শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের উপাসক হবেন না

পুলিশের প্রতি রিজভীর আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার দাবি করে তাদের উপাসক না হতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, পুলিশকে দলস্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে সুকৌশলে পুলিশের মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের (পুলিশ) চিন্তাভাবনা করা দরকার। জনইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সুনাম নষ্টের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ধসে যায়। আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় পুলিশের নিরপেক্ষতা এখন জনগণের কাছে হাস্যকর জায়গায় ঠেকেছে। স্বাধীন দেশে বিরোধী দলের ওপর পুলিশের উন্মত্ত হামলা মানুষকে পাক হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। দেশের জনগণ কেন আপনাদের আওয়ামী অপশাসন ঠেকানোর লাঠিয়াল বলে ভাববে? গতকাল (রোববার) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত পাঁচ দিনে ৫০০ শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সরকার দুরন্ত গতিতে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বেপরোয়া গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের গোয়েন্দা পুলিশ আকস্মিক ঝাপটা মেরে তাদের আটক করছে। লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা চলাকালে ও সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পর রাস্তা থেকে প্রায় ৩৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে। এর আগে আমান উল্লাহ আমান, নাজিম উদ্দিন আলম এবং গত শনিবার সভা শেষে ফেরার সময় ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুককে গ্রেফতার করে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ।
‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, গণগ্রেফতার নয় সন্ত্রাসী ধরা হচ্ছে, পুলিশের প্রতি ভালোবাসা বাড়ছে’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, দেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, ছাত্র, যুবক ও মহিলাসহ বিএনপি ও বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীদের ধরার জন্য চিরুনি অভিযান, আটক ও বাসায় বাসায় হামলার পরও ভালোবাসা বাড়ছে? গুম, খুন ও বিচারবহির্র্ভূত হত্যার কথা না হয় বাদই দিলাম। হায় সেল্যুকাস! সরকারের অঙ্গ সংগঠনের ভ‚মিকা পালন করেছে বলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা বলছেন। বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের ওপর নির্যাতন তো দৈনন্দিন ঘটনা, একটি অরাজনৈতিক ও দেশের স্বার্থের পক্ষে সংগঠন তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির মিছিলে পুলিশের উন্মত্ত হামলায় অধ্যাপক আনু মোহাম্মদের পা ভেঙে দেয়াসহ তাদের অসংখ্য বরেণ্য ব্যক্তিকে মারাত্মক আহত করা হয়। সেটিও কেউ ভুলে যায়নি।
পুলিশকে দেশমাতৃকার রক্ষক উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনাদের অবদান নিঃসন্দেহে অবিস্মরণীয়। ২৫ মার্চের কালোরাত্রে পাক হানাদার বাহিনী প্রথমেই রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। দেশমাতৃকা রক্ষায় আপনাদের আত্মদান মানুষ এখনো মনে রেখেছে। তাই দলীয় স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
দেশ এখন ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এখন গণতন্ত্রহীনতাকে বলা হচ্ছে গণতন্ত্র, কণ্ঠরুদ্ধ করাকে বলতে হবে বাকস্বাধীনতা, হয়রানি আর অবিচারকে বলতে হবে বিচার। চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের লড়াই, প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু নির্যাতন, সরকারি ব্যাংকগুলো লোপাটসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, একের পর এক কালাকানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পরও বলতে হবে দেশে সুশাসন চলছে। চালের দাম ৭০ টাকা হলেও বলতে হবে চাল সস্তা। ধমক ও হুঙ্কারসর্বস্ব রাজনীতির বিরোধিতা করলেই আওয়ামী বিচারের কাঠগড়ায় সেই হবে আসামী। কিন্তু এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে জনগণ শাসকের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে বন্ধন ছিন্ন করাকেই অনেক মহৎ কাজ বলে মনে করে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জাল নথির ওপর ভিত্তি করে অসত্য মামলায় ধারাবাহিক হয়রানি ও হেনস্তার পর ৮ ফেব্রুয়ারির সিদ্ধানের জন্য অপেক্ষা করছে জনগণ। এখানে সরকারের প্রতিশোধ স্পৃহার প্রতিফলন ঘটে নাকি ন্যায় বিচার হয় সেটিই এখন অবলোকন করার বিষয়। ন্যায়বিচার হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে না।
ভোটের প্রচার শুরুর জন্য খালেদা জিয়া সিলেট যাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, তিনি এ দেশের একজন শ্রেষ্ঠ সুফি সাধকের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সিলেট যাচ্ছেন। অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন