মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রশ্ন : সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর শান ও মান কেমন ছিল?
উত্তর : আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের জন্য রাসুল (সাঃ) এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব, আয়াত ২১।) এ আয়াতের ব্যখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ) লেখেন, ‘এ আয়াত দ্বারা প্রমাণীত হয়েছে, প্রিয় নবী (সা.) এর সকল কথা, কাজ ও অবস্থা উম্মতের জন্য অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় আদর্শ। (তাফসিরে ইবনে কাসীর।) রাসুল (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আল্লাহ তায়ালা আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতে সব নবীদের থেকে তাঁর রিসালাতের ব্যাপারে অঙ্গীকার নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! ওই ওয়াদার কথা স্মরণ করুণ, যা আমি সব নবীর কাছ থেকেই নিয়েছি। আপনার কাছ থেকে, নূহের কাছ থেকে, ইবরাহীমের কাছ থেকে, মূসা ও মরিয়ম তনয় ঈসার কাছ থেকে।’ (সূরা আহযাব, আয়াত ৭) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার কাছ থেকে কখন অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে? রাসুল (সা.) বললেন, আদম (আ.) যখন দেহ ও রুহের মাঝে ছিল। (মুসতাদরাক হাকেমে) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল বলেছেন, ‘আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সব নবীর প্রথমে, আর পাঠানো হয়েছে সবার শেষে। (তাফসীরে তাবারী)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর কাছে প্রিয়তম নবী পাঁচজন। নূহ (আ) ইবরাহিম (আ) মূসা-ঈসা (আ) ও মুহাম্মাদ (সা)। তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হলেন মুহাম্মাদ (সা.)। তাই আল্লাহ তায়ালা নবীদের অঙ্গীকারের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে সব নবীর পর বিশেষভাবে পাঁচজন নবীর নাম উল্লেখ করেছেন এবং মুহাম্মাদ (সা)-কে সর্বপ্রথম উল্লেখ করে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব সমুন্নত করেছেন। (ইবনে কাসীর।) অন্যান্য নবীগণ আল্লাহর কাছে যেসব বিষয় দোয়া করে পেয়েছেন, আল্লাহ তায়ালা সেগুলো প্রিয় নবীকে (সা.)কে হাদিয়া দিয়েছেন। সাইয়্যেদেনা আদম (আ.) মাগফিরাতের জন্য তিনশ বছর কেঁদেছেন, আর রাসুল (সা.)কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘আমি আপনার আগের-পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। (সূরা ফাতহ, আয়াত ২।) সাইয়্যেদেনা মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দিন। আমার কাজকে সহজ করে দিন। (সূরা ত্ব-হা, আয়াত ২৫-২৬।) আর আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)কে বললেন, ‘আমি কি আপনার হৃদয়কে প্রশস্ত করে দেইনি? আপনার বোঝা হালকা করে দেইনি? (সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত ১-২।) ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর কাছে হেদায়াতের দোয়া করেছেন। আল্লাহ তায়ালা দোয়া ছাড়াই রাসুল (সা.)কে হেদায়াত দিয়েছেন। সুরা দোহায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি আপানাকে আত্মহারা অবস্থায় পেয়েছেন, তারপর তিনিই আপনাকে পথ দেখিয়েছেন। (সূরা দোহা, আয়াত ৭।) রাসুল (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্ব-মহত্ব বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা কোরআন দিয়ে রাসুল (সা.) এর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। নিজের দীদারে ধন্য করেছেন। সভ্যতার চরম মূহুর্তে মানবতার ত্রানকর্তা হিসেবে প্রেরণ করে সব নবীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। বিশ্ব সভ্যতার যে চরম সংকটকালে রাসুল (সা.) প্রেরিত হয়েছেন, আর কোন নবীই এত সংকট মোকাবেলা করেননি। প্রত্যেক নবীই ছোট্ট পরিসরে দাওয়াতের দায়িত্ব পেয়েছেন। রাসুল (সা.) বিশ্বব্যপী সমাজ সংস্কারের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রত্যেক নবী আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) এর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন-মর্যদা বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহ তাবারক ওয়া তায়ালা বলেন, ‘আপনার যিকরকে অর্থাৎ মর্যাদাকে আমি সমুন্নত করেছি। (সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত ৪।) এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম বাগাভী (রহ) লিখেন, ‘রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ) কে এ আয়াতের তাৎপর্য জিজ্ঞেস করলেন। জীবরাইল (আ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যখন আমাকে স্মরণ করা হবে, তখন আপনাকেও স্মরণ করা হবে।’ ইমাম জাওজী (রহ) যাদুল মুসীর ফী ইলমিত তাফসীরে লিখেন ‘দুনিয়াতে যেমনিভাবে আপনার যিকিরকে সমুন্নত করেছি আখেরাতেও আপনার যিকিরকে সমুচ্চ করব।’
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আনিসুর রহমান জাফরী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন