ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ৭ম ব্যাচের (৪র্থ বর্ষ) শিক্ষার্থীরা সম্প্রতি ঘুরে এলো বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি বান্দরবান। ক্লাসের বন্ধুদের নিয়ে প্রথম এতো বড় ট্যুর তাই আগে থেকেই সবার মধ্যে একটা এক্সাইটিং ব্যাপার কাজ করছিল। পার্বত্যাঞ্চলে ট্যুরে যেতে গেলে কী কী ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে কী সব সাজ সরঞ্জাম নিতে হবে তা প্রথম থেকেই ফেইসবুক গ্রুপে আলোচনা হতে লাগলো। কে কে যাচ্ছে, কে কী মজা করবে ট্যুরের পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এসবকিছু নিয়ে কেমন একটা উৎসবের আমেজ বইতে লাগলো পুরো ডিপার্টমেন্ট জুড়ে। চার রাত আর তিন দিনের ট্যুরে আমরা কোথায় কখন কিভাবে যাবো আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হয়েছিলো। সবাই শাহবাগ থেকে বাসে উঠলাম সেলফি চেকড ইন ট্রাভেলিং টু বান্দরবান এসব স্ট্যাটাস ট্যাগে সবার ফেইসবুক টাইমলাইন অলরেডি ছেয়ে গেছে।
দুপুরে চাঁদের গাড়িতে করে বের হলাম স্বর্ণমন্দিরের। স্বর্নমন্দিরের স্বর্ণালী রঙ সবাইকে কেমন রঙিন করে তুললো মুহূর্তের মধ্যে। আমাদের ফটোগ্রাফার বন্ধু আনিসের সামনে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলের ফটোতুলার বায়না বেচারা কে নাস্তানাবুদ করে ছাড়লো। অতঃপর স্বর্ণমন্দিরের স্বর্ণালী রঙ মনে মেখে এবার আমাদের যাত্রা শুরু হলো মেঘলার উদ্দেশ্যে। চাঁদের গাড়ির উন্মত্ত ছাদ আর আমাদের হইহুল্লোড় হর্ষধ্বনি যেনো পুরো বান্দরবানবাসীকে জানান দিচ্ছে ঢাবিয়ানরা এখন বান্দরবানে। মেঘলার ঝুলন্তব্রিজ দর্শন, বোটে ছড়া, সেলফি আর গ্রুপ ফটোবাজির শেষে এবার আমাদের গন্তব্যস্থল নীলাচল। মেঘলা থেকে চাঁদের গাড়িতে করে রওনা হলাম নীলাচলের উদ্দেশ্যে। নীলাচলে গিয়ে মনে হলো নীলাচল যেন তার আদরের নীল আচল বিছিয়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। নীলাচলের ঠা-া সুশীতল হাওয়া সবাইকে নিমিষেই নতুন প্রাণ দান করলো। সবাই নীলাচলের প্রাকৃতিক উদারতা আর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না। নীলাচলের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো সূর্যাস্ত। ভোরে চোখে মুখে ঘুম তন্দ্রা মেখে হোটেল থেকে চাঁদের ঘাড়িতে করে নীলগিরির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যখন নীলগিরিতে পৌঁছালাম সূর্যমামা তখনো ঘুম থেকে উঠেনি। আমাদের ডাকাডাকিতে উনি কুয়াশার চাদর গায়ে জড়িয়ে এবার ঘুম থেকে উঠলেন। নীলগিরিতে সূর্যীমামার এহেন রূপ সবাইকে বিমুগ্ধ করলো। নীলগিরির এই সূর্যোদয় যদি কেও না দেখে তাহলে তার জীবন ষোল আনাই মিছে বলে মনে হলো।
নীলগিরি থেকে এবার রওনা হলাম রুমা উপজেলার উদ্দেশ্যে। সেখানে কিছু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর গাইড নিয়ে বগালেকের উদ্দেশ্যে আমাদের গাড়ি রওনা হলো। রোমায় পৌঁছে এবার ঋঝুক জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় উঠলাম। নৌকায় চড়ে ঋঝুকে পৌঁছার সময়টা অনেকবেশি উপভোগ্য ছিলো। ঝর্না দেখে সাহিদের চার চাকা মার্কা দৌড় আর তাইসিনের সেই ভিডিও আমরা ট্যুরে যে কতটুকু প্রাণবন্ত ছিলাম তার এক ক্ষুদ্র প্রমাণ হয়ে রইলো। ঝর্ণায় গোসল আর সাঙ্গু নদীতে লাফালাফি ঝাপাঝাপি শেষে এবার আমাদের হোটেলে। আমাদের ট্যুর সমাপ্ত হলো কিন্তু এর রেশ আর স্মৃতিগুলো আমাদের হৃদয়পটে অক্ষয় হয়ে থাকবে সারাজীবন।
ষ আবদুল হালিম
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন