স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এ রায়ের সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি বলেন, রায়ের আগে সংবাদ সম্মেলন পৃথিবীতে বিরল। বাংলাদেশেও এমনটা এর আগে হয়নি। তিনি রায়ের আগে সংবাদ সম্মেলন করে, মিথ্যাচার ও উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়ে আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের জবাব দিতে এ সম্মেলনের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বারবার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আদালতের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন হতে পারে না। তাদের আন্দোলনের হুমকি অচিরেই ফাঁকা বুলিতে পরিণত হবে। বিএনপির মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না। বিএনপির হুমকীতে আওয়ামীলীগ পাত্তা দেয় না। তিনি বলেন, বিশে^র কোথায় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় না। ভারতের জয়ললিতা ও লালু প্রসাদ যাদবের মত বড় নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতের রায় হলেও সেখানে কোন বিশৃঙ্খলা হয়নি। বিএনপির হুমকিতে আওয়ামীলীগ পাত্তা দেয় না।
বিএনপিকে বাংলাদেশ নালিশ পার্টি অভিহিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলা আওয়ামী লীগের আমলে নয়, তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়ে করা। সরকার আদালতের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই এ সরকারের আমলে মন্ত্রী , এমপি ও তাদের সন্তানরা আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন, কেউবা জেল খেটেছেন। কিন্তু বিএনপি নিজেদের অপরাধ ঢাকতে আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অতীতের মত এবারও তাদের আন্দোলনের স্বপ্ন ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে। বিএনপির মরা গাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না।
দলের নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে জয়ী হতে হলে আওয়ামী লীগের উন্নয়নমুখী রাজনীতি জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিএনপির হঠকারি আর মিথ্যার রাজনীতিকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এত হতাশ হওয়ার কী আছে, এই রায়ের পর, আপীল করার ব্যাপার আছে তা না হলে রাষ্ট্রপতি আছেন। আমাদের রাষ্ট্রপতি তো উদার তার কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি মাফ করে দিতে পারেন। আমি মনে করি তিনি মাফ করে দিবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বেগম খালেদা জিয়ার দেয়া বক্তব্য, ‘সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীতে তথা সমস্ত প্রশাসনিক জায়গায় তাদের লোক আছে তারা যেন ভয় না পায়’ এর প্রতিক্রিয়ায় কাদের বলেন, আমার কথা হল-তিনি এবং তার নেতারা তাহলে কেনো ভয় পাচ্ছেন? এসব কথা বলা যে, অন্যায় এটাও কী তিনি বুঝে না?
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেত্রী বলেছেন এই রায় প্রধানমন্ত্রী লিখে দিয়েছেন। এটা কী আদালত অবমাননা নয়? তিনি বলেছেন, আদালত যতি ইতিবাচক রায় দেন তাহলে মেনে নেবেন না হলে আন্দোলন করবেন এই বক্তব্য রায়ের আগে দেয়া কী আদালত অবমাননা নয়? রায়কে আইনীভাবে মোকাবেলা না করে, আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে, আইনীভাবে মোকাবেলা কথা না বলে; অপরাজরনীতির কৌশল অবলম্বন করেছেন। নিজের অপরাধকে ঢাকার জন্য পুরো জাতিকে জিম্মি করে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
কাদের বলেন, আপনি নিরাপরাধী হলে আদালতে গিয়ে প্রমাণ করুন। আদালত তো কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। আদালত অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। তিনি বলেন, জনগণের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জানমালের নিরাপত্তা দিতে আওয়ামী লীগ বদ্ধ পরিকর। আমরা কোনো প্রকার ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করি না, প্রতিহিংসা করি না। কাউকে তা করতেও দেয়া হবে না। তাদের বোঝা উচিত যে, ষড়যন্ত্র করে, সংবাদ সম্মেলনে মায়া কান্না করে সহিংসতা করে দুর্নীতি ঢাকা যায় না।
রায়কে কেন্দ্র করে সারাদেশের সংখ্যালঘু তথা সাধারণ মানুষের উপর হামলা হলে আওয়ামী লীগ কী ব্যবস্থা নিবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, পুলিশের কাছে কিছু ইনফরমেশন আছে। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রশাসন কাজ করছে। কোনো রকম অন্যায় আচরণ সহ্য না করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি। এসময় বিএনপির বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহŸান জানান ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একটি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি ও আতংকের সৃষ্টি করা হয়েছে এটা তো আগে কখনো হয় নি। এবারই প্রথম। বিএনপি তাদের পুরোনো কৌশলে গিয়ে আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতিতে ফিরে যাওয়ার উস্কানি দিচ্ছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও তো মামলা হয়েছে। তিনি তো নিয়মিত আদালতে গিয়েছেন। জামিন নিয়েছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। তাহলে বেগম খালেদা জিয়া কেনো আইনের উর্ধ্বে উঠে যাবেন। তাহলে এই মামলার দায় নেবে এতিমরা?
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের মুকল বোস, দীপু মনি, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, হাছান মাহমুদ, অসীম কুমার উকিল, আবদুস সোবাহান গোলাপ, শামসুন্নাহার চাঁপা, আমিনুল ইসলাম, বিপ্লব বড়ুয়া, এসএম কামাল, আনোয়ার হোসেন, রেমন্ড আরেং প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন