মালেক মল্লিক : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সালের কার্যনিবার্হী কমিটির নির্বাচন আজ। সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত দুইদিনব্যাপী এ ভোটগ্রহণ চলবে। ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এবারের নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪টি পদে মোট ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে নির্বাচনীয় আমেজ বিরাজ করছে। অন্যান্য বারের মতো এবারো দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছে। দুটি প্যানেল বাইরে আরও পাঁচজন আইনজীবী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও ভোটের মূল লড়াই হবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আইনজীবীদের মধ্যেই। তবে কাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত।
এবারও বিএনপি ও তাদের মিত্ররা মরিয়া তাদের অবস্থান ধরে রাখতে, হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে আপ্রাণ চেষ্টায় আওয়ামী প্রার্থীরা।
বিএনপি আইনজীবীদের মধ্যে একই ব্যাক্তি একাধিক নির্বাচনে অংশ নেওয়াই নিজেদের মধ্যে একাধিক গ্রæপ-উপগ্রæপ তৈরি হয়। যদিও পরবর্তীতে বিএনপি র্শীষ নেতাদের হস্তক্ষেপ মিটমাট হয়। সাধারণ আইনজীবীরা মনে করেন এবারের নির্বাচনে বিএনপির জন্য বিজয়ী হওয়া অনেক কঠিন হবে। কারণ তাদের নিজেদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ আইনজীবীরা ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।
সমিতির অফিস সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৮-১৯ সালের নির্বাচনের ১৪টি পদের বিপরীতে ৩৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। এবারের মোট ভোটার ৬ হাজার ১৫২জন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে ২ জন এবং সম্পাদক পদে ১ জন অংশ গ্রহণ করছেন বলে জানিয়েছেন বারের তত্ত¡াবধায়ক নিমেষ চন্দ্র দাস। এ ওয়াই মশিহুজ্জামানকে আহŸায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন কমিশনার এ ওয়াই মশিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, গত ১ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহ ও দাখিল এবং ১৪ মার্চ মনোনয়ন প্রত্যাহারের তারিখ ছিল। ২১ ও ২২ মার্চ দুই দিন ভোটগ্রহণ হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৬ হাজার ১৫২ জন। কার্যনির্বাহী কমিটির মোট ১৪টি পদে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে উভয় পক্ষের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রচারণা জমজমাটভাবে চালান। প্রতিটি প্যানেলের পক্ষে নিজ নিজ সমর্থকরা ভোট চাচ্ছেন। প্যানেল পরিচিতি ও সভাপতি এবং সম্পাদকের ব্যক্তিগত পরিচিতি, সমিতির অতীতের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অবদান ও নির্বাচনে জয়ী হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রæতির লিফলেট বিতারণ করেন প্রতিটি প্যানেলের সমর্থকরা। তফসির ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা প্রথমে তাদের প্যানেল ঘোষণা করেন। এরপর বিএনপি আইনজীবীরা প্যানেল দিতে গিয়ে নানা মতানৈক্য জড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন আইনজীবী নিজেরদেরকে মূল জাতীয়তাবাদী দাবি বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারকে সভাপতি প্রার্থী করে প্যানেল ঘোষণা করা হয়। বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত এই প্যানেল নির্বাচন থেকে সরে এসেছে। তিনি প্যানেল প্রত্যাহার করে নিলেও বিএনপির আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ শাহ মোঃ খসরুজ্জামান সভাপতি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
আওয়ামীলীগ (সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ) সাদা প্যানেল বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহŸায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বারের) সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে সভাপতি পদে এবং শেখ মোহাম্মদ মোরশেদকে সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া বাকি পদগুলোর মনোনীতরা হলেন- সহ সভাপতি আলালউদ্দীন ও ড. মোহাম্মদ শামসুর রহমান, ট্রেজারার ড. মোহাম্মদ ইকবাল করিম, সহসম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক ও ইয়াদিয়া জামান, সদস্য ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী, হুমায়ুন কবির, চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, শাহানা পারভীন, রুহুল আমিন তুহিন, শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া, মোহাম্মদ মুজিবর রহমান সম্রাট।
বিএনপি (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম) সমর্থিত প্যানেলে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে সম্পাদক প্রার্থী করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল ঘোষণা করা হয়। এই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরা হলেন, সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার ভুইয়া, এমডি গোলাম মোস্তফা, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সহ-সম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন, আনজুমানারা বেগম মুন্নী, সদস্য ব্যারিস্টার সাইফুর আলম মাহমুদ, জাহাঙ্গীর জমাদ্দার, এমদাদুল হক, মাহফুজ বিন ইউসুফ, সৈয়দা শাহীনারা লাইলী, নাসরিন খন্দকার শিল্পী। ওই দুই প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুছ আলী আকন্দ। আর সম্পাদক পদে আছেন আলহাজ মোহাম্মদ আবুল বাশার , সহ সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভুইয়া।
আওয়ামীলীগ (সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ) সমর্থিত প্যানেলে সভাপতি পদে প্রার্থীর পরিচিতি ঃ মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি বর্তমানে এ দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নিজস্ব আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বরিশাল অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে অন্যতম সংগঠকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। বরিশাল আইনজীবী সমিতির পাঁচ বার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ইউসুফ হোসেন হম্য়াুন ইনকিলাবকে বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই আমি শিক্ষার ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সম্পপৃক্ত হই। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে সভপতি পদে ভোট ও সমর্থন পেলে সমিতিকে আরো অর্থবহ ও কার্যকর পেশাজীবী সংগঠনে পরিনত করতে সচেষ্ট থাকবো।
বিএনপি (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম) সমর্থিত প্যানেলে সভাপতি পদে প্রার্থীর পরিচিতি: বিএনপি ভাইস চেয়্যারমান হিসেবে আছেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এছাড়াও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিমকোর্ট শাখার সভাপতি। তিনি ১৯৯১ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারের সহ সম্পাদক এবং ২০১২-১৩ সালে সভাপতি হন। তার জন্মস্থান বরিশাল। জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে আইনজীবীরা আমাদের পূর্ণ প্যানেলকে বিজয়ী করবেন বলে প্রত্যাশা করছি। বার ও বেঞ্চের মধ্যে সু-সমন্বয়, আইনজীবীদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিচার বিভাগের সুমহান মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। নাম না প্রকাশ করার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবীরা জানায়, পূর্বের চেয়ে এবারের নির্বাচনে কোন প্যানেল জিতবে তা বলা যাবে না। মনে হয়, সভাপতি পদে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও জয়নুল আবেদীন এই দুজনের মধ্যে কেউ কম নয়। এদের মধ্যে হাড্ডাহা্িড্ড লড়াই চলবে। সম্পাদক আওয়ামী সমর্থিতরা নতুন একজন মনোনয়ন দিলে বিএনপি আগের কমিটির সম্পাদক পদে মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দিয়েছেন। যেহেতু কয়েকবার খোকন সম্পাদক ছিলেন তাই অন্য কাউকে সুযোগ দিলে ভাল হতো। এ নিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মতবিরোধ রয়েছে। যা ফলে বিদ্রোহ গ্রæপের সৃষ্টি। এবারের নির্বাচনে অন্যান্য পদে প্রার্থীদের আলোচনা-সমালোচনার বেশি প্রভাব নেই। সভাপতি ও সম্পাদক পদের প্রার্থীদের নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর সভাপতি সম্পাদকসহ আটটি পদে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। অন্যদিকে সহসভাপতি, সহসম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ মোট ছয়টি পদে জয়ী হন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা। এর আগের বছরে নির্বাচনে সমিতির ১৪ পদের মধ্যে সভাপতিসহ আটটিতে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। আর সম্পাদকসহ ছয়টি পদে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন