শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশের অবস্থা ভয়াবহ ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে বিএনপি নির্বাচনের নামে নাটক হচ্ছে -মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, মানুষ জীবন নিয়ে শঙ্কিত। ৪৫ বছর পরে দেশ ভয়াবহ অবস্থার মতো এখন মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ গণতন্ত্র নিয়ে খেলা হচ্ছে। নির্বাচনের নামে নাটক হচ্ছে। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। গতকাল এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো নির্বাচনের নামে একটি নাটক হচ্ছে। প্রহসন হচ্ছে। ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেই পার্লামেন্ট, সেই প্রধানমন্ত্রী কী জনগণের দ্বারা নির্বাচিত? এই পার্লামেন্টে যে আইন পাস হচ্ছে তা কী জনগণের কোনো কাজে আসবে?
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে যে নির্বাচন কমিশন আছে তাদের একমাত্র কাজ হচ্ছে, সরকারের লোকেরা যা বলছে তার অনুমোদন দেয়া।
তিনি বলেন, প্রহসনের নির্বাচনের আগে ইসি বললেন, প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তারপরে নির্বাচনে ২২ জন লোকের প্রাণহানি হলো। জনগণের ভোট কেড়ে নেয়া হল। অথচ ইসি নির্লজ্জভাবে বললেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০-এর যে প্রস্তাব দিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আসুন জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। জনগণের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফিরিয়ে দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অবদান অস্বীকার করে প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ‘বিকৃতি’ করছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাকে অস্বীকার করছে। তাতে কিছু আসে যায় না। ইতিহাস তাকে ধারণ করেছে। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে গেছে তার নাম।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের। তারা ঘোষণা না দিয়ে পালিয়ে গেলেন। তখন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এ সত্য কথা বলায় শফিউল্লাহকে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তবে সত্য ধ্রুবতারার মতো সত্য। সত্যকে কখনও আড়াল করা যায় না।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তনুকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য নারী নেত্রীদের জেগে উঠতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রবাসী দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করার জন্য অবদান রাখছে। সেখানে আমরা কি দেখছি, এই সরকারের আমলে শেয়ার মার্কেট কীভাবে লুট হয়েছে। সেই লুটেরা আবার সাহস পেয়েছে আজকে আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুট করে নিয়ে গিয়েছে। ঘটনার পর গভর্নর অনেক আগে জেনেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কিন্তু সেটা দেশের মানুষকে জানানো হয়নি। আমি এখান থেকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, এদেশটা কারো বাপের লালপট্টি নয়, কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। দেশের রিজার্ভ লুট হয়ে যাচ্ছে কেনো মানুষ জানতে পারলো না। একমাস পরে বিদেশে যখন এ ব্যাপারটি প্রকাশ হয়ে গেলো, তখন বাংলাদেশ স্বীকার করতে বাধ্য হলো।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লোক দেখানো একটা পদত্যাগ করে কি বুঝাতে চেয়েছেন জানি না। যদি তিনি দায়িত্ব নিয়ে থাকেন তাহলে এখনো কেনো সরকার গ্রেফতার করে না। এর সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে এনে সেটা বের করে নাÑ এটাই আমাদের আজকে প্রশ্ন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হ্যাকিং করে অর্থ লোপাটের বিষয়ে কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপের কথা উল্লেখ করে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, তারা (বিশেষজ্ঞ) বলতে চায়, কোনো হ্যাকিং হয় নাই। বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিং করা সম্ভবপর নয়। এখানে ঢোকা অসম্ভব যে কম্পিউটারাইজড সিস্টেম আছে। এটা একেবারে লোহার দেয়ালের মতো। বঙ্গভবনের যদি চুরি হয়, বঙ্গভবনে বাইরের থেকে কেউ চুরি করা সম্ভবপর? অসম্ভব। এতো গার্ড, এতো পাহারা, এতো কিছু। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। এখানে বাইরের থেকে কেউ কিছু করে নাই। কোনো হ্যাংকি হয় নাই।
ডেসনিটি, হলমার্কসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হওয়ার কথাও বলেন মওদুদ।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, শুধু তদন্ত কমিটি করলে হবে না। এটার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ঘটনা ঘটেছে, সেটার তদন্ত করা উচিত বলে আমি মনে করি। অতীতের এমন আরো টাকা চলে গেছে কিনাÑ আমরা তো জানি না। এটাও তদন্ত করে দেখা দরকার। দেশের মানুষ অন্ধকারে আছে। ভবিষ্যতে যাতে আর এরকম ঘটনা না ঘটে সেজন্য এই ধরনের তদন্ত হওয়া উচিৎ।
গভর্নর আতিয়ার রহমানের পদত্যাগ সম্পর্কে তিনি বলেন, শুধমাত্র তিনি পদত্যাগ করেছেন, ঠিক আছে। ভালোই করেছেন। কিন্তু তার পদত্যাগে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের সেই টাকা যারা চুরি করেছে, তাদেরকে আজকে কী ধরা সম্ভবপর হবে? দেশের মানুষ জানতে চায়। হবে না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ও সরকারের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা এর সঙ্গে নিশ্চয়ই জড়িত আছেন। যার জন্য এদেশের মানুষ কখনোই এই টাকাটা ফেরত পাবে না বলে আমি মনে করি।
নতুন গভর্নর নিয়োগ প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে শুননাল সোনালী ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যে কলঙ্ক ছিলো, যাকে নিয়ে তাকে নাকী বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর করা হয়েছে। আমি জানি। এ ব্যাপারে সাংবাদিক ভাইদের বলব, এটা ইনভেস্টিগেট করে দেখবেন। তিনি কি করে একটা দায়িত্বের নেতৃত্ব দিতে পারেন।
সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মুখে ফ্যানা তুলে তারাই গণতন্ত্রকে বার বার হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ ’৭২ সালে গণতন্ত্র হত্যা করেছে। এখনো করছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যন্ত সকল নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার ঘোষণায় নেতৃত্বহীন জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে সাহস যুগিয়েছিল। জিয়াউর রহমান লুটপাট করে নাই।
তিনি বলেন, আমরা একটি গজবের অপেক্ষায় আছি। এ গজব এমনি এমনি হবে না। আন্দোলন করে গজব তৈরি করতে হবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলন করে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, মহিলা দলের সভানেত্রী নূরী আরা সাফা, স্বেচ্ছাসেবক সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনির হোসেন, দলের ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ। এছাড়াও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মাদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বক্তব্য রাখেন।
দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সহ তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী হেলাল প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন