বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সরকারের দশম বর্ষে পদার্পণ এবং প্রত্যাশা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গত ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধানমন্ত্রীত্বের ৯ বছর পূর্ণ করে ১০ বছরে পদার্পণ করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়াদসহ বিগত ৯ বছরের একটানা শাসনামলে দেশের জন্য তিনি কী করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ তাঁর ভাষণে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে, এ কথা ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো মহল দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এমন শঙ্কা ব্যক্ত করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আমরা উন্নয়নের যে মহাসড়কে যাত্রা শুরু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে আর পেছনে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই। তাই আসুন, দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। ধারাবাহিকভাবে ৯ বছর দেশ পরিচালনা শেষে তার এ আহ্বান যথার্থ। এ সময়কালে দল এবং সরকারের ওপর তাঁর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য ছিল। এটা তাঁর নেতৃত্ব গুণের এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। এই নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণেই আমাদের দেশের মতো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা পূর্ণ একটি দেশকে দীর্ঘ সময় নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। একটানা ৯ বছর দেশ পরিচালনা শেষে দশম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই।
বাংলাদেশে পরপর দুইবার সরকার গঠনের নজির নেই। শেখ হাসিনা এ নজির স্থাপন করেছেন। তাঁর সরকার দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ বছরে রয়েছে। বিগত ৯ বছরের শাসনামলের দিকে তাকালে দেখা যাবে, দেশে উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে। এটা হওয়াই স্বাভাবিক। সব সরকারের লক্ষ্যই থাকে দেশকে দ্রুত উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাওয়া। শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলেও এটা লক্ষ্য করা গেছে। বলা বাহুল্য, আমাদের মতো স্বল্পোন্নত দেশে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া এবং তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা একটি কষ্টসাধ্য ব্যাপার। উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থ সংকটসহ আমলাতান্ত্রিক নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে। এসব মোকাবেলা করেই উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে দৃঢ় মনোভাব, সাহস এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বিগত ৯ বছরে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিক বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্পের কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আরও কিছু বাকি রয়েছে। সবগুলো প্রকল্প পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে জনগণ তা থেকে সুফল পাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকল্প স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নয়ন করে না, এটি উন্নয়নের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেই হয় না, তা যথাযথভাবে পরিচালনা ও কার্যকর রাখার উপরই প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া নির্ভর করে। সরকারের গৃহীত প্রকল্পগুলোর কাজ এখন চলছে। সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে দৃশ্যমান করার কাজ চলছে। এসব উন্নয়ন কাজ এ বছর শেষ না হলেও তা দ্রুত শেষ করার তাকিদ সরকারের থাকবে। পাশাপাশি মাঝারি ধরনের প্রকল্পের কাজ শেষ করে তা চালু করা হতে পারে। ১০০টি অর্থনৈতিক জোন, গভীর সমুদ্র বন্দর, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ আরও বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সরকার চাইবে এসব অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য পুনরায় নির্বাচিত হতে। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পুনরায় তাদের নির্বাচিত হতে হবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে সুশাসন, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারা এবং গ্যাস, বিদ্যু, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা বলছেন। তাদের মতে, নাগরিক নিরাপত্তা ও জনজীবনে জীবনযাপনে স্বস্তি না থাকা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। যদি হয়, তবে ভাল কথা। যদি না হয়, তবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিকল্প পথও খোলা রাখা উচিত। এটা সরকারের দায়িত্ব। আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়েই রাজনীতিতে বড় সংকট দেখা দেবে। দেশ অস্থিতিশীলতার মুখে পড়বে, যা মোটেই কাম্য হতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার দায়িত্ব সরকারের। আর যে যত কথাই বলুক না কেন, এ ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তার উপরই নির্ভর করছে, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতার বিকল্প নেই। রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক দলগুলোর সাথে সরকারের সমঝোতা অপরিহার্য। তা নাহলে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। দেশ অশান্তির কবলে পতিত হতে পারে। অনাকাক্সিক্ষত এ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার মাধ্যমে। তার সিদ্ধান্তের উপরই সবকিছু নির্ভর করছে। দেশের কল্যাণে রাজনীতিবিদদের সেক্রিফাইস করতে হয় এবং এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে তার লিগ্যাসি বহনের দায়িত্ব দেয়া হয়। পৃথিবীতে কেউই চিরদিন বেঁচে থাকে না। বেঁচে থাকে তার কর্ম । রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে তাদের কর্ম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে এবং এ ধারবাহিকতায় তাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের অনুসরণ করে অমর করে রাখে। শেখ হাসিনা শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি একজন অভিভাবক। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কী কাজ করেছেন এবং কী রেখে যাবেন, তা জনসাধারণ মনে রাখবে। আমরা মনে করি, দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন এবং অগ্রগতির ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখাবেন বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন