নিয়ে সন্ধ্যার আভাস। নিস্তব্ধ লালচে সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবি ডুবি ভাব। আস্তে আস্তে অন্ধকার হতে চলেছে স্বপ্নীল বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় ক্যাম্পাস! চারদিকে নীরবতার ছাপ, কিন্তু ভরাট উদ্যমতায় রয়েছে বায়োকেমিস্ট্রির শিক্ষার্থীরা! আজই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের শেষ ট্যুর। অনুভূতিটাও অন্যরকম। বন্ধুরা সবাই একসাথে যাবো, গাইবো, মজা করব আর কত কি! হৃদয়ের মণিকোঠায় যেন ভরা যৌবনের রোমান্টিক বাতাস বইছে।
পটাপট বান্দরবানগামী শ্যামলী পরিবহন বাসে বসে পড়লাম। রাত তখন সম্ভবত ১০টা ৩০ মিনিট। ড্রাইবার মশাই গাড়ি স্টাট দিয়েই লাইটগুলোর সুইচ অফ করে দিলেন। আর যায় কই? অন্ধকার পেয়ে সবাই মনের মাধুরি মিশিয়ে হই-হুল্লোড় শুরু করে দিল। ভোরের আলোর ফোটার সাথে সাথেই বাস চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করল। কিন্তু সবার মাথায় হাত। চারদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। হালকা নাস্তা সেরে দেখলাম ভাগ্য আমাদের নিরাশ করেনি। আকাশের বুক চিরে জলমল রৌদ উঠেছে। নয়নে মুচকি হাসি! হোটেল থেকে বেড়িয়েই ঝটপট চড়লাম নীলগিরিগামী ‘চান্দের গাড়িতে’। রাস্তার দু’ধারে দুর্গম পাহাড়, পিচ ঢালা রাস্তা আর পাহাড়ি নৈসর্গিক বৈচিত্র্যকে পাশ কাটিয়ে পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের নীলগিরিতে। বান্দরবান শহর থেকে অদূরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বেলাভূমি এই নীলগিরি। অতৃপ্ত বাসনা নিয়েই চললাম আরেক পাহাড়ি কন্যা নীলাচলের রূপদর্শনে। যেখান থেকে পুরো বান্দরবান শহর এক পলকে দেখে নিলাম। তারপর একে একে চিম্বুক পাহাড় ও স্বর্ণমন্দিরে ঘোরাঘুরি শেষে রাত্রে হোটেলে ফিরলাম।
পরদিন খুব ভোরে রওয়ানা হয়ে রাত্রে পৌঁছলাম কক্সবাজারে। বিশ্বখ্যাত সমুদ্র সৈকতে আসলাম অথচ গোসল করা হবে না, তা কি হয়? যারা সাঁতার পারে না তারাও নেমে পড়ল উত্তাল সমুদ্রের বুকে। ওদিকে গোধূলি লগ্নে বহুমাত্রিক রূপের অধিকারী সি বীচের আবহাওয়া রীতিমতো অবাক করার মতো। লাবনি পয়েন্টে গাঁ ধুলিয়ে শুয়ে থাকা, ওহ! ভাষায় বুঝানো যাবে না। আর সমুদ্রের তীরে ঝিনুকের তৈরি বাহারি শিল্পের দৃষ্টিনন্দন দোকানপাট। লাগেজে জায়গা সঙ্কট কিন্তু কিনতে আরও মন চায়!
রাতটা কোনো রকমে পার করে সকালে আবার ছুটলাম জলরাশি ঘেরা হিমছড়ির দিকে। মনোমুগ্ধকর ঝর্ণাই যেন এটাকে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও জীবন্ত করে তুলেছে। তারপর সাগর কন্যা ইনানি বীচে যাত্রাবিলাস। চোখে পড়ল লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি আর ডাবের পসরা। মুরশেদ স্যারের কাছে বায়না দিয়ে বসলাম। পেট চুক্তিতে ডাব খাওয়াতে হবে! সুযোগ তো বার বার আসে না। চলল ডাব খাওয়ার হিড়িক। রাতে গ্র্যান্ড ডিনার শেষে সকালে ‘কেয়ারি সিনবাদে’ চড়ে চলে গেলাম গাঙ চিলের আবাসভূমি প্রবাল দ্বীপ সেনমার্টিনে। সাইকেল প্রতিযোগিতা আর পানিতে ফুটবল খেলে ভালোই কাটল সেনমার্টিন যাত্রা। রাত্রে সামদ্রিক মাছ দিয়ে ফাটাফাটি বারবিকিউ। এসব করতে করতে কখন যে বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠল টেরই পাইনি। রাতের অন্ধকার পেরিয়ে গাড়ি চলছে আর ভাবছি, শুধুই ভাবছি। স্বপ্নের সাগরে হারিয়ে যাচ্ছি। আফসোস! যদি সারাটা জীবন সমুদ্রের তীরে কাটিয়ে দিতে পারতাম। নাহ! আর হলো না, বাস থামল ক্যাম্পাসের গেইটে। শেষ হলো ভ্রমণ মিশন।
ষ শরীফুল ইসলাম শরীফ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন