বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

কেমন হবে মুমিনের ব্যবহার

আতিকুর রহমান নগরী | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কথায় আছে ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়।’ যুগ বদলেছে। যুগের তরিতে ডিজিটালের হাওয়া লেগেছে। তাই এখন অনেক পন্ডিতরা ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়’ কথাটি মানতে রাজি না। তারা এটাকে চেলেঞ্জ করে বলতে শুরু করেছেন-‘ব্যবহারে বংশের নয়, পিতৃ পরিচয় মিলে’। তাদের যুক্তি হচ্ছে-লোকটির বংশের পূর্ব পুরুষরা হয়তো অনেক ভাল ব্যবহার করতেন, ভাল আচরণে অব্যস্থ ছিলেন। এক সিঁড়ি বা একধাপ অতীতকে পরিচয় করা যায়। তবে আমি অধম এটাও মানতে রাজি না। হতে পারে তাঁর পিতা খুব উত্তম/চরিত্র মাধুর্যে ভরপুর লোক ছিলেন। ছেলে কিংবা মেয়ে কিংবা পরবর্তী জেনারেশন যুগের হাওয়ায় নতুবা ফ্রেন্ড সার্কেলের পাল্লায় পড়ে পিতার আদর্শ থেকে বিয়োগ হয়ে পড়েছে। তবে যে যাই বলুক, সব ধর্মই ভালো ব্যবহারের দিকনির্দশনা দিয়েছে। গুণীজনরা এটা নিয়ে ভেবেছেন। কবিরা কবিতা লিখেছেন। কলামিস্টরা ব্যবহার নিয়ে আর্টিকেল লিখেছেন। আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী। সাচ্চা মুসলমান হই বা ন্ াহই, এটা বড় কথা নয়, কালেমা পাঠকারী সবাই চান যে তিনিই হবেন একজন ভালো উম্মতে মুহাম্মদি। এটা আমারও চাওয়া। আসুন ব্যবহার-চরিত্র নিয়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী? জানার চেষ্টা করি।
ইসলামী শরীয়ত হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি যা সকল দিক থেকে সার্বিকভাবে মুসলমানের ব্যক্তিগত জীবনকে গঠন করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। এসব দিকের মধ্যে গুনাবলি শিষ্টাচার ও চরিত্রের দিকটি অন্যতম। ইসলাম এদিকে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে। তাইতো আকীদা ও আখলাকের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছে, যেমন নবী কারীম সা. এরশাদ করেছেন, ‘মুমিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযি)। সুতরাং উত্তম চরিত্র হচ্ছে ঈমানের প্রমাণবাহী ও প্রতিফলন। চরিত্র ব্যতীত ঈমান প্রতিফলিত হয় না বরং প্রিয়নবী সা. সুসংবাদ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে প্রেরণের অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দেয়া। রাসূল সা. এরশাদ করেছেন, ‘আমি তো কেবল চরিত্রের উত্তম দিকসমূহ পরিপূর্ণ করে দিতে প্রেরিত হয়েছি।’ (ইমাম আহমাদ ও ইমাম বুখারী-আদাবুল মুফরা)। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা উত্তম ও সুন্দরতম চরিত্রের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় হাবীব সা.’র প্রশংসা করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা আল, কালাম : ৪)
কোথায় এ চরিত্র বর্তমান বস্তুবাদী মতবাদ ও মানবতাবাদী মানুষের মনগড়া চিন্তা চেতনায় ? যেখানে চরিত্রের দিককে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, তা শুধু সুবিদাবাদী নীতিমালা ও বস্তুবাদী স্বার্থের উপর প্রতিষ্ঠিত। যদিও তা অন্যদের উপর জুলুম বা নির্যাতনের মাধ্যমে হয়। অন্য সব জাতির সম্পদ লুন্ঠন ও মানুষের সম্মান হানীর মাধ্যমে অর্জিত হয়।
একজন মুসলমানের উপর তার আচার-আচরণে আল্লাহর সাথে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে, অন্য মানুষের সাথে, এমনকি নিজের সাথে কি ধরনের আচরণ করা উচিত ইসলাম তার এক অভিনব চকমপ্রদ চিত্র অংকন করে দিয়েছে। যখনই একজন মুসলমান বাস্তবে ও তার লেনদেনে ইসলামী চরিত্রের অনুসরণ করে তখনই সে অভিষ্ট পরিপূর্ণতার অতি নিকটে পৌঁছে যায়, যা তাকে আরো বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও উচ্চ মর্যাদার সোপানে উন্নীত হতে সহযোগিতা করে। পক্ষান্তরে, যখনই একজন মুসলমান ইসলামের চরিত্র ও শিষ্টাচার হতে দূরে সরে যায় সে বাস্তবে ইসলামের প্রকৃত প্রাণ চাঞ্চল্য, নিয়ম-নীতির ভিত্তি হতে দূরে সরে যায়। সে যান্ত্রিক মানুষের মত হয়ে যায়, যার কোন অনুভূতি এবং আত্মা নেই। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, মুমিন বান্দারা উন্নত চরিত্রের দ্বারা গোটা রাত নামাজ আদায়কারী এবং সারা বছর রোজা পালনকারীর মর্যাদায় অতি সহজে পৌঁছে যেতে পারে (আবু দাউদ শরীফ)। দয়া, ক্ষমা, সবর, বিনয়, সৎ স্বভাব, সুন্দর আচরণ মানব চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই উত্তম চরিত্রবানই উত্তম ঈমানদার।
উত্তম চরিত্র বা আখলাক তিন প্রকার
১. আখলাকে হাসানা : কেউ জুলুম করলে সমপরিমাণ বদলা নেয়ার আখলাক।
২. আখলাকে কারিমা : আখলাকে কারিমা হচ্ছে জুলুম করলে তা মাফ করে দেয়া।
৩. আখলাকে আমিমা : জালেমের জুলুম মাফ করে দেয়ার পর তার প্রতি ইহসান বা উপকার করা। উত্তম চরিত্রবান আল্লাহর রেজামন্দির বাসনায় রাগ গিলে ফেলে, সৎ কর্মশীল লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে, মানুষের সঙ্গে কটুবাক্য ব্যবহার করে না।
প্রিয় বন্ধু, মুসলিম হওয়া নি:সন্দেহে বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। ইসলাম আমাদের গর্ব। ইসলাম আমাদের মর্যাদার প্রতীক। এর মাধ্যমেই এ পার্থিব জগতে যেমন শান্তি ও সাফল্য পাওয়া যাবে ঠিক তদ্রুপপরকালিন জীবনে পাওয়া যাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা। কিন্তু আজ অনেকে মুসলিম পরিচয় দিতে হীনমন্যতায় ভোগে। এর কারণ, ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা। ইসলামের সৌন্দর্য মন্ডিত দিকগুলোর ব্যাপারে ওয়াকিবহাল না থাকা। যার কারণে তার মাঝে ইসলামি ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয় না। অতএব আসুন, আমরা ইসলামী জীবন আদর্শকে বুকে ধারণ করি এবং সেই আলোকে গড়ে তুলি আমাদের লাইফ স্টাইল এবং ব্যক্তিত্বকে। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন