মালেক মল্লিক: সবার দৃষ্টি এখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার নথির দিকে। এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে হাইকোর্টে শুনানি শেষ। নথি পৌঁছার পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জামিন হবে কি না জানা যাবে। কবে নাগাদ নথি উচ্চ আদালতে পৌঁছতে পারে তা জানতে সবার দৃষ্টি নিম্ন আদালতের নথির দিকেই। সরকারের উচ্চ মহল, বিরোধী দলীয় জোট এবং সর্বোচ্চ আদালত অঙ্গণ থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্রই চলছে এ নিয়ে আলোচনা। নথি পাঠাতে ১৫ দিন সময় পেয়েছেন নিম্ন আদালত। এখনো ১০ কার্য দিবস বাকি। যদিও নথি পাঠানো প্রক্রিয়া শুরু করেছেন আদালত। মামলার নথি এলেই বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশ দিবেন উচ্চ আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত রোববার এ আদেশ দেন।
এদিকে বিএনপি আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার জামিন নিতে সর্বোচ্চ আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জামিন শুনানিতে দেশের প্রখ্যাত আইনজীবীদের রাখা যায় কি না তা নিয়েও ভাবছেন বিএনপি‘র আইনজীবীরা। যদিও এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিএনপি আইনজ্ঞরা বলেছেন, আশা করি উনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাবেন। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও এ মামলায় লড়বে বলে জানিয়ে দিয়েছে। হাইকোর্ট যদি খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ও তাহলে দুদক নিশ্চয়ই আপিল বিভাগে যাবে। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপিল বিভাগ থেকেই আসবে বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, নথি পাঠানো এক দিনের কাজ। আদালত পাঠাতে কেন বিলম্ব করছেন তা তো আমার জানা নেই। তবে আমার মনে হয় সরকারের নির্দেশে এমটা করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। কারণ সবই তো প্রস্তুত আছে শুধু মাত্র লিষ্ট করে পাঠালে তো হয়। তিনি আরো বলেন, মামলাটি অনেক গুরুত্বপূণ। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের একটি বৃহৎ দলের প্রধান। স্বাভাবকিভাবেই সমগ্র দেশের মানুষ তাকিয়ে থাকবেন এ মামলার দিকে। আমরা আশা করছি তিনি আদালতে ন্যায় বিচার পাবেন।
গত ২২ ফেব্রæয়ারি খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোট বেঞ্চ। নিন্ম আদালতের দেয়া খালেদা জিয়াকে দেয়া অর্থদন্ড আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছিলেন। ৮৮০ পৃষ্ঠার জামিন আবেদনের মধ্যে ৪৮ পৃষ্ঠাজুড়ে ৩২টি যুক্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা সাবেক বয়স, অসুস্থতা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে জামিন আবেদনের আর্জি করেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন শুনানিতে আদালতে সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত থাকলেও কোন কথা বলেনি। এ নিয়ে জুনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভও বিরাজ করছে। জামিন শুনানি নিয়ে বিএনপি সমর্থক একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ম্যাডামের জামিন আবেদনের কপি আগের দিন পর্যন্ত কোনো সিনিয়রের কাছে ছিল না। কেউ একজন দায়িত্ব নিয়ে নিজে নিজে সব করেছেন। তিনি কারও সঙ্গে কোনো পরামর্শও করেননি। শুনানির বিষয়ে তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ জে মোহাম্মদ আলী সাহেব বক্তব্য শেষ করার পর ম্যাডামের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী আরও যারা রয়েছেন তাদেরও বক্তব্য দেয়া প্রয়োজন ছিল। পাশেই বসা ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক, এএফএম হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সিনিয়ররা। এ জে মোহাম্মদ আলী সাহেব বক্তব্য শেষ করার পর তিনি বক্তব্য রাখার জন্য কাউকে আহŸানও জানালেন না। তবে সমন্বয়হীনতার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। শুনানির শুরুতেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, আদালত, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা। দেশের সব মানুষ তাকিয়ে আছে আজকের জামিন শুনানির দিকে। উৎসুক আইনজীবীরাও এজন্যই ভিড় করছেন। আইনজীবীরা কেউ কোনো শব্দ করবেন না। এরপর শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ এক ঘন্টার বেশি সময় শুনানি শেষে মামলার শুনানি শেষ করে নথির পরে আদেশ বিষয় জানান সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ।
হাইকোর্টে নথি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়সহ মূল নথি পাঠাতে হাইকোর্টের আদেশ নিম্ন আদালতে পৌঁছেছে। এরপরই নথি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন আদালত। বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বেঞ্চ সহকারী ( পেশকার) মোকাররম হোসেন গত সোমবার সাংবাদিবকের বলেছেন, রোববার হাইকোর্টের নথি তলবের আদেশের কপি বিচারিক আদালতে পৌঁছেছে। মোকাররম হোসেন বলেন, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী নথি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাজগুলো শেষ হলেই নথি হাইকোর্টে পাঠানো হবে। তবে কতো দিনের মধ্যে নথি পাঠাতে পারবেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক :
কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আইনি পরামর্শ করতে সিনিয়র আইনজীবী ড.কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বেগম জিয়ার অন্তত দুই আইনজীবী। গতকাল মতিঝিল টয়োটা টাওয়ারে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে যান বিএনপি মহাসচিব। সঙ্গে ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী রেজাক খান ও আমিনুল ইসলাম ছিলেন। এ সময় গণফোরামের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও আইনজীবী সুব্রত চৌধুরীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ১ ঘণ্টা চেম্বারে অবস্থান করার পর দুপুর ১২টায় বেরিয়ে যান তারা। এ সময় তার সঙ্গে থাকা আইনজীবীরা বলেন, আমরা মামলার ব্যাপারে পরামর্শের জন্য ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গিয়ে ছিলাম। তিনি মামলার খোঁজ-খবর নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন এবং আইনগত পরামর্শ দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে ড. কামাল হোসেনকে চান কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারেও তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আইনজীবী আবদুর রেজাক খান খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনে ড. কামাল হোসেনকে আইনজীবী হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশার কথা বলেন। এর আগেও গত রোববার বৈঠক বসেন সিনিয়র আইনজীবীরা। ফের বৈঠক করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গ,গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন বিশেষ আদালত। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর থেকেই কারাগারে আছেন গত ১৯ ফেব্রুয়রি পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ২২ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। সেই সঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদন্ড। পরবর্তীতে জামিন শুনানি শেষে নিম্ন আদালত থেকে নথি আসার পর জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন উচ্চ আদালত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন