শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

চিরন্তন সংগ্রাম

মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহা শক্তিধর আল্লাহ। বিশাল তার জ্ঞান। তুলনা নেই সে জ্ঞানের। তার ক্ষমতারও সীমা নেই। সীমা নেই তার কুদরত আর হেকমতের, যা শেষ করে যায় না বলে। শেষ করা যায় না লেখে। আল্লাহর দয়া ও ক্ষমতার কথা ভাবলে আনন্দ-উল্লাসে মন ভরে ওঠে। নেচে ওঠে হৃদয় এই সৃষ্টির অপরূপ লীলাখেলায়। সেই মহান রাব্বুল আলামিন বললেন, ‘হও।’ অমনি হয়ে গেলো। কী হলো? পানি হলো। মাটি হলো। বাতাস হলো। আগুন হলো। হলো পৃথিবী, আকাশ, মহাকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র, চন্দ্র-সূর্য, সৌরজগত। আরও হলো নদ-নদী, সমুদ্র-সাগর, মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা, তৃণলতা, ফল-ফুল, জীব-জানোয়ার পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ আরও কত কি! জানা-অজানা যা কিছু দরকার সব হলো।
মহামহিম রাব্বুল আলামিন হঠাৎ একদিন ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি। তারা হবে আমার প্রতিনিধি। তারাই আমার গুণের প্রকাশ ঘটাবে। গুণগান করবে। সমস্ত সৃষ্টির ওপর আমার খলিফা হবে। প্রতিনিধিত্ব করবে।’ ফেরেশতারা বললো, ‘রাব্বুল আলামিন আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা দুনিয়াতে হানাহানি, কাটাকাটি, ঝগড়া-বিবাদ করবে। একে অন্যের ওপর জুলুুম করবে। আমরাই তো আপনার মহীমা গাইছি, আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আল্লাহ বললেন, ‘আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না, আমি যা বুঝি, তোমরা তা বোঝো না।’
তিনি আদমকে সৃষ্টি করলেন, সৃষ্টি করলেন পহেলা মানুষকে। তাকে পৃথিবীর সব কিছুর নাম শিখিয়ে দিলেন। এরপর সকল ফেরেশতাদের ডাকলেন। বললেন, ‘এই সমস্ত সৃষ্টির নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ ফেরেশতারা মাজুর হালতে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি মহান পবিত্র। আপনিই সর্বজ্ঞানী। আমরা কী করে এসবের নাম বলবো। আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন, তার বেশী কিছু জানি না। আপনিই সব জানেন।’ এবার মহান রাব্বুল আলামিন আদমকে বললেন, ‘হে আদম! তুমি এসবের নাম বলে দাও।’ আদম (আ.) ফেরেশতাদের সব জিনিসের নাম বলে দিলেন। আল্লাহ তায়ালা তখন বললেন, ‘আসমান জমীনে যা কিছু রয়েছে, যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না সেই সবই আমি জানি।’ ফেরেশতাদের বললেন, তোমরা আদমের প্রতি নত হও।’ সব ফেরেশতা আল্লাহর হুকুমে আদমের সমীপে নত হলেন, তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেন। কিন্তু নত হলো না একজন। নাম তার আজাজিল। আজাজিল নত হলো না। আদমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলো না। সে অহংকারী হলো। আগুনের তৈরী বলে গর্ব করলো। আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হয়ে সত্যকে ত্যাগ করলো। তাই আজাজিল শয়তান, অভিশপ্ত ইবলিস শয়তান নামে পরিচিত হলো। আদম (আ.) একা। তার কোনো সঙ্গী নেই। সাথী নেই। নেই কোনো সহচর। কিন্তু একা কি মানুষ থাকতে পারে? আদমের সাথী দরকার। মহান আল্লাহ তায়ালা তার জন্য হাওয়াকে সৃজন করলেন। সঙ্গী বানালেন। এরপর মহামহিম রাব্বুল আলামিন বললেন, ‘যাও, তোমরা জান্নাতে বসবাস করো। যেখানে ইচ্ছা, সেখানে চলা-ফেরা করো। জান্নাতের নাজ-নিয়ামত উপভোগ করো। কোনো বাধা নেই, তবে এই গাছের কাছে তোমরা যেওনা। এ গাছের ফল তোমরা খেয়ো না। এটা আমার আদেশ, এটাই আমার নিষেধ।
আদম-হাওয়া মহাসুখে দিন কাটাতে লাগলেন। বেহেশতের অনন্তর অসীম-নেয়ামত ভোগ করতে লাগলেন। অফুরন্ত বেহেশতের চিজ-আসবাব। কী সেই বেহেশত? বেহেশত শান্তি নিবাস। যারা আল্লাহর হুকুমমত চলে, তাদের পুরস্কার স্বরূপ এই শান্তি নিবাস। অফুরন্ত আরাম আয়েশের জায়গা এই জান্নাত। অনাবিল শান্তির জায়গা। সেখানে দুঃখ নেই। নেই রোগ-শোক। নেই কোনো অভাব অনটন। নীচে নহর। দুধের নহর। মধুর নহর। পানির নহর। আরও কত কী! ওপরে নানারকম ফল-ফুল। বাগ-বাগিচায় বিচরণ করে রঙ বেরঙের হরেকরকম পাখি। দেখলে চোখ জুড়ায়। মন শীতল হয়। অদ্ভুত সেখানকার অবস্থা, যেই হুকুম সেই তামিল। আর মহল? যে মহলে বেহেশতিরা বসবাস করবে, সে মহলের কথা কল্পনা করা যায় না। যায়না বর্ণনা করা তার রূপের, তার সৌন্দর্য ও ব্যবহারের। এত তার চাকচিক্য। একদিকে মহলের রূপ অন্যদিকে বাগ-বাগিচার বাহার। সব মিলিয়ে রূপসী বেহেশত, রূপসী জান্নাত।
অভিশপ্ত আজাজিল। আদমের চিরশত্রæ ইবলিস। তার সহ্য হলো না এসব। শয়তান ইবলিস পরামর্শ দিলো হাওয়াকে ফল খেতে। ফলের স্বাদ নিতে। কোন ফল? আল্লাহ নিষেধ করেছিলেন যে গাছের ফল খেতে সেই গাছের ফল। আদম-হাওয়া বুঝতে পারলেন না আজাজিলের ছলনা। বুঝতে পারেননি তার ফেরেব। শয়তানের জয় হলো। তার শঠ্তায় সেই নিষিদ্ধ ফল খেলেন। ফল খেয়ে উভয়ে আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হলেন। আল্লাহ তাদের ওপর নারাজ হলেন। ইবলিস ভীষণ খুশি। তার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। পূরণ হয়েছে তার কৌশল। যার প্রতি নত না হওয়ায় সে অভিশপ্ত, তাকেও সে আল্লাহর হুকুম থেকে বিচ্যুত করেছে। শয়তান অবাধ্য হয়েছে আল্লাহর হুকুমে আদমের প্রতি সেজদা না করায় আর আদম-হাওয়া আল্লাহর নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ায়।
তাই মহান রাব্বুল আলামিন বললেন, ‘তোমাদের জন্য এই জান্নাত নয়, তোমাদের জায়গা এখন থেকে পৃথিবী। সেখানে তোমরা একে অপরের সঙ্গে মুকাবিলা করবে। পরস্পর লড়বে। এরপর তোমাদের আবার আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। এটাই তোমাদের কর্মফল। তোমাদের নসীব।’ আদম-হাওয়া জান্নাত ছাড়লেন। ছাড়লেন শান্তির নিবাস। একটি হুকুম অমান্য করায় ভেঙে গেলো সব সুখ।
আর পৃথিবীতে যাত্রা হলো মানুষের। শুরু হলো মানুষ ও শয়তানের চিরন্তন সংগ্রাম। মানুষ ও শয়তানের ময়দান এই পৃথিবী। শুরু থেকে শেষ অবধি এ যুদ্ধ চলছে, চলবে এবং চলতে থাকবে। রণক্ষেত্রে শয়তানকে পরাস্ত করেই মানুষ মহামহিম রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন করবে। আর ফিরে পাবে হারানো সেই জান্নাত, আনন্দময় সেই মহাসুখ।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন