লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে জোর করে ঢুকে ভাঙচুর করেছেন বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার নেতা-কর্মীরা । একপর্যায়ে তারা সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুর করেন। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগে প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত বিএনপি কর্মীরা হাইকমিশনার নিচতলার অভ্যর্থনাকক্ষে হট্টগোল করেন। হাইকমিশনার বিভিন্ন কর্মকর্তার নাম ধরে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। এ ঘটনায় পুলিশ যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নাসির আহমদ শাহীনকে আটক করেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে যুক্তরাজ্য বিএনপি। স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চলা ওই বিক্ষোভে দুই শর বেশি নেতা-কর্মী যোগ দেন।
লন্ডন মহানগর বিএনপির নির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার জোর করে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দী করতে চায়। সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতেই আমরা এখানে হাজির হয়েছি।’
পশ্চিম লন্ডনের কেনসিংটন এলাকার ‘কুইন্স গেট’ রাস্তায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশনার বিপরীত পাশের ফুটপাতে বিএনপি কর্মীদের বিক্ষোভের জন্য বেষ্টনী তৈরি করে দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে রাস্তা পার হয়ে বিএনপির বেশ কিছু নেতা-কর্মী হাইকমিশন ভবনে ঢুকে পড়েন।
হাইকমিশনার এক কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা শুরু থেকেই আগ্রাসী এবং বেপরোয়া ছিলেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে হাইকমিশনার কর্মকর্তা কে এম শামীম রেজা ও আজিজুর রহমানকে বাইরে নিয়োজিত করা হয়। তাঁদের উদ্দেশ করে বিক্ষোভকারীরা গালাগাল এবং নানা হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে হাইকমিশনার কর্মকর্তা শামীম রেজাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাইকমিশনার এই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য বিএনপির একজনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে ওই সময় বিএনপির ১৫ থেকে ২০ জন নেতা-কর্মী ভেতরে ঢুকে পড়েন। অভ্যর্থনাকক্ষে রাখা বঙ্গবন্ধুর একটি ছবির ফ্রেম ভেঙে ছবিটি বাইরে নিয়ে যান। বিএনপির লোকজন একটি চেয়ারও ভাঙচুর করেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
হাইকমিশনার ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বিএনপির এই বিক্ষোভ সম্পর্কে ‘ডিপ্লোম্যাটিক পুলিশ’কে আগেভাগে জানিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না। ঘটনার পর মেট্রোপলিটন পুলিশের স্থানীয় কমান্ডারকে টেলিফোন করা হয়। তিনি হাইকমিশনে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং অপরাধীদের আটকের আশ্বাস দেন।
যোগাযোগ করা হলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন। কিন্তু হাইকমিশনার কর্মকর্তারা সেখানে তাদের ছবি তুলতে যান। গুমের লিস্টে নাম দিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। হাইকমিশন তাদের স্মারকলিপি দেওয়ার অনুমতি দিচ্ছিল না। যে কারণে নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। আজ স্থানীয় সময় ভোর চারটা (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা) থেকে বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার মামলার রায় ঘোষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করবেন বলে জানান এম এ মালেক।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হাইকমিশনার সামনে যুক্তরাজ্য বিএনপির আবারও বিক্ষোভ করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি বলেন, ‘হাইকমিশনে সব আওয়ামী লীগের লোক। ওরা আমাদের স্মারকলিপি নিতে চায় না। তাই তাদের কাছে গিয়ে কোনো লাভ নেই।’
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের গণসংযোগ শাখা প্রথম আলোকে জানায়, গতকাল বাংলাদেশ হাইকমিশনার সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভে পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিক্ষোভকারীরা স্থান ত্যাগ করেন। ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন