চীনের পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জিনজিয়াং অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় একযোগে কাজ করতে সম্মত হয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও চীন। এ উপলক্ষে বেইজিংয়ে এক বৈঠকে অংশ নেন তিন দেশের মন্ত্রীরা। বেইজিংয়ে তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে এমন সময়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো যখন ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে চীন। গত গ্রীষ্মে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটায় দু’জন চীনা নাগরিক অপহৃত হন। তারা ব্যবসায়ী ভিসা নিয়ে পাকিস্তান সফর করছিলেন। জিনজিয়াং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সহায়তার উপর চীনকে নির্ভর করতে হয়। কারণ বিশ্লেষকদের মতে, ওই অঞ্চলে চীনের দমন নীতির কারণে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম স¤প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। উইঘুর মুসলিমরা ওই এলাকাকে তাদের আবাস দাবি করলেও চীন তা স্বীকার করে না। প্রাকৃতিক সম্পদ-সমৃদ্ধ জিনজিয়াং ও চীনের অন্যান্য অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার জন্য প্রায়ই নির্বাসিত উইঘুর মুসলিমদের সংগঠন ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) এবং এ ধরনের অন্যান্য সংগঠনকে দায়ী করে চীন সরকার। উইঘুর মুসলিমরা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে চীন। বৈঠকের পর আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালাহউদ্দিন রব্বানী বলেন, কোন বাছবিচার ছাড়াই সবধরনের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতা করার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। তিনি আরও বলেন, ইটিআইএম, তাদের সমর্থক গোষ্ঠী ও নেটওয়ার্ক এবং সার্বিকভাবে সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতায় সর্বোতভাবে সহায়তা অব্যাহত রাখবে আফগানিস্তান। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানিয়ে আসছে চীন। তাদের মতে, এ কারণে জিনজিয়াংয়ে কট্টর ধর্মীয় গ্রæপের অনুপ্রবেশ ঘটছে। নির্বাসিত উইঘুর সংগঠনগুলোর কথিত সন্ত্রাসবাদী হামলা মোকাবেলায় বেইজিং ওই অঞ্চলে ধর্মীয় আচার আচরণের উপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ জন্য কার্যত পুলিশি রাজ্যে রূপ নিয়েছে জিনজিয়াং। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের এই নীতির কারণে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব আরও বেড়ে গেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তিন দেশই সম্পূর্ণ একমত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জিনজিয়াংকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায় চীন। বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো প্রকল্পের অধীনে এ অঞ্চলের প্রাচীন বাণিজ্যিক সড়কগুলোকে পুনরায় চালু করতে চায় চীন। এর মধ্যে রয়েছে জিনজিয়াং থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হয়ে ইউরোপ পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে চীনের বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলোও কমবেশি সন্ত্রাসী হুমকির মুখে পড়েছে। কোয়েটায় দু’জন চীনা নাগরিককে অপহরণের পর হত্যার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। পাকিস্তান সে সময় জানিয়েছিল যে ওই দুই চীনা নাগরিক সেখানে অবৈধ ধর্মীয় প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েছিল। সাউথ এশিয়ান মনিটর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন