বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে বাকৃবি

প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাঙালি জাতির হাজার বছরের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের সর্বশেষ স্মরণীয় সময় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ। আর পাকিস্তানি হায়েনাদের বর্বর নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে গড়ে তোলা এ দেশের বীর জনতার ঢালের কাছে এ মাসেই মাথা নত করতে বাধ্য হয় হায়েনারা। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করতে মুক্তিকামী জনতা যেভাবে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেমেছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সেই মুক্তির সংগ্রামে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও (বাকৃবি) রেখেছিল অসামান্য অবদান। পাকিস্তানীদের বর্বর নির্যাতন, নিপীড়ন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে ওই যুদ্ধে দেশের লাখো কোটি জনতার পাশাপাশি বাকৃবির ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। লিখছেন মো.আব্দুর রহমান...
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরকে সেদিন রক্তে রঞ্জিত করেছিল পাকিস্তানি হায়েনারা। স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল শিক্ষাব্যবস্থাকে। ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে রয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জানা-অজানা অনেক ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডায়েরিতে এদের মধ্যে একজন শিক্ষকসহ ১৮ জন শহীদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে তাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের নামকরণ হয়েছে যথাক্রমে শহীদ জামাল হোসেন হল, শহীদ শামসুল হক হল ও শহীদ নাজমুল আহসান হল। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অতিথিশালায় স্থাপন করা হয়েছিল আঞ্চলিক কমান্ড হেডকোয়ার্টার। সোহরাওয়ার্দী ও ফজলুল হক হলকে করা হয় সেনানিবাস। ব্রহ্মপুত্র নদের তীর সংলগ্ন একটি বাড়ীকে করা হয় টর্চার সেল। টর্চার সেলের পাশেই লাশ পুঁতে রাখা হতো। জানা যায়, ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার স্কুল-কলেজ থেকে রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় ধরে আনা অসংখ্য নারী-পুরুষকে হত্যার পর এ জায়গায় মাটিচাপা দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জায়গাটিকে চিহ্নিত করে বধ্যভূমি ঘোষণা করেছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের শত শত মানুষের নির্যাতনের চিহ্ন নিয়ে নীরবে আজও সাক্ষী দিচ্ছে বধ্যভূমিটি।
ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) সফলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুক্তিযেদ্ধা। এ ছাড়া প্রফেসর ড. রফিকুল হক ভারতের একটি ক্যাম্পে প্রশিক্ষক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খোলা হলো মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ফার্মগুলোয় চালানো হয় লুটপাট। উপাচার্য ড. কাজী ফজলুর রহীম, ডিন শামসুল ইসলাম, ড. শফিকুর রহমান, ড. মোস্তফা হামিদ হোসেনকে লাঞ্ছিত করে পাক আর্মিরা। ৯ ডিসেম্বর রাতের বেলায় পলায়নপর্বে হানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন অংশ বোমা মেরে বিধ্বস্ত করে যায়, ভস্মীভূত করে যায় কয়েকটি ছাত্রাবাসের লাখ লাখ টাকার বই ও আসবাবপত্র। ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিজয়ের বেশে দলে দলে প্রবেশ করতে থাকেন মুক্তিপাগল ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রক্তে ভেজা বিশ্ববিদ্যালয়ে উড্ডীন করা হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। বিভিন্ন হলের ফ্লোরে রক্তের কালো দাগ এখনো রয়ে গেছে।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকরের দাবি আজ জাতির মুখে মুখে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের জন্য নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের এ দেশের মাটিতেই উপযুক্ত শাস্তির মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করা- এখন সময়ের দাবি।
ষ মো. আব্দুর রহমান

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন