভাবে আপাতত বিএনপি গতবার মেয়র পদে নির্বাচন করা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালকেই পছন্দের শীর্ষে রাখছে। এছাড়া প্রতিপক্ষের প্রার্থী দেখে দলীয় প্রার্থী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রার্থীও থাকতে পারে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, এই সরকারের বাকী সময়ে যতগুলো স্থানীয় সরকার বা উপ-নির্বাচন হবে সবগুলোতেই বিএনপি অংশ নেবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ শূণ্য হওয়ায় এই পদে নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে প্রার্থী নির্বাচন নিয়েও। বিশেষ করে গত রোববার দলের স্থায়ী কমিটির সভায় উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে প্রার্থী নির্বাচনের একাধিক কৌশলও ঠিক করা হয়। এছাড়া প্রার্থী চুড়ান্ত করার জন্য স্থায়ী কমিটির উপস্থিত সকল সদস্যই বিএনপি চেয়ারপারসনকেই দায়িত্ব দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, প্রাথমিকভাবে বিএনপি তাবিথ আউয়ালের কথাই চিন্তা করছে। দলে চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে স্থায়ী কমিটির নেতাসহ শীর্ষ নেতাদের সবার পছন্দের তালিকায় রয়েছে তার নাম। সবকিছু ঠিক থাকলে তাকেই হয়তো আবারও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে এখনো চুড়ান্তভাবে তার নাম ঘোষণা করতে চাইছেনা দলটি। তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনও প্রার্থী নিয়ে আলোচনা হয়নি। যেহেতু নির্বাচনের এখনো পর্যন্ত অনেক সময় বাকি তাই প্রার্থী নির্ধারণেরও সময় আছে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। আর আওয়ামী লীগ কাকে প্রার্থী করে সেটাও আমরা দেখতে চাই। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, এই উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে গত নির্বাচনের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল তো আছেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সদস্যরা চূড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচনের জন্য দলের চেয়ারপারসনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে মাঝপথে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। অল্প সময়ের ব্যবধানে নির্বাচন বয়কট করলেও তিন লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন তিনি। তাই এবারও বিএনপির পছন্দের প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষেই থাকছেন তাবিথ। এছাড়াও বিএনপির প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন সাবেক এমপি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব:) কামরুল ইসলাম, দলের ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব ও এমপি বরকত উল্লাহ বুলু। তবে এবার কোনো কারণে তাবিথ আউয়াল নির্বাচন না করলে বা মনোনয়ন না পেলে দলের প্রার্থী হিসেবে অন্যরা বিবেচনায় আসতে পারেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থও উত্তর সিটিতে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চাইছেন। ফলে দলের শীর্ষ নেতারা তার কথাও চিন্তা করছেন। আবার ২০ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় ঐক্যের চিন্তা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নামও চিন্তায় আছে বলে জানিয়েছে বিএনপির নেতারা। নতুন চমক হিসেবে নাগরিক সমাজের কোনো জনপ্রিয় প্রতিনিধিকেও চিন্তা করতে পারে বিএনপি হাইকমান্ড। বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর গুলশানের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম ও আন্দালিব রহমান। তাঁদের একজন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে কথা তুললে খালেদা জিয়া আগের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকী। আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বুঝে প্রার্থী ঘোষণা করবো। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে যোগ্য প্রার্থীকেই ধানের শীর্ষ প্রতীক দেয়া হবে বলে তিনি জানান। জয়ের বিষয়ে কি ভাবছেন জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, জনগণ যদি নিজের ভোট নিজে দিতে পারে তাহলে বিএনপি জিতবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসররু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন দিলে বিএনপি অংশ নেবে। আমাদের গতবারের প্রার্থীও আছেন। আবার নতুন অনেকেও আগ্রহী। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
নির্বাচন নিয়ে সংশয়: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিলেও নির্বাচন নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছেন দলের নেতারা। বিএনপি নেতারা মনে করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরকার নির্বাচন দিবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় আছে। তারা মনে করেন ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হলেও সেই নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কারচুপির মাধ্যমে তাদের প্রার্থীকে জেতানো হয়েছিল। কিন্তু এবার পেক্ষাপট ভিন্ন। সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই মুহুর্তে সেই রকম আরও একটি নির্বাচন সরকার করতে পারবে না। আবার নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজয়ের সম্ভাবনায় সবচেয়ে বেশি। একদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে না পরলে দেশে-বিদেশে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ফের ক্ষুণœ হবে। অন্যদিকে পরাজিত হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে সারাদেশেই এর প্রভাব পরবে। তাই একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় নির্বাচন সরকারের জন্য উভয় সংকট বলেই মনে করেন তারা। বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, সরকারের যে অবস্থা, তাতে ভালো নির্বাচন করলে হারার ঝুঁকি আছে। আর গত সিটি নির্বাচনের মতো এবারও জোরজবরদস্তি করে জিতলে তা বর্তমান সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও মানুষের আস্থা হারাবে। এসব কারণে সরকার কৌশলে নির্বাচন এড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। তবে ভোট হবে কিনা তা আগে নিশ্চিত হতে হবে। আবার ভোট হলে কেমন হবে? ভোটাররা কি নিজের ভোট নিজে দিতে পারবে নাকি গতবারের মতো সরকারই সবার ভোট দিয়ে দিবে? তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আগে প্রার্থী ঘোষণা করুক, বিএনপির প্রার্থী রেডি আছে। কাকে প্রার্থী করা হবে চূড়ান্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেন, তাবিথ যেহেতু গতবার নির্বাচন করেছে এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে তাকেই করা হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
জাফর ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৫৪ এএম says : 0
বিএনপিকে প্রার্থী বাছাইয়ে সচেতন হতে হবে
Total Reply(0)
Jahangir ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৮:৫৩ এএম says : 0
তাবিথ যুবকের গরব। তাবিথকে মেয়র করা হক
Total Reply(0)
Kamrul hassan ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৩:৫০ পিএম says : 0
I Strictly Requesting to BNP that choice good candidate for DNCC Election and take care overall election please ! May Allah Bless Peoples Of Bangladesh ! Ameen !
Total Reply(0)
ফিরোজ খান ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:২০ পিএম says : 0
তাবিথ আউয়ালকেই মনে হচ্ছে প্রার্থী করা হবে।
Total Reply(0)
মনির ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:২৪ পিএম says : 0
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে প্রাথী করলে খারাপ হবে না।
Total Reply(0)
জাফর ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:৩৫ পিএম says : 0
তাবিথ যেহেতু গতবার নির্বাচন করেছে এবং ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে তাকেই করা হতে পারে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন