দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। সে হিসেবে নির্বাচনের পুরো এক বছর বাকি। এই এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল জুড়ে নির্বাচনই দেশের রাজনীতির প্রধান ইস্যু হিসাবে পরিগণিত হবে। ২০২২ সালেও নির্বাচনই আলোচনায় প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। ক্ষমাতাসীন দল আওয়ামী লীগ রীতিমত ভোট চাওয়া শুরু করেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত ও গণযোগাযোগ বাড়াতে তৎপর হয়েছে। দু’দলই সভা-সমাবেশ, মিছিল করেছে বিভিন্ন উপলক্ষে। বিএনপি বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করেছে। আওয়ামী লীগও সমাবেশ করেছে। এ রকম একাধিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং ভাষণ দিয়েছেন। তাছাড়া ঢাকায় দলটির ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনের আগে এসব পাঁয়তারা হিসেবে গণ্য হতে পারে। দু’দলের এই পাঁয়তারায় মাঠ সমতল ছিল না অবশ্য। সচরাচর যা হয় তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিএনপি তার বিভাগীয় গণসমাবেশগুলো অবাধে করতে পারেনি। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ঠেঙ্গাড়ে বাহিনী পথে পথে বাধা দিয়েছে, হামলা করেছে, হতাহত করেছে। যাবতীয় পরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যাতে গণসমাবেশে লোক হাজির হতে না পারে। ঢাকার সমাবেশ নিয়ে অনেক কাণ্ডকীর্তি হয়েছে। গণসমাবেশের স্থান নিয়ে টালবাহানা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান হয়েছে। নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অবশেষে অখ্যাত গোলাপবাগে গণসমাবেশ করার অনুমতি মিলেছে। বাধা-বিপত্তি, হামলা, মামলা, গ্রেফতার ইত্যাদি সত্ত্বেও বিএনপির গণসমাবেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। পর্যবেক্ষকরা অবাক ও বিস্মিত হয়েছেন। বিএনপির গণভিত্তি নেই, তার সমর্থক সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে বলে যে প্রচারণা আছে, তা অপ্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশেও ব্যাপক লোক সমাগম হয়েছে। অবাধে লোক এসেছে। পরিবহন চালু থাকায়, দলীয় কর্মী ও পুলিশের সহযোগিতায় মানুষ উৎসবের আমেজ নিয়ে নির্ভয়ে সভা-সমাবেশে হাজির হয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনেক আগে থেকেই জোটসঙ্গী বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে দেয়া হয়েছে। তার বদলে দুটি জোট গঠিত হয়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপাৎ আন্দোলনে শামিল হবে। বাম দলগুলোও যুগপাৎ আন্দোলনে রাজি। বিএনপির ১০ দফা ও ২৭ দফার প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। বিএনপি পরবর্তী কর্মসূচী হিসেবে গণমিছিল করেছে। অন্যান্য দল তাদের মতো করে মিছিল করেছে। গণমিছিলও বাধা ও হামলার সম্মুখীন হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন বিএনপির নেতা নিহত হয়েছে। এই নিয়ে গত কিছু দিনে বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আওয়ামী লীগও বসে নেই। আগের জোট তো বহালই আছে। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। জোটের বাইরে আরো সঙ্গী যোগাড় করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। যে যাই বলুক, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ইচ্ছার বাইরে যাবে না। নির্বাচনে দলটি আওয়ামী লীগের সহায়ক ভূমিকাই রাখবে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
আলামতদৃষ্টে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে স্বাভাবিক প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে পর্যবেক্ষকদের মধ্যেও। আগের পুনরাবৃত্তি হবে কিনা কিংবা আদৌ নির্বাচন হবে কিনা, এসব নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ, সুুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক হোক, এই প্রত্যাশা মানুষের। কারণ, তাদের বেশির ভাগই গত দুটো নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ভোট চুরি বা ছিনতাই হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনরা বিনা ভোটে বা জবরদস্তি ভোটে ক্ষমতা কবজা করেছে। আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন দু’টিকে গণতন্ত্রসম্মত বলে স্বীকার করেনি। তারা বরাবরই অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মান, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পূর্বাবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। জাপানি রাষ্ট্রদূত তো রাখঢাক না করেই রাতের ভোটের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। এতে সরকারি মহল যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েছে। জাপান বিষয়টা সহজে নেয়নি। অনেকের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণ যাই থাক এটাই মূল কারণ। অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রসঙ্গে পশ্চিমা বিশ্ব এবার যথেষ্ট তৎপর-সোচ্চার সেটা সরকারি মহলের প্রতিক্রিয়া থেকেই বুঝা যায়।
নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলসমূহের দাবি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়ের প্রত্যাশা, সরকারের পক্ষে এবার উপেক্ষা করা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। আগের মতো কৌশল করে পার পাওয়া কঠিন হবে। এই সঙ্গে এবার মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্রবৃদ্ধি, দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা, ডলার সংঙ্কট, বড় রকমের বাণিজ্য ঘাটতি এবং রফতানি আয়, রেমিট্যান্স ও রাজস্ব আহরণে নিম্নগতির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সরকারকে সারাক্ষণ বিব্রত ও ব্যস্ত রাখবে। সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও জনগণের দুঃখ-দুর্ভোগ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। সেটাও সরকারের বিপক্ষেই যাবে।
নির্বাচন সম্পর্কিত বিরোধীদলগুলোর পুরানো দাবির কোনো নড়চড় নেই। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন চায়। এ জন্য নির্বাচনের আগেই সরকারের পদত্যাগ তাদের কাম্য। তারা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা করে। তাদের মতে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচলকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হলে সেই সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ হবে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা। বিগত দু’টি নির্বাচনে মাঠ সকলের জন্য সমতল ছিল না। নির্বাচনের মাঠকে সবার জন্য সমান করাও তাদের একটি দাবি। বলা বাহুল্য, এ কাজটিও নির্বাচনের সময়ে গঠিত সরকারের ওপর বর্তাবে। দেখা যাচ্ছে, দাবি যতই থাক, মূল দাবি নির্বাচনকালীন সরকার, তা যে নামেই হোক।
সরকার অতীতে এ দাবি মানেনি। না মেনে পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদিকে হাত করে এমন নির্বাচন উপহার দিয়েছে, যার তুলনা ইতিহাসে বিরল। নির্বাচন নিয়ে যত প্রশ্ন থাক, নির্বাচনের মান যত অবনত হোক, সেটা ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়নি। নির্বচান ক্ষমতায় থাকার এক রকম বৈধতা দিয়েছে। পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞাদের অভিমত, পূর্বাপার প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করার মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল ও অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে, যেটা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়েছে। এ ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
বিরোদী দলসমূহের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার তার আগের অবস্থানেই আছে, সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে প্রতিশ্রুতির বাইরে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে বলছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি যখন বলছে, তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না, তখন ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের তরফে তার জবাবে বলা হচ্ছে, কোন দল নির্বাচনে অংশ নেবে, কোন দল নেবে না, সেটা তাদের দেখার বিষয় না। কারো অংশ না নেয়ার কারণে নির্বাচন ঠেকে থাকবে না। নির্বাচন কমিশনও প্রায় একই ভাষায় বলছে, কারো জন্য নির্বাচন বসে থাকবে না। যথাসময় যথারীতি নির্বাচন হবে।
দু’পক্ষের এই অনড় অবস্থানের প্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষক মহল রাজনৈতিক হানাহানি ও সংঘাতের আশঙ্কা করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। দুই নির্বাচনেই ফলাফল একই রকম হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে আগামীতেও ফলাফল ভিন্ন হবে না। কাজেই, দলটির যদি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যেতে হয়, তবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দল কখনো পরাজিত হয় না। বিজয় এবং ক্ষমতায় থাকা তখন নিশ্চিত হয়। সুতরাং, সরকার যেকোনো মূল্যে তার অধীনে নির্বাচন করতে চাইবে। এ জন্য যা করা দরকার, সেটাই করবে। এমতাবস্থায় হানাহানি, সংঘাত, বিশৃঙ্খলা অবশ্যম্ভাবী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, আর একটি নির্বাচনের প্রহসনের ভার বইবার ক্ষমতা দেশের নেই। সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক জনগণ, যাদের দায়িত্ব হলো ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার জন্য সরকার গঠন করা। বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে তারা এই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। তাদের অধিকার ও ক্ষমতা তারা ফিরে পেতে চায়। আগামী নির্বাচনেই চায়। এ জন্য তারা অধীর অপেক্ষায় আছে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতার পালাবদলের আর কোনো বৈধ রাস্তা না থাকায় বিএনপি বা বিরোধীদলগুলো এবার উঠে পড়ে লেগেছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে। ফলে এবার আন্দোলন জোরদার হবে এবং জনগণের অংশগ্রহণও তাতে বাড়বে। আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিবে কিনা, বলা যায় না। তবে সরকারকে যে প্রচণ্ড চাপে ফেলবে সেটা আন্দাজ করা যায়। এই সঙ্গে আন্তর্জাতিক চাপও বাড়বে, যার ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের রাষ্ট্র্রদূতদের তৎপরতা থেকেই সেটা বুঝা যায়। রাষ্ট্রদূতদের দৌড়ঝাপ ও বিভিন্ন মন্তব্য সরকারকে একই সঙ্গে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ করছে। সরকার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে, হুঁশিয়ারি প্রদান করছে। এসবে তাদের নিরস্ত করতে পারবে, তেমন মনে হচ্ছে না। এর মধ্যেই রাশিয়া হঠাৎ করে সরকারের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে এক হাত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও তার জবাব দিয়েছে। বিষয়টি বির্তক যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে শক্তিশালী দুই দেশের এ ধরনের বির্তক বিব্রতকর। বড় বড় শক্তির দ্বন্দ্ব-বিরোধের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া ছোট ও দুর্বল কোনো দেশের জন্য কখনো মঙ্গলকর হয় না। এটা স্মরণ রেখে সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলি যেন এটা মনে না করে, বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। আর সেই সুবাদেই রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছে। যা হোক, এসব কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, যোগযোগ, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি তুলনামূলকভাবে বেশি বিস্তৃত। এ সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ বা চীড় ধরলে আমাদেরই অপরিমেয় ক্ষতির আশঙ্কা।
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা যে উদ্বেগজনক, সেটা কারো অজানা নয়। করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধ সব কিছু উল্টোপাল্টা করে দিয়েছে। জ্বালানি ও খাদ্য সঙ্কট বিশ্বজুড়েই বেড়েছে। আমাদের দেশ তার বাইরে নেই। আমাদের জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা যে কতটা নাজুক, সেটা হাড়ে হাড়ে এখন টের পাওয়া যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের মূল্য হু হু করে বাড়ছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তদের পর্যন্ত নাভিশ্বাস উঠেছে। দারিদ্রের হার ক্রমবর্ধমান। ডলার সঙ্কট এতটাই যে, প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলার মতো ডলারেও টান পড়েছে। রফতানি ও প্রবাসী আয় এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা সূত্রে ডলার আসার প্রবাহে ভাটা দেখা দিয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই তেমন কোনো ভালো খবর নেই। এদিকে সরকারিভাবে জানিয়ে রাখা হয়েছে, খাদ্য সঙ্কটে পাড়ার আশঙ্কা আমাদেরও রয়েছে।
২০২৩ নির্বাচনের বছর। অর্থনৈতিক সঙ্কটাশঙ্কার বছরও তো বটে। এ সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির যদি অবনতি ঘটে, হানাহানি ও সংঘাত সৃষ্টি হয়, তাহলে অর্থনৈতিক সঙ্কট ও জনদুর্ভোগ মহা বিপর্যয়ের রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। অর্থনৈতিক সঙ্কট ও গণদুর্ভোগ শক্তিশালী সরকারকেও ফেলে দিতে পারে। শ্রীলংকার গণঅরভ্যুত্থান ও সরকার পতনের ঘটনা তার অতি সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য নজির। বিষয়টি আমাদের সরকারেরও বিবেচনায় নেয়া দরকার! সরকারকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ও গণদুর্ভোগ মোচনে যথাযথ ভূমিকা পালন করা সম্ভব হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গী। এই রকম একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী দলের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা-অনুরাগের ঘাটতি কারো কাছেই কাম্য হতে পারে না। শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সাল থেকে দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বাধীন সরকার চার টার্ম ক্ষমতায় আছে। এই সময়ে উন্নয়ন অগ্রগতি কম হয়নি। কিন্তু রাজনীতি সঠিক গণতান্ত্রিক ধারায় আসেনি। বার বার এই সুযোগ দলটির বা সরকারের সামনে এলেও কাজে লাগানো হয়নি। আবারও সে সুযোগ এসেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শেখ হাসিনার পক্ষেই দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।
গণতন্ত্রকে সুমন্নত করা এবং বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে দেশের গণতন্ত্রের বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জিত হবে। মনে রাখতে হবে, তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলেই বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কটের উদ্ভব এবং আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। কাজেই, প্রকৃত গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দায় আওয়ামী লীগ ও সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন