শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইংরেজি নববর্ষ সংখ্যা

সালতামামি ২০১৭

ড. মু হা ম্মা দ সি দ্দি ক | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিগত ২০১৭ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো হলো মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইসরাইলের মাধ্যমে জেরুজালেম দখল যা কি না প্রাথমিকভাবে মনে হবে শুধু মার্কিন দূতাবাসের স্থানান্তর ও জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতি, সউদী আরবের নতুন যুবরাজ কর্তৃক ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রপাত, উত্তর কোরিয়া-মার্কিন সংঘাত গুরুতর হতে হতে রুশ-চীন হুঁশিয়ারিতে চুপসে যাওয়া. আইএসের উৎখাত, কাতারকেন্দ্রিক আঞ্চলিক অস্থিরতা ইত্যাদি। দেখেশুনে মনে হয় আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটগুলোর বেশির ভাগই মুসলিম ভূখন্ডে। এর অবশ্য কারণ রয়েছে। ভূঅবস্থানের কারণে মুসলিম বিশ্ব পাশ্চাত্যের লাগোয়া, আর মুসলিম ভূখন্ড অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব গোলার্ধের মধ্যস্থানে যা কৌশলিক দিক দিয়ে মূল্যবান। তেল ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে।
মিয়ানমার : আগস্ট ’১৭-এর শেষ থেকে মিয়ানমারে মুসলিমদের ওপর, বিশেষ করে সাবেক আরাকান স্টেটে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে গণহত্যা শুরু হয় তা হলো একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। আগেও মুসলিম নির্যাতন হয়েছে। তবে গত বছরের গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিকান্ড, লুটপাট অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর মূল কারণ এখন পরিষ্কার। মিয়ানমার এবার চীন-রাশিয়া- ইন্ডিয়ার এক প্রকারের মৌন সম্মতি পেয়েছিল। এ কয়েকটি রাষ্ট্রেরই কৌশলিক অর্থনৈতিক প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। রোহিঙ্গা এলাকা প্রয়োজন চীন ও ইন্ডিয়ার ট্রানজিট করিডোর হিসেবে। এ ছাড়াও চীন-রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে আরাকান সমুদ্র তীরের মূল্য বেড়েছে। তাই এই কৌশলিক সমুদ্রতটে মুসলিম-উপস্থিতি ভবিষ্যতে বাধা হিসেবে দেখা দিতে পারে বলে এই ‘এথনিক ক্লিনজিং’Ñ জাতিগত নিধন। মিয়ানমার বলতে চায় রোহিঙ্গারা বাঙালি, বাংলাদেশী। ইন্ডিয়াও প্রকারান্তরে এই নীতির সমর্থক, নইলে ইন্ডিয়াতে আশ্রয় নেয়া চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গাকে তারা কেন বাংলাদেশে ঠেলে দিতে চায়। এর সঙ্গে আসাম থেকে বাংলাভাষী মুসলমান বিতাড়নের নাটক শুরু করেছে বিজেপি সরকার। চীন এখন মিয়ানমার ও নিজ দেশে মুসলমান সহ্য করতে পারছে না। তারা কি পারবে পাকিস্তানের মুসলমানদের সরাতে তাদের তৈরি গিলগিট-গোয়াদর করিডোর থেকে? চীনের এই রোহিঙ্গা বিতাড়ন সমর্থনের নীতি চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে পানি ঢেলে দেবে, যার পরিণতি হবে বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার কোলে ঠেলে দেয়া। ফলে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি হুমকির মুখে পড়বে। চীনের রোহিঙ্গানীতি ইন্ডিয়ার নীতিনির্ধারকদের প্রকারান্তরে খুশিই করবে। বৌদ্ধ ধর্ম অহিংসার ধর্ম বলে পরিচিত। কিন্তু মিয়ানমারের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীসহ বৌদ্ধ সেনাবাহিনী এই ধর্মটির অন্য প্রকারের চিত্র প্রকাশিত করল। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বৌদ্ধ সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে না? অথচ মুসলিম সন্ত্রাসী বলা হয় যখন-তখন। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার আশা প্রকাশ করেছেন, মিয়ানমারের অং সান সু চি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল অংসিন হ্লেইং হয়তো ভবিষ্যতে কোনো সময়ে নিজেদের গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পাবেন। তিনি এ-ও মনে করেন সু চির সম্মতিতেই রোহিঙ্গা নির্যাতন হয়েছে। এ দিকে এই ২০১৭ সালের শেষ দিনতক রোহিঙ্গা নির্যাতন, হত্যা, বিতাড়ন, অগ্নিকান্ড বন্ধ হয়নি। এখনও লোক পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে। একটি তথ্যে দেখা গেল শতকরা পঁচাত্তর ভাগ নারী- কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে, আগস্ট-সেপ্টেম্বরের এক মাসেই দশ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়, যার মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু সাতশ’ ত্রিশ জন। বাকি সময়ের হত্যাকান্ড হিসাবে নিলে সংখ্যা আরো অনেক হবে। বিদেশীরা কিছুটা তথ্য সংগ্রহ করতে পারল। অথচ আমাদের ঘরে এগারো লাখ রোহিঙ্গা। আমাদের সংগৃহীত নির্যাতন তথ্য অপ্রতুল। এখনই এসব তথ্য ও নির্যাতনের ছবি সংগ্রহ না করতে পারলে জেনোসাইডের ইতিহাসের অনেক কিছুই লোপাট হয়ে যাবে।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে কি না, হলেও কয় যুগ ধরে তা চলবে, সব অস্পষ্ট। তারা ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়নি এমনিতেই। রোহিঙ্গা জাতির শতকরা নব্বই ভাগ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে মাত্র দুই-তিন লাখ রোহিঙ্গা এখন মিয়ানমারে। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে এরাও রাস্তা নেবে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ‘মাইন্ড-সেট’ স্পষ্ট। ওআইসি প্রচন্ডভাবে চাপ না দিলে সিকি শতাব্দীতেও রোহিঙ্গারা ঘরে পৌঁছতে পারবে না। চীন-রাশিয়া মিয়ানমার ইন্ডিয়ার কৌশলিক প্রয়োজনের নিকট রোহিঙ্গাদের চোখের পানির কানাকড়ি মূল্য নেই। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা ও পাইকারি বিতাড়ন কতকটা পনের ও ষোল শতকে স্পেন-পর্তুগাল থেকে পাইকারিভাবে মুসলিম ও ইহুদিদের বিতাড়ন ও গণহত্যার মতো। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ এক লেখায় লিখলেন : ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট না হলে কোনো দিনই জানতাম না যে, ভারত আমাদের বিপদের সময় পাশে থাকবে না।’ আসলে ট্রানজিট-করিডোর নেয়ার পর বাংলাদেশ থেকে আর কিছু নেয়ার প্রয়োজন নেই ভারতের।
সউদী-ইসরাইল সম্পর্ক : আশ্চর্য ঘটনা ঘটে চলেছে এ ক্ষেত্রে। সউদী নতুন যুবরাজকে ইসরাইল সফরে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। যুবরাজ ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট আব্বাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেন ইসরাইলি মতামত অনুসরণে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে দান করলে, তুরষ্ক ওআইসির শীর্ষ সম্মেলন ডাকলে সউদী আরব নিম্নপদস্থ কর্মকর্তাকে তুরস্কে পাঠান। অথচ আল কুদস সমস্যার সমাধানে এক সময় সউদী প্রেরণায় এই ওআইসি প্রতিষ্ঠিত হয়, যা জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ফোরাম। বর্তমান সউদী নেতৃত্বের সঙ্গে ট্রাম্প জামাতা কুশনার (যিনি একজন ইহুদি অ্যাক্টিভিস্ট)-এর হৃদ্যতা, বর্তমানে ফিলিস্তিনের প্রতি সউদী শীতলতার অন্যতম কারণ। ট্রাম্প চান সউদী কোয়ালিশন, ফিলিস্তিন ইসরাইল মিলে ইরানকে মোকাবিলা করুক। অতীতে পাশ্চাত্য এ ধরনের নোসখা দিয়ে পরবর্তীতে সাদ্দাম হোসেনকেই উৎখাত করেছে। সউদী কোয়ালিশন ইসরাইল ও কুশনারের ফাঁদে পা দিলে মুসলিম বিশ্বের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনবে।
ফিলিস্তিন ও ইসরাইল : ইসরাইলের পোয়াবারো। ট্রাম্প যেভাবে এ বিষয়টি দেখছেন, তাতে মনে হয়, ইসরাইল যেন সর্বশেষ মার্কিন স্টেট। ইসরাইল যে নীতি নিয়ে এগোচ্ছে তা ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এ অঞ্চলে। আর আরব প্রশাসকরাও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে জনরোষে। ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরাইলের পক্ষে ভোট দিতে জাতিসংঘের ভোটাভুটিতে অনৈতিকভাবে মার্কিন চাপ মার্কিন ও ইসরাইলি অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও সুপার পাওয়ার হিসেবে তার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। অথচ সে কিছু রাষ্ট্রকে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ বলে।
কাতার প্রশ্ন : সউদী আরব কাতারকে ধ্বংসের মুখে নিতে চায়। সে কাতারের আলজাজিরা প্রেস টিভি মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে কাতারের স্বাভাবিক সম্পর্ককে সহ্য করতে চায় না। সউদীতে না হচ্ছে গণতন্ত্র, না তারা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের নীতি অনুসরণ করছে। অথচ কাতার বহু গুণে সউদীর চেয়ে মানবিক বলে মনে হয়।
সিরিয়া : পাশ্চাত্য, রাশিয়া, ইসরাইল ও অন্যরা মিলে সিরিয়াকে পাথর যুগে নিয়ে গেছে। অন্তত দশ লাখ সিরিয়াবাসীকে তারা হত্যা করেছে। সেখানে কোনো একটা বাড়ি আস্ত নেই। অথচ সামান্য ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ করে আরব মুসলমানরা নিজেরাই সমস্যার সমাধান করতে পারত।
এ দিকে সিরিয়া ইরাকের অস্থির পরিস্থিতিতে আইসিস ইসলামের খেলাফতের নামে আর এক অরাজকতা সৃষ্টি করল। তবে তাদের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রীয় নীতি ছিল অপরিপক্ক। সমাজতান্ত্রিক তরিকা দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এমনি বিপর্যয় হয়। মাঝখান থেকে বহু মানুষ হতাহত হলো।
কুর্দি প্রশ্ন : কুর্দি প্রশ্ন নিয়ে প্রথমে সোভিয়েত ইউনিয়ন, পরে পাশ্চাত্য খেলল। এদের নীতি ছিল মুসলিম বিশ্বকে টুকরা টুকরা করে দেয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরই তারা কুর্দি এলাকাকে বিভিন্ন রাষ্ট্রে ভাগ করে দিয়েছে। তারা কুর্দি সালাউদ্দীন আইয়ুবীর গোষ্ঠীকে একত্রিত দেখতে চায়নি। অথচ এখন তারা কুর্দিদের উসকাচ্ছে স্বাধীনতার নামে। তারা সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে ছোট ছোট আমিরাত করে ভানুমতির খেলা খেলতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তানের পক্ষে। ফলে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরানের কুর্দি এলাকাতে অস্থিরতা বাড়ছে।
তুরস্ক : তুরস্কের এরদোগান সরকার মার্কিন সড়যন্ত্রে উৎখাত থেকে কোনোভাবে উদ্ধার পায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তুরস্ককে নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তারা আবার চেষ্টা নিতে পারে উৎখাতের। কারণ হলো, কেন তুরস্ক মুসলিম প্রশ্নে সোচ্চার? মনে হয় অতীতের উসমানী সুলতানাতের সময়ের পাশ্চাত্য মনোভাব আবার ফিরে এসেছে।
ফতুল্লা গুলেনের হিজসেট পার্টিকে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এর সোগøানবিরোধী অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা নেয় ১৫ জুলাই ২০১৬। সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র যে কৌশল পাশ্চাত্যের চিরাচরিত কৌশল মনমতো সরকার আনতে। গুলেনের ইসলামিক দল এক সময় এরদোগানের একে পার্টির মিত্র ছিল। তবে ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে। তুরস্কে মার্কিন এক সাবেক রাষ্ট্রদূত ও দুই সিআইএ কর্মকর্তার সুপারিশে মার্কিন গ্রিন কার্ড পান তিনি। পৃথিবীর ১৭০টি দেশে গুলেনের হোপ স্কুল রয়েছে। পার্টির স্কুল ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়। গুলেনের দলের সদস্যসংখ্যা দশ লাখ থেকে আশি লাখ। একসঙ্গে কাজ করলেও ২০১৩ সালের পর গুলেনের দল এরদোগান থেকে পৃথক হয়ে যায়। গুলেনকে ইসলামের গান্ধী বলা হয়। তার ধর্মমত প্রশ্নবিদ্ধ, তবে তা মার্কিন প্রশাসনে গৃহীত এরদোগানের একে পার্টিার বিপরীতে।
যুক্তরাষ্ট্র তথা পাশ্চাত্য এরদোগানকে সরিয়ে গুলেনের দলকে তুর্কি সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতায় আনতে চায়। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এরদোগানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তথা পাশ্চাত্যের সম্পর্ক আরও শীতল হয়েছে। এখন তুরস্ক প্রতিবেশী ইরান, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করেছে। জেরুজালেম প্রশ্নে এরদোগান মুসলিম নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সউদী বাদশাহ নন। মিয়ানমার প্রশ্নে তিনি সোচ্চার তবে পাশ্চাত্য একে পার্টিকে যে সহ্য করবে মনে হয় না। আবার মার্কিন উৎসাহে তুরস্কে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র অভ্যুত্থান করতে সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যবহার করে থাকে। মিসরে জেনারেল সিসিকে দিয়ে তারা অভ্যুত্থান করায়। এরদোগানকে হটালে এর প্রভাব ফিলিস্তিন তথা মধ্যপ্রাচ্য ও মিয়ানমারে হতে বাধ্য।
আফগানিস্তান : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে এখনও চলে যায়নি। তাদের মনমতো সরকার জনসমর্থন না পাওয়ায় সরকার দৃঢ় হতে পারছে না। মনে হয় আফগান যুদ্ধ শেষই হবে না, মানুষ মরতেই থাকবে।
পাকিস্তান : পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র ইন্ডিয়াকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াতে খবরদারির সহযোগিতায় নামিয়েছে। কাশ্মির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র এখন ইন্ডিয়ার সঙ্গে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংসের পরিণতি এটা। সোভিয়েতবিরোধী মার্কিন কোয়ালিশনে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংসের পর পাকিস্তান এখন পাশ্চাত্যের কদরে নেই। পার্শ্ব-পরিবর্তন হয়ে গেছে।
উত্তর কোরিয়া : উত্তর কোরিয়া নিয়ে মার্কিনিদের সঙ্গে রেষারেষি হলেও রাশিয়া-চীনের মনোভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নরম হয়ে গেছে। অতীতেও ইউক্রেন, ক্রিমিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি কিছু করার সাহস দেখায়নি। তবে দুর্বলতর মুসলিম দেশগুলোর ব্যাপার হলে, যুক্তরাষ্ট্র রক্তচক্ষু দেখাতেই থাকবে। মার্কিন বিমান, ড্রোন হামলায় মুসলমানরা মরতেই থাকবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, এমনকি নিত্যনতুন মুসলিম দেশে। মুসলিম দেশগুলোকে ধর্তব্যের ভেতরেই নেয় না যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়াসহ কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্র।
উপসংহার : মিয়ানমার, জেরুজালেম, সিরিয়া, আফগানিস্তান, কাতার, ইয়েমেন প্রশ্ন আঞ্চলিক অস্থিরতা বৃদ্ধি করেছে। শুধু উত্তর কোরিয়া সমস্যাটা কিছুটা হালকা হয়েছে রাশিয়ার চাপে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আস্কারাতে ইসরাইল আগ্রাসী নীতি নিয়ে চলছে, চীনের কারণে মিয়ানমার মুসলিম স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে উৎসাহী। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গা প্রশ্নে কিছুটা সোচ্চার। তবে তুরস্কের ভূমিকা সবচেয়ে প্রশংসনীয়। জেরুজালেম ও রোহিঙ্গা উভয় প্রশ্নেই তার নীতি ইনসাফভিত্তিক। তবে আশঙ্কা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আবার অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইবে তুরস্কে। অন্যদিকে সউদী-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্ক মুসলিম বিশ্বের জন্য বিপদের হুঁশিয়ারি। নব্য সউদী নেতৃত্বের কারণে ওআইসি জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল কুশেশ করছে সউদী আরবের নব্য নেতৃত্বের মাধ্যমে ওআইসিকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে। তুরস্ক তা হতে দেবে না। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল অন্য খেলা শুরু করতে পারে যাতে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্মতি দেবে।
লেখক : ইতিহাসবিদ ও কলাম লেখক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
fahimul huda ১ জানুয়ারি, ২০১৮, ৩:৫১ পিএম says : 0
now we should ask help to allah............
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন