বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

ঐতিহ্যবাহী ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল ইসলাম

ক্যামব্রিজ, পৃথিবীর প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ (টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঈধসনৎরফমব)। বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সফলতা অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক আগে থেকেই সুপরিচিত। ফলে এখানকার শিক্ষার্থীরা বিশ্বের যে কোন স্থানে বিশেষ সম্মান পেয়ে থাকেন। দ্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০১৪-১৫ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে ন্যাচারাল সায়েন্স শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বরাবরের মত প্রথম স্থান ধরে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্যান্টাব্রিজিয়ান (ঈধহঃধনৎরমরধহ) বিশেষণে অভিহিত করা হয়। বিজ্ঞানী আইজাক নিউটন, সাহিত্যিক ফ্রান্সিস বেকন, গণিতবিদ অগাস্টাস ডি মর্গান, রসায়নবিদ রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন, কম্পিউটারের জনক চার্লস ব্যাবেজ, পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জন উইলিয়াম স্ট্রাট, ৩য় ব্যারন রেলি, জে জে টমসন, আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, নিলস বোর, পল দিরাক, চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মরিস উইলকিন্স, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন, ব্রিটিশ তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং, পদার্থ বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, কবি আল্লামা ইকবাল, সাহিত্যিক এডওয়ার্ড মরগ্যান ফরস্টার, কবি লর্ড বায়রন, জন মিলটনসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
ক্যাম্পাস
প্রাচীন নথিপত্র অনুসারে, ১২০৯ সালে অক্সফোর্ডের কিছু প-িত ব্যক্তি স্থানীয় লোকদের সাথে বিবাদের জের ধরে শহর ছেড়ে চলে যান এবং ক্যামব্রিজ শহরে এসে নিজেদের সংগঠন গড়ে তোলেন। এটিই পরে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ শহরে অবস্থিত। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসের আয়তন ৩,৬৬,৪৪৪ বর্গমিটার। এর মধ্যে ১৫ মিলিয়ন বই সমৃদ্ধ ১১৪টি লাইব্রেরি, কলা, শিল্প ও বিজ্ঞান বিষয়ক ৮টি জাদুঘর, ১টি ভোটানিক্যাল গার্ডেনসহ আরো অনেক কিছু রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আরো ৩১টি কলেজ রয়েছে।
শিক্ষা কার্যক্রম
ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজে আন্ডার গ্রাজুয়েশন, পোস্ট গ্রাজুয়েশন, পার্ট টাইম কোর্স, এক্সিকিউটিভ ট্রেনিং, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ সকল স্তর মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। একাডেমিক স্টাফ ৬৬৪৫ এবং অ্যাডমিন স্টাফ ৩১৭৮ জন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মিলিয়ে একশর অধিক বিভাগ রয়েছে। আর্টস ফ্যাকাল্টিতে সর্বমোট ২০টি বিভাগ আছে। এগুলো হল অ্যাঙ্গলো-স্যাজন, নৃতত্ত্ববিজ্ঞান, আর্কিটেকচার, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত শিক্ষা, ক্ল্যাসিক, অর্থনীতি, শিক্ষা, ইংরেজি, জিওগ্রাফি, হিস্ট্রি অব আর্টস, ভূমি ও অর্থনীতি, আইন, লিনগুইস্টিক, ব্যবস্থাপনা, মডার্ন ল্যাংগুয়েজ, মিউজিক, ফিলোসফি, পলিটিক্স এন্ড সাইকোলজি, থিওলজি এন্ড রেলিজিয়াস স্টাডি। সায়েন্স ফ্যাকাল্টির অধীনে আরও নয়টি বিভাগ : কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সাইন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, মেডিসিন, ন্যাচারাল সায়েন্স (১৮টি আলাদা বিষয়) ও ভ্যাটেরিনারি এডুকেশন।
খরচ
পড়াশোনার বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ব্যবস্থায় থাকা-খাওয়ার সুবিধা নিলে একজন শিক্ষার্থীর বার্ষিক খরচ ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ পাউন্ড পড়ে। তবে এই বিশাল অংকের টাকা স্কলারশিপের মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুযোগ করে দেয়। সিঙ্গেল রুম, ডাবল রুম, এমনকি ফ্যামিলি নিয়ে থাকার মত রুমেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
আবেদন প্রক্রিয়া
ক্যামব্রিজে ভর্তির জন্য আবেদন করার জন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে আইইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৭ থাকতে হবে। আবেদনপত্র গৃহীত হবার পর প্রার্থীকে আরো কয়েকটি পরীক্ষা দিয়ে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। আর্টস অনুষদের কোর্সগুলোতে স্নাতক ভর্তির ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ওপর দক্ষতা ও মানসিকতা যাচাই করা হয়। তবে মেডিসিনের কোর্সে ভর্তির জন্য ইংরেজির পাশাপাশি একটি বায়ো মেডিকেল এডমিশন টেস্ট নেয়া হয়। এছাড়াও আইন অনুষদের ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যাশনাল এডমিশন টেস্ট বা এলএনএটি নামক পরীক্ষা নেয়া হয়। এ পরীক্ষা দিতে সরাসরি ইংল্যান্ডে যাবার প্রয়োজন হয় না। ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দেশে কিংবা পার্শ্ববর্তী দেশে এসে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। পরীক্ষায় কৃতকার্য প্রার্থীদের অফার লেটার দেয়া হয় এবং সে অনুসারে সে ব্রিটিশ ভিসা ব্যবস্থা করতে পারে। ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ও ফি সম্পর্কে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরামর্শ দিয়ে থাকে। এছাড়া ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে কিছু তথ্যগত সহায়তা পাওয়া যাবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়। আর এই জন্য আবেদন প্রক্রিয়া তার আগের বছর অক্টোবর মাসে শুরু করতে হবে। যদি আপনি ২০১৭ সালে ভর্তি হতে চান, তবে ২০১৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে ফরম পূরণ করে পাঠাতে হবে। আরো বিস্তারিত জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট (যঃঃঢ়://িি.িপধস.ধপ.ঁশ) ভিজিট করতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন