বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

পথ নির্দেশ : সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
ইসলাম আল্লাহ মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এতে যেমন রয়েছে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান তেমনি রয়েছে দৈনন্দিন জীবনের সব কার্যাবলির দিকনির্দেশনা। মানুষ যদি তার সব কাজে এমনকি প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনেও ইসলামী রীতি মেনে চলে তাহলে প্রত্যেকটি কাজের জন্য ইহকালে শান্তি ও পরকালে পুণ্যের অধিকারী হবে। আর ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর উম্মতকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েও শিক্ষা দিতে বিস্মৃত হননি- এমনকি শৌচকর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রেও।
বিশিষ্ট সাহাবি সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, মক্কার কাফের-মুশরিকরা ঠাট্টা করে তাকে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের নবী কি তোমাদের সব কিছুই শিক্ষা দিয়েছেন- এমনকি প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনও! উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি আমাদের মলমূত্র ত্যাগের সময়ে কিবলামুখী হতে নিষেধ করেছেন এবং ডান হাত শৌচকর্ম সম্পাদন করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম : ৬২৯)। শৌচকর্ম সম্পাদনের জন্য এমন নির্জন স্থান বেছে নিতে হবে যেখানে গোপনীয়তা রক্ষা পায় এবং স্বকীয়তা বজায় থাকে। মহানবী (সা.)-এর সময়ে সুরক্ষিত টয়লেট না থাকায় তিনি মলমূত্র ত্যাগের আগে দূরে নির্জন স্থানে চলে যেতেন। মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) শৌচকর্ম সম্পাদনের ইচ্ছা পোষণ করলে দূরে চলে যেতেন। (নাসায়ি : ১৭; তিরুমিজি : ২০)
টয়লেট বা শৌচাগারে প্রবেশের সময় প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা এবং বের হওয়ার সময় আগে বাম পা এবং পরে ডান পা দিয়ে বের হওয়া সুন্নত। টয়লেটে প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হওয়ার সময় বিশেষ দোয়া পাঠ করার বিধান রয়েছে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) টয়লেটে প্রবেশের সময় বরতেন, “আল্লাহুমা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবায়িস”। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি নর ও নারী শয়তান থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থন করছি। (নাসায়ি : ১৯) এবং টয়লেট থেকে বের হয়ে বলতেনÑ ‘গুফরানাকা’ অর্থাৎ তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। (আল আদাবুল মুফরাদ : ৬৯৩)।
টয়লেট ব্যবহারের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কিবলামুখী হয়ে বা কিবলাকে পেছনে রেখে মলমূত্র ত্যাগ করা না হয়। আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা শৌচাগারে প্রবেশ করলে কিবলামুখী হয়ে বা কিবলাকে পেছনে রেখে মলমূত্র ত্যাগ করবে না। (বোখারি : ৩৯৪)। বসা অবস্থায় মলমূত্র ত্যাগ করাটাই সুন্নত; তবে বিশেষ প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করার অনুমতি রয়েছে। নবী (সা.) একদা কোনো এক সম্প্রদায়ের ময়লার স্তূপের কাছে দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করেছেন মর্মে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে (নাসায়ি : ১৯)। পানি অপবিত্র হওয়ার আশঙ্কায় বদ্ধ পানিতে; শয়তানের কুমন্ত্রণার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় গোসলের স্থানে এবং জিনদের আবাসস্থল হওয়ায় গর্তের ভেতরে মূত্র ত্যাগ করতে নবী (সা.) নিষেধ করেছেন। (নাসায়ি : ৩৪-৩৬)। অনুরূপভাবে জনদুর্ভোগ এড়াতে মানুষের চলাচলের রাস্তায় এবং জনমানুষের চক্ষু থেকে আড়ালে না গিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করতে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। এ ছাড়া মলমূত্র ত্যাগের সময় চুপিসারে কারও সঙ্গে কথা বলা এবং একে অণ্যের লজ্জাস্থান দর্শন করা অনুচিত। নবী (সা.) এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কেননা এতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। (মাজা : ৩৬৬)।
শৌচকর্ম সম্পাদনের সময় বাম হাতের ব্যবহার সুন্নত। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ শৌচাগারে প্রবেশ করলে ডান হাত দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করবে না। (নাসায়ি : ৪৭)। নবী (সা.)-এর জামানায় পানি স্বল্পতার কারণে অধিকাংশ সময়ই মলমূত্র থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য পাথর জাতীয় বস্তু ব্যবহার করা হতো। এক্ষেত্রে তিনটি পাথরের কম ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাড় ও গোবরের ব্যবহার থেকে বারণ করা হয়েছে। (মুসলিম : ৬২৯)। বর্তমানে টয়লেট পেপারের সহজলভ্যতার কারণে পাথর বা মাটি জাতীয় বস্তু তেমন একটি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। শৌচকর্ম সম্পাদনের পর হাতকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য নবী (সা.) মাটিতে হাত ঘষে নিতেন। (নাসায়ি : ৫০)। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানেও টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান বা জীবাণুনাশক বস্তু দ্বারা হাত পরিষ্কার করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। টয়লেট ব্যবহারের পর অজু করে পবিত্র হওয়া সুন্নত। নবী (সা.)-এর টয়লেট গমন সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদিসেই শৌচকর্ম সম্পাদনের পর তার অজু করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ সুন্দর এবং সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’ (মুসলিম) । ইসলাম পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। সুন্দর পরিবেশের জন্য ইসলামের অনুশাসন মেনে চলার বিকল্প নেই। দুর্গন্ধ নয়, সুঘ্রাণ ও সজীবতা ইসলামের দাবি। আল্লাহর রাসূল (সা.) সুগন্ধ, সৌন্দর্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পছন্দ করতেন। এ কথা সত্য যে, দৈহিক রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে হলে দেহকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। কাপড়-চোপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন পাত্র থেকে পানীয় ও খাবার খেতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন।’ তিনি পরিচ্ছন্নতাকে পছন্দ করেন, নিজে সুমহান এবং মহত্ত্বকে পছন্দ করেন এবং তিনি দানশীল, দানশীলতাকে পছন্দ করেন। কাজেই তোমরা (তোমাদের বাড়ির চত্বর) পরিচ্ছন্ন রাখবে। (তিরমিজি)।
আজ সাধারণ মানুষ ইসলামের অনুশাসন থেকে যেন ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। ইনরামের নিষিদ্ধ কাজগুলোর প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ছে। প্র¯্রাব-পায়খানার ক্ষেত্রে ইসলামে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তার প্রত্যেকটি পালনে মানুষের মাঝে যথেষ্ট অনীহা ও উদাসীনতা লক্ষণীয়। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন